AI will provide jobs, new AI-powered platform is coming!: বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-কে ঘিরে এখন এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। একদিকে এই প্রযুক্তি মানুষের কাজ সহজ করছে, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়াচ্ছে, আবার অন্যদিকে হাজার হাজার চাকরিজীবী তাদের কর্মস্থল হারাচ্ছেন এআই-এর কারণে। গুগল, মাইক্রোসফট, ফেসবুকের মতো বহুজাতিক সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাই করেছে। ফলে সাধারণ মানুষ থেকে বিশেষজ্ঞ সবাই প্রশ্ন তুলছেন—এই প্রযুক্তি কি আদৌ আশীর্বাদ, নাকি অভিশাপ?তবে এই বিতর্কের মাঝেই আশার আলো দেখাচ্ছে ওপেনএআই। যেই সংস্থা চ্যাটজিপিটি তৈরি করেছে, তারাই এবার ঘোষণা করেছে এমন এক প্ল্যাটফর্মের, যা এআই ব্যবহার করেই মানুষকে চাকরি খুঁজে দেবে। এভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নতুনভাবে জনমুখী করার উদ্যোগ নিয়েছে ওপেনএআই।
ওপেনএআই জানিয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যে তারা বাজারে আনতে চলেছে একটি সম্পূর্ণ নতুন চাকরি সন্ধান প্ল্যাটফর্ম। এটি পুরোপুরি এআই-চালিত হবে এবং সরাসরি লিঙ্কডিনের মতো বড় প্ল্যাটফর্মকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। নতুন এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চাকরি প্রার্থীরা সঠিক সুযোগ খুঁজে পাবেন, আর নিয়োগকর্তারা খুব সহজে যোগ্য প্রার্থী বেছে নিতে পারবেন।প্রকৃতপক্ষে, এই প্ল্যাটফর্মটি শুধু বহুজাতিক সংস্থা বা কর্পোরেটদের জন্য নয়। ওপেনএআই-এর দাবি, ছোট ব্যবসা, স্টার্টআপ এবং এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিও এর সুবিধা নিতে পারবে।

ওপেনএআই-এর সিইও ফিজি সিমো স্পষ্টভাবে বলেছেন, এআই মানেই যে কেবল চাকরি হারানোর আতঙ্ক, সেই ধারণা পাল্টে যাবে এই উদ্যোগে। বরং এআই হবে চাকরি সৃষ্টির নতুন হাতিয়ার।এছাড়াও সংস্থাটি আরও কিছু প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। যেমন একটি নতুন ওয়েব ব্রাউজার এবং একটি সোশাল নেটওয়ার্ক অ্যাপ, যা ভবিষ্যতের ডিজিটাল দুনিয়ায় আলাদা মাত্রা যোগ করতে পারে।যদিও এই মুহূর্তে কোনো দেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়নি, তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মহলে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এআই নির্ভর এই প্ল্যাটফর্ম সফল হয়, তাহলে চাকরি খোঁজার পুরো প্রক্রিয়া একেবারে বদলে যেতে পারে। সরকারগুলিও এই ধরনের প্ল্যাটফর্মকে স্বাগত জানাতে পারে, বিশেষ করে যেখানে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা।কলকাতার এক তরুণ চাকরিপ্রার্থী বলেন, “এখন চাকরি খুঁজতে গিয়ে প্রায়ই হতাশ হতে হয়। অনেক সময় সঠিক জায়গায় সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। যদি এআই সত্যিই এই সমস্যা মেটাতে পারে, তবে আমাদের মতো যুবসমাজের জন্য সেটা বিশাল সুবিধা হবে।”একইসঙ্গে একজন ছোট ব্যবসায়ী জানান, “আমরা অনেক সময় যোগ্য কর্মী খুঁজে পাই না। যদি এআই আমাদের হয়ে এই বাছাই করে দেয়, তাহলে আমাদের সময়ও বাঁচবে, খরচও কমবে।”
বর্তমানে বিশ্বে এআই-কে ঘিরে প্রধান অভিযোগ হলো, এটি কাজ কেড়ে নিচ্ছে। ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই কয়েক লক্ষ কর্মী ছাঁটাই হয়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ওপেনএআই-এর পদক্ষেপ সত্যিই ভিন্নধর্মী।যদি এই এআই-চালিত চাকরি প্ল্যাটফর্ম সফল হয়, তবে এটি শুধু লিঙ্কডিনকেই নয়, বরং পুরো কর্মসংস্থানের বাজারকে নতুনভাবে সাজাতে পারে। নিয়োগের সময় যেসব পক্ষপাতিত্ব বা সময় নষ্ট হওয়ার সমস্যা থাকে, সেগুলি কমে আসবে। এআই ব্যবহার করে প্রার্থীর যোগ্যতা, দক্ষতা এবং প্রতিষ্ঠানের চাহিদা দ্রুত মিলিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।তবে এর পাশাপাশি প্রশ্নও উঠছে—এআই কতটা নিরপেক্ষভাবে প্রার্থী নির্বাচন করবে? ডেটা গোপনীয়তার বিষয়টিও বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্ল্যাটফর্ম চালুর আগে এই বিষয়গুলি স্পষ্টভাবে সমাধান করা জরুরি।
ওপেনএআই-এর এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে প্রযুক্তির জগতে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। তবে এটি কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করছে ব্যবহারকারীদের আস্থা ও অভিজ্ঞতার ওপর। একদিকে যেমন এটি লাখো চাকরিপ্রার্থীকে নতুন দিশা দেখাতে পারে, অন্যদিকে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতাও আরও বাড়তে পারে।বিশ্বজুড়ে যে বেকারত্ব সমস্যা দিন দিন তীব্র হচ্ছে, সেখানে এআই যদি নতুন চাকরি তৈরির পথ দেখায়, তবে এটি প্রযুক্তির ইতিহাসে এক মাইলফলক হয়ে থাকবে।কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে যখন সন্দেহ, ভয় আর বিতর্ক চলছে, তখন ওপেনএআই-এর এই ঘোষণা এক অন্য রকম বার্তা দিল। এআই শুধু মানুষের চাকরি কাড়ে না, বরং মানুষের জন্য নতুন সুযোগও তৈরি করতে পারে—এই বার্তাই পৌঁছে দিতে চাইছে সংস্থাটি। আগামী দিনে এই প্ল্যাটফর্ম কতটা কার্যকর হয়, সেটাই দেখার বিষয়।