Thursday, July 17, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসইরানের পর এবার নিশানায় সিরিয়া

ইরানের পর এবার নিশানায় সিরিয়া

After Iran, Syria is now targeted: ইরানকে লক্ষ্য করে সাম্প্রতিক একাধিক আক্রমণের রেশ কাটতে না কাটতেই মধ্যপ্রাচ্যে ফের দাউ দাউ করে জ্বলছে নতুন অগ্নিকান্ড—এইবার ইজরায়েলের নিশানায় পড়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া। বুধবার গভীর রাতে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী একটি বড়সড় বিমান হামলা চালায় সিরিয়ার রাজধানী দামাসকাসে, যা কেঁপে ওঠে প্রবল বিস্ফোরণে। বোমা বর্ষণের মূল লক্ষ্য ছিল সিরিয়ান সেনাবাহিনীর সদর দফতর ও প্রেসিডেন্টের বাসভবনের নিকটবর্তী স্ট্র্যাটেজিক অঞ্চল। সেই আক্রমণের অভিঘাতে মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে পড়ে সেনা হেডকোয়ার্টারের প্রধান প্রবেশদ্বার, ধ্বংস হয় একাংশ, পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের ভবনও। এমনকি সেদিন রাতেই লাইভ সম্প্রচারে থাকা এক সংবাদ পাঠিকা প্রাণভয়ে সম্প্রচারের মাঝপথে স্টুডিও ছেড়ে পালিয়ে যান—সেই দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই গোটা বিশ্বের মানুষ আঁতকে ওঠে সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি দেখে। জানা গিয়েছে, এই হামলায় অন্তত ১ জনের মৃত্যু হয়েছে ও গুরুতর আহত হয়েছেন ১৮ জন, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু ও মহিলা রয়েছেন। চিকিৎসা চলছে দামাসকাসের বিভিন্ন হাসপাতালে, কিন্তু চিকিৎসা পরিকাঠামোর হাল বেহাল বলেই জানা যাচ্ছে, ফলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে গত কিছুদিন ধরেই এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল। সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ‘দ্রুজ’-দের মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দেয়।

এই অবস্থাতেই ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইজরায়েল কাতজ সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বিবৃতিতে জানান, “সিরিয়ার সুয়েইদা প্রদেশে ইজরায়েল রীতিমতো শক্তি প্রয়োগ করবে, এবং দ্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষা করা হবে যেকোনো মূল্যে।” বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইজরায়েল কার্যত একটি মানবিকতার মোড়কে সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ শুরু করেছে, যার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক কৌশল ও ইরান-বিরোধী শক্তিকে আরও কোণঠাসা করার পরিকল্পনা। সিরিয়ায় বর্তমান যে সুন্নি ইসলামপন্থী সরকার রয়েছে, তাদের সঙ্গে ইরানের ঘনিষ্ঠতা ইজরায়েল অনেক দিন ধরেই হজম করতে পারছে না। সেই সূত্রেই ইরানের পর এবার সিরিয়া—এই ধারাবাহিকতাকে অনেকেই মনে করছেন বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য-রাজনীতির অংশ। দামাসকাসে আঘাত হানার পর ইজরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “সিরিয়ার ভিতর থেকে যেকোনো হুমকি এলে ইজরায়েল পালটা প্রতিরোধে প্রস্তুত।” সিরিয়ার এক সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, “এটি আমাদের সার্বভৌমত্বের চরম লঙ্ঘন। আমরা এর কড়া জবাব দেব।” তবে বাস্তবচিত্রে দেখা যাচ্ছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া এখন অনেকটাই অসহায়। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে অরাজকতা। সিরিয়া এখন বহু গোষ্ঠী ও উপদলের মধ্যে বিভক্ত, যার ফলে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে।

ftcms%3Aa283a522 7f41 494c b22e f419b0756174?source=next article&fit=scale down&quality=highest&width=1440&dpr=1

এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে ইজরায়েল, বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। সিরিয়ার সাধারণ মানুষ আবারো একবার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। রাতভর বিস্ফোরণের শব্দে শিশুদের ঘুম ভেঙে যায়, ঘর ছেড়ে রাস্তায় পালিয়ে যায় পরিবারগুলি। এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “আমরা ভেবেছিলাম কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে, কিন্তু ফের যুদ্ধ! আর কত?” শিশুদের স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বাজার-হাটে ভিড় নেই, গোটা দামাসকাসে যেন একটা মৃত্যুর ছায়া। সিরিয়ার যুদ্ধ বিধ্বস্ত জনগণের পক্ষে এই নতুন করে হামলার ধাক্কা মেনে নেওয়া কঠিন। বহু মানুষ ইতিমধ্যেই দেশের ভেতরেই উদ্বাস্তু হিসেবে জীবন কাটাচ্ছেন, তার ওপর নতুন করে এই আক্রমণ তাদের সামনে খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার নতুন সংকট তৈরি করেছে। রাষ্ট্রসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলি এই ঘটনার নিন্দা করেছে। UNHCR এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “বেসামরিক নাগরিকদের উপর এই ধরনের আক্রমণ মানবাধিকারের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।” অপরদিকে, ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, সিরিয়ায় থাকা ইরানি ঘাঁটি ও অস্ত্র ডিপো ধ্বংস করতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। তবে এখনও অবধি সেই দাবির পক্ষে স্পষ্ট প্রমাণ মেলেনি। এই ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। লেবানন, ইরাক, তুরস্ক, এমনকি সৌদি আরব থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, “আমরা যুদ্ধের পথে নয়, শান্তিপূর্ণ আলোচনার পক্ষে। সব পক্ষকে সংযত হওয়ার আবেদন জানাই।” ভবিষ্যতে এই সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় প্রভাব ফেলতে পারে, এমনই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। একদিকে ইরান, সিরিয়া, রাশিয়া—অন্যদিকে ইজরায়েল, আমেরিকা ও পশ্চিমা শক্তি—এই দুই শিবিরের সংঘর্ষ ক্রমশ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করছে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে এই সমস্ত রাজনীতির বলি হচ্ছেন সাধারণ সিরিয়াবাসী, যাদের ঘর নেই, খাবার নেই, ওষুধ নেই, আর এখন জীবনও নিরাপদ নয়। যুদ্ধ না চাইতেই এসে পড়েছে তাদের দরজায়। এই প্রতিবেদনের শেষে শুধুই একটাই প্রশ্ন থেকে যায়—এই রক্তের খেলা কবে থামবে?

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments