AI and drone training begins at NCC:উধমপুরের আকাশে তখনো সকালের কুয়াশা কাটেনি, কিন্তু জেনারেল জোরাবর সিং এনসিসি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যেন রীতিমতো ঝলমল করে উঠেছিল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই। কারণ, আজকের দিনটা শুধুমাত্র ক্যাডেটদের রুটিন ড্রিল বা অস্ত্রচালনা শেখার দিন ছিল না—আজকের দিন ছিল ভবিষ্যতের দরজা খুলে দেওয়ার। এনসিসি-র অতিরিক্ত মহা-পরিচালক মেজর জেনারেল অনুপিন্দর বেওয়ালি এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে এক ঐতিহাসিক ঘোষণা করেন—এনসিসি-তে এবার থেকে শুরু হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), সাইবার নিরাপত্তা ও ড্রোন পরিচালনার আধুনিক প্রশিক্ষণ। প্রায় ৩,০০০ ক্যাডেট বর্তমানে এখানে কঠোর সামরিক অনুশীলনের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছে এই আধুনিক কোর্সে, যা শুধুমাত্র একটি প্রশিক্ষণ নয়, বরং একটি ভবিষ্যতের প্রতি ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি। এই সিদ্ধান্তের ফলে জম্মু, কাশ্মীর এবং লেহ-লাদাখ অঞ্চল জুড়ে আগামী এক বছরে প্রায় ১২,০০০ এনসিসি ক্যাডেট উপকৃত হবে, যারা নিজেদের মধ্যে শৃঙ্খলা, নেতৃত্ব ও দেশসেবার মানসিকতা গড়ে তোলার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সাহস ও দক্ষতা অর্জন করবে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মেজর জেনারেল বেওয়ালি বলেন, “আমরা চাই আমাদের ক্যাডেটরা শুধু মাটির যোদ্ধা না হয়ে, মাইক্রোচিপ ও কনসোলেরও যোদ্ধা হয়ে উঠুক। আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্র ও জাতীয় নিরাপত্তা এখন আর শুধু সীমান্তে সীমাবদ্ধ নয়, সাইবার স্পেসে ও তথ্যপ্রযুক্তিতে লড়াইয়ের ময়দান তৈরি হচ্ছে, আর সেই লড়াইয়ে জিততে হলে আমাদের ছেলেমেয়েদের সেইভাবেই প্রস্তুত করতে হবে।” তিনি আরও জানান, IIT জম্মু এবং জম্মু ও কাশ্মীরের সাইবার পুলিশের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যৌথভাবে এই কোর্স গঠিত হয়েছে, যেখানে ক্যাডেটরা হাতেকলমে শিখবে কীভাবে AI ব্যবহার করে তথ্য বিশ্লেষণ করা যায়, কেমন করে ড্রোন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, এবং কীভাবে সাইবার নিরাপত্তার ফাঁকফোকর গুলো বন্ধ করা যায়। এই উদ্যোগ শুধু ক্যাডেটদের জন্য নয়, বরং গোটা দেশের জন্য এক বড় পদক্ষেপ, কারণ এই প্রশিক্ষণ পরবর্তীতে দেশের প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিখাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করবে।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাডেটদের একাংশ জানায়, “আমরা আগে শুধু সামরিক বিষয়গুলিই শিখতাম, এখন প্রযুক্তির দুনিয়ায় প্রবেশ করতে পেরে মনে হচ্ছে সত্যিই আমরা ভবিষ্যতের সৈনিক।” জম্মুর এক মহিলা ক্যাডেট রুবিনা খাতুন বলেন, “ড্রোন ও সাইবার নিরাপত্তার মতো বিষয় আমরা আগে কল্পনাও করিনি, কিন্তু এখন আমরা সেগুলো ব্যবহার করে দেশের জন্য কিছু করতে পারছি, এটা গর্বের।” এনসিসি-র আধুনিকীকরণ নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও বেশ আশাবাদী। তাদের মতে, এই ধরনের প্রশিক্ষণ দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ভবিষ্যতে প্রযুক্তিবান্ধব ও স্মার্ট অফিসার তৈরি করবে। এই উদ্যোগে শুধু শিক্ষার পরিধি বাড়ল না, বরং ক্যাডেটদের চাকরি বা উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার পথও খুলে গেল। কারণ, এই প্রশিক্ষণ তাদের জন্য নতুন দিশা তৈরি করবে ড্রোন টেকনোলজি, এআই ডেটা অ্যানালিটিক্স, সাইবার নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা-স্টার্টআপে। এই কোর্সগুলো ভবিষ্যতে তাদের চাকরির বাজারে একধাপ এগিয়ে রাখবে।
এনসিসি-র এই ইনিশিয়েটিভ ভারতের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’ অভিযানের সঙ্গেও তাল মেলাচ্ছে, যেখানে প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও দেশসেবার মিলন ঘটানো হচ্ছে বাস্তব মাটিতে। ইতিমধ্যে জানা গিয়েছে, আগামী দিনে এই প্রশিক্ষণ পদ্ধতি আরও রাজ্যে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, কেরল এবং উত্তরপ্রদেশের বড় শহরগুলিতে AI ও ড্রোন বেসড ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। একাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এই পদক্ষেপ ভারতের প্রতিরক্ষা ও শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে এবং যুব সমাজকে শুধুমাত্র শিক্ষিত নয়, প্রযুক্তির দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও শক্তিশালী করে তুলবে। অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার অরুণ দত্ত বলেন, “যেখানে গোটা বিশ্ব এখন ড্রোন ও AI নির্ভর যুদ্ধে নেমেছে, সেখানে আমাদের এনসিসি ক্যাডেটদের এইভাবে প্রস্তুত করা নিঃসন্দেহে ভারতকে ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ ও আত্মবিশ্বাসী করবে।” সব মিলিয়ে এনসিসি-র এই নতুন অধ্যায় যেন এক নতুন সূর্যোদয়ের শুরু, যেখানে ক্যাডেটরা শুধু প্যারেড গ্রাউন্ডেই নয়, প্রযুক্তির মহাকাশেও নিজেদের গড়ছে। আর সেই ভবিষ্যতের নাম – ডিজিটাল সৈনিক।