Thursday, April 24, 2025
Google search engine
HomeUncategorisedবয়স ১৮ এর আগে ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্ট খুললে ধরিয়ে দেবে AI

বয়স ১৮ এর আগে ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্ট খুললে ধরিয়ে দেবে AI

AI to catch people opening doors in Old Village before 18 : আজকের দিনে মোবাইল ফোন যেন প্রত্যেকটা মানুষের একান্ত সঙ্গী হয়ে উঠেছে, আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। এখনকার দিনে দেখা যায়, ক্লাস ফোরে পড়া একটা বাচ্চাও নিজের হাতে মোবাইল চালাতে শিখে যায়, ইউটিউব, গেমস, আর ধীরে ধীরে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আগ্রহ বেড়েই চলে। অথচ, ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকের মতো অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে অন্তত ১৮ বছর বয়স হতে হয় – এমনই নিয়ম। কিন্তু অনেকেই তো আর সেই নিয়ম মানে না! জন্ম তারিখ একটু বদলে দিয়ে খুব সহজেই অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলছে হাজার হাজার অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ে। এই প্রবণতা রুখতেই এবার নড়ে বসেছে ইনস্টাগ্রাম, আর তাদের হাতিয়ার? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা – অর্থাৎ AI!

ঘটনাটা একদম গল্পের মতোই – ধরুন, ১৪ বছরের একটা মেয়ে নিজের বয়স ২০ বছর দেখিয়ে ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্ট খুলেছে। সে হয়তো বন্ধুদের সঙ্গে মজার ছবি শেয়ার করছে, রিল বানাচ্ছে, অথচ এই সব কিছুর মধ্যেই তার মনোজগতে কী প্রভাব পড়ছে তা কিন্তু আমাদের অজানাই থেকে যাচ্ছে। আজকের ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুক শুধু ছবি বা ভিডিও দেখার জায়গা নয়, সেগুলি এখন হয়ে উঠেছে ‘ইনফ্লুয়েন্সার কালচার’-এর আঁতুড়ঘর। সেখানে কে কীভাবে সাজলো, কে কতটা ‘পারফেক্ট’, কে কী খেলো, কোথায় ঘুরলো – এসবের মধ্যে পড়ে একটা অল্পবয়সী ছেলেমেয়ের মানসিক স্বাস্থ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। আর সেই কারণেই এতদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলি বলে আসছিল, “১৮ বছর না হলে অ্যাকাউন্ট খুলো না।” কিন্তু যেহেতু মানুষ নিজে নিজের তথ্য দিতে পারে, তাই অনেকেই সেটা বদলে ফেলত।

এই সমস্যা সমাধানে কয়েক মাস আগে ইনস্টাগ্রাম একটি নতুন পদ্ধতি চালু করেছিল, যেখানে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় প্রমাণ হিসেবে দিতে হত বয়সের সঠিক নথি – যেমন আধার কার্ড, বা অন্য কোন সরকারী পরিচয়পত্র। এমনকি যারা ১৬ বছরের নিচে তাদের ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ চলে যেত অভিভাবকদের হাতে। কিন্তু এসব তো নতুন অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাহলে যারা আগে থেকেই ভুয়ো জন্মতারিখ দিয়ে ইনস্টাগ্রামে ঢুকে গেছে, তাদের কী হবে?

সেই উত্তরই এবার দিল ইনস্টাগ্রাম – এআই (AI) অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এমন অ্যাকাউন্টগুলিকে চিহ্নিত করা হবে যারা ভুল তথ্য দিয়ে খুলেছে। জানা যাচ্ছে, ইনস্টাগ্রাম এখন ব্যবহারকারীর ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন, কনটেন্টের ধরন, মন্তব্যের ভঙ্গি এমনকি ব্যবহার করা শব্দ বা বাক্য গঠন বিশ্লেষণ করে বুঝে নেবে ওই অ্যাকাউন্টধারী আদতে কিশোর নাকি প্রাপ্তবয়স্ক। যেইমাত্র কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ককে শনাক্ত করবে AI, সঙ্গে সঙ্গে তার অ্যাকাউন্ট হয়ে যাবে ‘টিন অ্যাকাউন্ট’, যেখানে বেশ কিছু নিয়ম মানতেই হবে। যেমন – সে আর খোলা খোলা ভাবে সবকিছু দেখতে পারবে না, তার অ্যাকাউন্টের কিছু নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে অভিভাবকের হাতে, আর তার প্রাইভেসি সেটিংস হয়ে যাবে আরও কঠোর।

এই প্রসঙ্গে ইনস্টাগ্রামের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমাদের লক্ষ্য হল অপ্রাপ্তবয়স্কদের সুরক্ষা। AI আমাদের সেই পথে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যাবে। শুধু নথি নয়, এখন আমরা ব্যবহারকারীর আচরণ বিশ্লেষণ করেই বুঝে যাব কে প্রকৃতপক্ষে প্রাপ্তবয়স্ক আর কে নয়।”

এই পদক্ষেপে স্বভাবতই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সমাজে। অনেক অভিভাবক যেমন এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন, তেমনি অনেক কিশোর-কিশোরী বা তাদের পরিবার বলছে – এটা ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। কলকাতার এক মা, শ্রীমতি রূপা সেন, যিনি নিজে একজন স্কুল শিক্ষিকা, তিনি বললেন, “আমার ১৩ বছরের মেয়েরও ইচ্ছে হয় ইনস্টাগ্রামে আসতে। কিন্তু আমি বরাবরই বলেছি, এখনও সময় আসেনি। এই AI প্রযুক্তি যদি সত্যিই এমনভাবে কাজ করে, তাহলে আমরা অনেকটাই নিশ্চিন্ত হতে পারব।”

New Project 20240709T135947890 2024 07 af390b309fb18ab1ccdf8204d2226e91

আবার অন্যদিকে সল্টলেকের কলেজ পড়ুয়া তৃষা মুখার্জী বলছে, “আমি ১৭ বছর বয়সে ইনস্টাগ্রাম খুলেছিলাম, এখন আমি ১৯। কিন্তু তখন যদি AI আমার প্রোফাইল আটকে দিত, তাহলে হয়তো আমি অনেক কিছু মিস করতাম – আমার ছোট ছোট বিজনেস শুরু হয়েছিল সেখান থেকেই।”

এই ঘটনার ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষক সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, “AI এখন শুধু নজরদারি নয়, সিদ্ধান্ত নেওয়ারও হাতিয়ার হয়ে উঠছে। এটা একদিকে যেমন নিরাপত্তা দিচ্ছে, অন্যদিকে আবার প্রশ্ন তুলছে আমাদের ডিজিটাল স্বাধীনতা নিয়েও। তবে শিশুদের মানসিক বিকাশের দিকটা মাথায় রেখে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর কিছু নিয়ম-কানুন থাকা জরুরি।”

এই নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগে ভারতের মতো দেশে কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে এখনো অনেকটাই প্রশ্ন রয়ে গেছে। কারণ ভারতের বেশিরভাগ মানুষ এখনো ডিজিটাল শিক্ষা বা সচেতনতায় অনেকটা পিছিয়ে। অনেক জায়গায় বাবা-মা নিজেরাই জানেন না কীভাবে মোবাইলের নিরাপত্তা ফিচার ব্যবহার করতে হয়। ফলে এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকেও বড়সড় সচেতনতা অভিযান দরকার।

সেইসঙ্গে স্কুলস্তরেও ডিজিটাল নাগরিকত্ব নিয়ে পাঠ শুরু করা উচিত, যাতে অল্প বয়সেই ছেলেমেয়েরা জানতে পারে অনলাইন জগৎ কতটা নিরাপদ আর কোথায় তাদের সীমা।

অবশেষে বলতেই হয়, ইনস্টাগ্রামের AI যদি সঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে এটা অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এক বড় সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে পারে। তবে এর ব্যবহার যেন দায়িত্বশীল হয় – সেটা সংস্থারও যেমন দায়িত্ব, তেমনি আমাদের সমাজেরও।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments