Administrative hurdles, kite lovers trust Chinese Manja: পৌষ সংক্রান্তি এলেই শীতের মিঠে রোদে আকাশে দেখা যায় রংবেরঙের ঘুড়ির খেলা। ঘুড়ি ওড়ানো শুধু একটি প্রথা নয়, এটি বাঙালির আনন্দ আর শৈশবের অন্যতম স্মৃতি। তবে আজ সেই ঘুড়ির আনন্দে লুকিয়ে রয়েছে এক মরণফাঁদ—চীনা মাঞ্জা। এই মাঞ্জা সুতোয় যেমন ঘুড়ি লড়াইয়ে বাড়তি ধার পাওয়া যায়, তেমনই এটি হয়ে উঠছে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। শীতকাল এলে ঘুড়ি ওড়ানোর চাহিদা বাড়ে। বিশেষ করে পৌষ সংক্রান্তিতে গ্রামবাংলার প্রতিটি বাড়ির ছাদে, খোলা মাঠে ঘুড়ির উত্সব দেখা যায়। কিন্তু এই মাঞ্জা সুতো, যা প্রচণ্ড ধারালো, অসংখ্য মানুষের জন্য ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।চীনা মাঞ্জা মূলত একটি প্লাস্টিকজাত সুতো, যা বিশেষ প্রক্রিয়ায় কাচের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি। এটি এতটাই শক্তিশালী এবং ধারালো যে, এটি পাখিদের শরীর থেকে শুরু করে মানুষের ত্বক কেটে দিতে পারে। শুধু তাই নয়, এই সুতো গাছের ডালে, রাস্তার উপর বা বিদ্যুতের তারে আটকে গিয়ে আরও বড় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। চীনা মাঞ্জা ব্যবহারে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এর চাহিদা এতটাই বেশি যে, ঘুড়ি বিক্রেতারা এটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয় এক ঘুড়ি ব্যবসায়ী রতন দাস বলেন, “আমরা জানি এটি বিপজ্জনক। তবে মানুষ এর প্রতি এতটাই ঝুঁকছে যে, আমরা এটি রাখতে বাধ্য হচ্ছি। পৌষ সংক্রান্তির সময় ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতায় চীনা মাঞ্জা ছাড়া কেউ আর ঘুড়ি ওড়াতে চায় না।” এই সুতো ব্যবহার করলে ঘুড়ি কাটা সহজ হয় এবং প্রতিযোগিতায় জেতার সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু এই আনন্দের খেসারত দিতে হচ্ছে মানুষকেই।পূর্ব কলকাতার বাসিন্দা অমিত মণ্ডল জানান, “ঘুড়ি ওড়ানোর সময় চীনা মাঞ্জার কারণে আমি নিজে একবার গুরুতর আহত হয়েছিলাম। আমার আঙুলের একটা অংশ কেটে গিয়েছিল। এটি কেবল মানুষের ক্ষতি করে না, পাখিদেরও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।” সত্যিই, শীতের সময় প্রায়ই চীনা মাঞ্জার কারণে আহত পাখিদের উদ্ধার করতে দেখা যায়। অনেক পাখি এমন জখম হয় যে তারা আর উড়তে পারে না।
প্রশাসন এই বিষয়ে প্রচার চালালেও সচেতনতার অভাব রয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও চীনা মাঞ্জার বিপদ সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় মাইকে ঘোষণা, লিফলেট বিতরণ করা হলেও চাহিদা কমছে না। মূলত, সস্তায় সহজলভ্য হওয়ায় এই সুতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাজারে দেশীয় মাঞ্জা সুতোর তুলনায় চীনা মাঞ্জা সস্তা, এবং এটি দীর্ঘস্থায়ীও।এক সময় ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য ঘরে বসে সুতো তৈরি করা হতো। দেশীয় পদ্ধতিতে আঠা আর কাঁচ গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি মাঞ্জা সুতো পরিবেশের জন্য নিরাপদ ছিল। তবে চীনা মাঞ্জার কারণে সেই প্রথাটি এখন বিলুপ্তির পথে। ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা যত বেড়েছে, ততই এই সুতো জনপ্রিয় হয়েছে।

প্রশাসন এবার কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে। কলকাতা পুলিশ এবং পরিবেশবিদদের দাবি, চীনা মাঞ্জার বিক্রি সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। শুধুমাত্র দেশীয় মাঞ্জা সুতো বিক্রি করলে দুর্ঘটনার হার কমানো সম্ভব। পাখি ও পরিবেশ রক্ষার্থে এই সিদ্ধান্ত জরুরি।চীনা মাঞ্জার ব্যবহার বন্ধ করতে স্থানীয় মানুষও জোরালো দাবি তুলছেন। পাড়ার এক প্রবীণ নাগরিক জানালেন, “আগে আমরা দেশীয় সুতো দিয়ে ঘুড়ি ওড়াতাম। মাঞ্জার এত ধার ছিল না, কিন্তু প্রতিযোগিতার মজা থাকত। এখন চীনা মাঞ্জা সব শেষ করে দিচ্ছে। আমাদের পুরনো পদ্ধতিতেই ফিরতে হবে।”তবে পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক। শুধু শহরে নয়, গ্রামাঞ্চলেও চীনা মাঞ্জার ব্যবহার বাড়ছে। বিভিন্ন মাঠে, গাছের ডালে আটকে থাকা সুতোর কারণে শিশুদের জন্যও এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো এখন জোর প্রচার শুরু করেছে।চীনা মাঞ্জা থেকে দূরে থাকতে সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা। পরিবেশবান্ধব সুতো ব্যবহার করা এবং পুরনো পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। চীনা মাঞ্জার ব্যবহার বন্ধ হলে পাখি এবং মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের যৌথ উদ্যোগে এই বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।