After Salman-Shahrukh, Mithun received a threat! : বলিউডের তারকাদের নিয়ে যখন আমাদের ভাবনা থাকে স্রেফ বিনোদন জগতের আনন্দময় দিক, তখনই সামনে আসে এমন কিছু খবর যা আমাদেরকে অবাক করে দেয় এবং সমাজে এক গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো যেন এ কথা প্রমাণ করে যে, শুধুমাত্র স্টারডম নয়, বলিউড তারকাদের জীবনেও নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কয়েক মাস আগেই যখন সলমন খানকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হলো, তখন দেশজুড়ে তা ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এর পরেই বলিউডের আরেক সুপারস্টার শাহরুখ খানকে হুমকি দেওয়া হয়, যা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। অভিযোগ, এই হুমকিগুলোর পেছনে রয়েছে কুখ্যাত অপরাধী লরেন্স বিশ্নোই এবং তার অপরাধী গ্যাং। কিন্তু, এই ঘটনাপ্রবাহে এবার নতুন সংযোজন মিঠুন চক্রবর্তীকে সরাসরি প্রাণনাশের হুমকি।
সম্প্রতি মিঠুন চক্রবর্তীকে পাকিস্তানের এক গ্যাংস্টার, শাহাজ়াদা ভাট্টির তরফে ভিডিয়োবার্তায় সরাসরি হুমকি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মিঠুনের সাম্প্রতিক মন্তব্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে এবং সেই মন্তব্যের জন্য তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্ষমা না চাইলে মিঠুনের প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এই হুমকি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর বলিউড থেকে রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষ, সবাই এক অদৃশ্য আতঙ্কে আছে। অভিনেতার প্রতি এ ধরণের হুমকি যে কেবল বলিউডের একটি সমস্যা নয়, তা বর্তমান পরিস্থিতি স্পষ্ট করছে। এটা সরাসরি আমাদের সমাজের সহাবস্থানের উপর একটা বড়সড় প্রভাব ফেলছে।
সলমন ও শাহরুখের ক্ষেত্রেও হুমকির ঘটনা নতুন নয়। এই অভিনেতারা বলিউডের এমন স্তম্ভ যা ভারতের বাইরে প্রবাসী ভারতীয় সমাজেও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে আসছেন। সলমন খান এবং শাহরুখ খানকে একই ধরনের হুমকি দিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়েছিল। সলমন খান একাধিকবার কুখ্যাত গ্যাংস্টারদের থেকে হুমকি পেয়েছেন, যার মধ্যে সাম্প্রতিক হুমকির ঘটনাও খুব বেশি পুরোনো নয়। এদিকে শাহরুখ খানকেও কিছুদিন আগেই প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। সমাজের সর্বস্তরে তাদের প্রতি যে ভালোবাসা এবং সম্মান, তা এই ধরনের হুমকির পর আরও বেশি দৃঢ় হয়েছে। এদিকে, মিঠুন চক্রবর্তীর মতো একজন প্রবীণ অভিনেতা, যিনি তার অভিনয়ের জাদু দিয়ে কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন, তারও এই ধরনের হুমকি প্রাপ্তির ঘটনায় সাধারণ মানুষের উদ্বেগ নতুন মাত্রা পেয়েছে।
মিঠুন চক্রবর্তী শুধু একজন বলিউড অভিনেতা নন; তিনি বাংলা চলচ্চিত্র জগতেরও এক উজ্জ্বল তারকা এবং একজন সমাজসচেতন ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। ১৯৬৮ সাল থেকে রূপালি পর্দায় নিজের দাপট দেখিয়ে চলেছেন মিঠুন, তার শক্তিশালী সংলাপ এবং অভিনয়ের মাধ্যমে। শুধু অভিনয়ে নয়, রাজনীতিতেও তিনি বেশ সক্রিয়। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির হয়ে প্রচারেও অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। গত ২৭ অক্টোবর কলকাতার সল্টলেকের ইজেডসিসিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর উপস্থিতিতে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানে তার মন্তব্য বিশেষভাবে নজরে আসে। তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের বক্তব্যকে ঘিরে মিঠুন মন্তব্য করেন, ‘‘৭০ শতাংশ মুসলিম, ৩০ শতাংশ হিন্দু এই বিভাজনের কথা শুনে আমি ভাবলাম, এমন কথা না বলাই ভালো।’’ এই ধরনের বক্তব্য কিছু মানুষের কাছে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যার ফলে মিঠুনের বিরুদ্ধে একাধিক থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তবে মিঠুনের পক্ষ থেকে তার বক্তব্যের কোনো আপস বা সংশোধন এখনও আসেনি, বরং তিনি এই বিষয়ে আরো সাহসীভাবে এগিয়ে আসতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।
এই ধরনের ঘটনা শুধু বিনোদন দুনিয়ায় নয়, আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় সামঞ্জস্যেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তারকাদের প্রতি এ ধরণের হুমকি সমাজে ভয়ের বাতাবরণ সৃষ্টি করছে এবং এর প্রতিক্রিয়া আমাদের সংস্কৃতির এক বড় প্রশ্ন তুলে ধরে। সাধারণ মানুষ একদিকে তারকাদের প্রতি তাদের ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা জানাচ্ছে, অন্যদিকে ধর্মীয় সংবেদনশীলতার প্রশ্নে কেউ কেউ বিতর্ককে উসকে দিচ্ছে। একাধিক এফআইআরের পরও, মিঠুন তার অবস্থানে স্থির থাকায় সাধারণ মানুষ ও অনুরাগীরা তার সাহসিকতার প্রশংসা করছেন, তবে এই হুমকির কারণে তার নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগও রয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত এই হুমকির ঘটনার সূত্রপাত আমাদের দেশের তারকাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবনার অবকাশ দিচ্ছে। প্রশ্ন ওঠে, এসব হুমকির বিরুদ্ধে কতটা সচেতনতার ব্যবস্থা আছে? আমরা কি পারবো এই তারকাদের নিরাপত্তা দিতে, যারা আমাদের জন্য বিনোদন দুনিয়ায় নিজেদের পুরো জীবন উৎসর্গ করছেন? তাদের নিরাপত্তার সুরক্ষা দেশের দায়িত্বশীলদের ভাবনার বিষয় হওয়া উচিত। এছাড়াও, রাজনীতি এবং ধর্মের অতি সংবেদনশীল বক্তব্যকে ঘিরে অভিনেতা মিঠুনের উপর যে অভিযোগ ওঠেছে, তা নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
মিঠুন চক্রবর্তীর মতো অভিনেতা, যিনি কেবল বলিউডেই নয়, সর্বভারতীয় দর্শকদের জন্যও জনপ্রিয়, তার উপর এ ধরণের হুমকি প্রদানের ঘটনা সারা দেশে ক্ষোভ ও আতঙ্কের জন্ম দিচ্ছে। এদিকে বলিউড তারকাদের মধ্যে সলমন খান, শাহরুখ খান এবং মিঠুন চক্রবর্তীর মতো তারকাদের প্রতি হুমকির ঘটনায় সবাই একটি প্রশ্ন তুলছে – বলিউড কি আর বিনোদনের সীমায় থাকতে পারছে, নাকি এই প্রভাবশালী তারকাদের জন্য জীবন ও নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ আরো জটিল হয়ে উঠছে? আমাদের সমাজ কি এই তারকাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম, নাকি ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক বিতর্ক এই চ্যালেঞ্জকে আরো উসকে দেবে?
এই ঘটনাগুলি কেবল আমাদের বিনোদন জগতে নয়, পুরো সমাজে এক চিন্তাশীল আলোচনার পরিবেশ তৈরি করছে। এই ঘটনাগুলোর প্রভাব, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সমস্ত রাজনৈতিক এবং সামাজিক ব্যক্তিত্বের মধ্যেও প্রবল আলোচনা এবং বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। ভারতীয় সিনেমা জগতের এই সুপারস্টারদের জীবনের নিরাপত্তা এবং এই ধরনের হুমকির বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে অভিনেতা অভিনেত্রীদের সকলেই এই বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি রাখছেন এবং সময়ই বলে দেবে এই পরিস্থিতি কোথায় নিয়ে যাবে।