After 24 years, home health is the Dhulisat team’s motto : ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের জন্য এ এক দুঃখের সময়। ঘরের মাঠে, যেখানে প্রতিপক্ষকে হারানো একসময় সহজ ছিল, সেখানে আজ রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন টিম ইন্ডিয়া ২৪ বছর পর আবারো ধুলিস্যাৎ হলো। ঘরের মাঠে টানা তিনটি টেস্ট হেরে ভারতের এই পরাজয় যেন ২০০০ সালের সেই পুরনো যন্ত্রণাকে নতুন করে মনে করিয়ে দিল। তখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুই-শূন্য ব্যবধানে সিরিজ হেরেছিল ভারত, আর এবার ঠিক সেই একই ছবি দেখা গেল নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে রবিবার অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্টে, মাত্র ২৫ রানে হারিয়ে গেল রোহিত ব্রিগেড। প্রথম দুই টেস্ট হারের পর সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে ময়দানে নেমেছিল টিম ইন্ডিয়া, কিন্তু শেষমেশ কিউইদের সামনে মাথা নত করতে হলো। নিউজিল্যান্ডের বোলাররা প্রথম থেকেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল এবং শেষদিনে ভারতের জয়ের লক্ষ্য ছিল মাত্র ১৪৭ রান। কিন্তু একের পর এক উইকেট পড়তে শুরু করলে দলের মেরুদণ্ড যেন ভেঙে যায়। পুরো সিরিজ জুড়ে ভারতীয় বোলাররা যথেষ্ট ভালো পারফর্ম করলেও ব্যাটিং বিভাগ একেবারেই হতাশাজনক ছিল।

ভারতীয় দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে চারিদিকে। সিরিজের প্রতিটি ম্যাচেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা নিজেদের পরিচিত ছন্দে খেলতে ব্যর্থ হয়েছেন। তৃতীয় টেস্টের তৃতীয় ইনিংসে ১২১ রানে গুটিয়ে যায় ভারতীয় দল। ঋষভ পন্থ ছাড়া আর কেউই নিজের ব্যাটিংয়ে দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি। পন্থ ৬৪ রান করলেও বাকিরা যেন একে একে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েন। রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি, যাদের উপর দলের ব্যাটিংয়ের ভার ছিল, তারাও নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এই সিরিজ হারের ফলে ভারতীয় ক্রিকেট মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে এবং ভবিষ্যতের সিরিজগুলো নিয়ে চিন্তা বেড়েছে।
এই পরাজয়ের ফলে সমর্থকদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি, এবং অন্যান্য বড় শহরগুলোর চায়ের দোকানে, পার্কে, রাস্তাঘাটে আলোচনা চলছে, “এই দল কি সত্যিই আমাদের সেই পুরনো টিম ইন্ডিয়া?”। তবে অনেক সমর্থক এখনো দলের উপর আস্থা রাখছেন। টিম ইন্ডিয়ার কোচ রাহুল দ্রাবিড় বলেছেন, “এটা একটা কঠিন সময়, কিন্তু আমাদের দলের প্রতিভা ও মনোবল আছে। আমরা নিশ্চিত, পরবর্তী সিরিজে আমরা ঘুরে দাঁড়াবো।”
নিউজিল্যান্ডের এই সিরিজ জয় ভারতীয় দলের জন্য কঠিন এক বাস্তবতা তুলে ধরেছে। ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ, যা একসময় বিশ্বের সেরা ছিল, আজ তা একেবারেই বিবর্ণ। সিরিজ চলাকালীন সরফরাজ খান ও শুভমান গিল কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুললেও, বাকি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা দলের সব চেষ্টাকে বিফলে দিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের বোলার টিম সাউদি এবং ম্যাট হেনরি পুরো সিরিজ জুড়ে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপকে নাস্তানাবুদ করে দিয়েছেন।
ভারতের এই সিরিজ হার শুধু দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদেরই নয়, পুরো ক্রিকেট মহলকে চমকে দিয়েছে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “টিম ইন্ডিয়া যেন তাদের পুরনো ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে।” বিশেষ করে, বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ধারাবাহিকভাবে বড় রান করতে না পারায়, তাদের উপর থেকে দলের ভরসা কমে যাচ্ছে। বিরাট কোহলি, যিনি একসময় বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে গণ্য হতেন, তার ব্যাট থেকে এখন আর সেই আগ্রাসন দেখা যাচ্ছে না। অনেকেই মনে করছেন, পরবর্তী সিরিজগুলিতে যদি তাদের ফর্ম না ফেরে, তবে দলকে বড়ো পরিবর্তনের দিকে যেতে হতে পারে।
এখন সামনে রয়েছে বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি, যেখানে অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হবে টিম ইন্ডিয়াকে। এই সিরিজে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের যে দুর্বলতা দেখা গেছে, তা যদি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে না কাটানো যায়, তবে সেখানেও পরাজয়ের মুখ দেখতে হতে পারে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে দলের ব্যাটিং বিভাগে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও কৌশলগত পর্যালোচনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষক।
এই সময়ে রোহিত শর্মা এবং কোচ দ্রাবিড়ের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দলের মনোবল ধরে রাখা। রোহিত শর্মা বলেছেন, “এই পরাজয় আমাদের জন্য একটা বড়ো শিক্ষা। আমরা আমাদের ভুল থেকে শিখব এবং শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসব।” তবে ভক্তদের মনে প্রশ্ন, “এই দলের আসল শক্তি কি আগের মতো আছে?”
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই পরাজয়ের পর সমর্থকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই #TeamIndiaDown এবং #IndianBattingCollapse এর মতো হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে নিজেদের হতাশা প্রকাশ করছেন। আবার কিছু সমর্থক আশাবাদী হয়ে #ComeBackStronger ও #SupportTeamIndia এর মতো হ্যাশট্যাগ দিয়ে দলের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন।
টিম ইন্ডিয়ার এই পরাজয় ভবিষ্যতে ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য বড়ো এক সংকেত হতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে দলকে শক্তিশালী করতে তরুণ প্রতিভাদের সুযোগ দেওয়া, সিনিয়র খেলোয়াড়দের ফর্মে ফিরিয়ে আনা, এবং কৌশলগত পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের তরফ থেকে বলা হয়েছে, “আমরা দলের এই অবস্থার দিকে নজর রাখছি এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।”
এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দলের খেলোয়াড়দের মানসিক শক্তি, প্রশিক্ষণ এবং একতার প্রয়োজন। সমর্থকদের আশা, টিম ইন্ডিয়া আবার সেই পুরনো জয়ের ছন্দে ফিরে আসবে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের গর্বিত স্থান আবার পুনরুদ্ধার করবে।