Sunday, July 13, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যআবহাওয়া রাজ্যে ফের সক্রিয় বর্ষা, জেলায় জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস

 রাজ্যে ফের সক্রিয় বর্ষা, জেলায় জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস

Active monsoon in the state again, rain forecast in various districts : রাজ্যে ফের সক্রিয় হয়েছে বর্ষা, আর সেই খবরেই ফের একবার ঘরে-বাইরে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সাধারণ মানুষের কপালে। একদিকে উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকাগুলিতে টানা বৃষ্টির সতর্কতা, অন্যদিকে দক্ষিণবঙ্গেও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা ও আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি—সব মিলিয়ে যেন ফের ফিরে এল বর্ষার সেই পুরনো চেহারা। রবিবার সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ আর হালকা বৃষ্টির ছোঁয়ায় ঘুম ভাঙে শহরবাসীর। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহজুড়ে রাজ্যের একাধিক জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে, বিশেষ করে সোমবার ও মঙ্গলবার পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মৌসুমী অক্ষরেখার বিস্তার এবং বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে চলা সম্ভাব্য ঘূর্ণাবর্ত আবহাওয়ায় এই বড় পরিবর্তনের মূল কারণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে মৌসুমী অক্ষরেখা কাঁথি হয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত, যার ফলে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গে প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়েও আরেকটি মৌসুমী অক্ষরেখা বিস্তৃত, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও উত্তর দিনাজপুর—এই ছয়টি জেলা ইতিমধ্যেই সতর্কতামূলক জেলায় পরিণত হয়েছে, কারণ আজ থেকে বুধবার পর্যন্ত টানা ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় পাহাড়ি ধস বা নদীভাঙনের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু এলাকায় স্কুল-কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানা গেছে, যাতে করে ছাত্রছাত্রীরা ঝুঁকি না নিয়ে বাড়িতে থাকতে পারে

9k=

উত্তরবঙ্গের এক প্রবীণ চা বাগান শ্রমিক ভবানী রাই জানালেন, “এই সময় বৃষ্টির দাপটে চা পাতা তোলার কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, এতে বোনাস-সহ আমাদের দৈনন্দিন রোজগারে বড় ধাক্কা লাগে।” অন্যদিকে দক্ষিণবঙ্গের পরিস্থিতিও খুব একটা স্বস্তির নয়। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সোমবার ও মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর, আর সেই কারণে ইতিমধ্যেই জেলাগুলির বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কুলতলির বাসিন্দা সুধাংশু হালদার বললেন, “গত বছর এই সময়ে জমির ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছিল অতিরিক্ত বৃষ্টিতে, এবারও সেই ভয় করছে।” কলকাতাতেও বৃষ্টির প্রভাব স্পষ্ট। রবিবার সকাল থেকে মূলত মেঘলা আকাশ, কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টি ও বজ্রপাত লক্ষ্য করা গেছে। শহরে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি ক্রমশ বেড়েই চলেছে, যা অফিসযাত্রীদের কাছে এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ অর্ণব মুখার্জী জানাচ্ছেন, “আবহাওয়ার এই রদবদলের মূল কারণ হল অক্ষরেখার সক্রিয়তা এবং বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ। এগুলির ফলে দক্ষিণবঙ্গে বজ্রপাতের সম্ভাবনা এবং উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই সময় মানুষকে বাইরে বেরনোর সময় সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষ করে নদী ও পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের।

” রবিবার সকালে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে সামান্য কম। অন্যদিকে গতকাল বিকেলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আবার স্বাভাবিকের থেকে সামান্য বেশি। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৭৯ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামা করেছে, যা শহরে রাস্তায় বেরোলে অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তুলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ০.২ মিলিমিটার, তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় তা বেড়ে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা ওঠানামা করবে বলে পূর্বাভাস। এমন পরিস্থিতিতে কলকাতা কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ড্রেনেজ পরিষ্কার ও জল জমার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। তবে মানুষজনের দাবি, শুধু শহর নয়, শহরতলি ও গ্রামের দিকেও নজর দিতে হবে, যেখানে বর্ষায় জল জমে একাধিক গ্রাম কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরিবেশবিদ সুরজিৎ দত্ত জানিয়েছেন, “এভাবে বর্ষার সময়ে যদি জল নিকাশির সঠিক ব্যবস্থা না থাকে, তবে তা শুধু জনজীবন নয়, কৃষিকাজ এবং শিশুদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেও বিঘ্নিত করে।” প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে দেখা গেছে বর্ষা সক্রিয় হওয়ার পরে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও জ্বরের প্রকোপ বেড়ে যায়, তাই স্বাস্থ্য দফতর ইতিমধ্যেই হাসপাতালগুলিকে সতর্ক করেছে। বর্ষা মানেই শুধু বৃষ্টি নয়, বর্ষা মানেই প্রস্তুতি, সাবধানতা ও মানবিক সুরক্ষা। এই সময় কোনও গুজব বা বিভ্রান্তিকর তথ্য না ছড়িয়ে সঠিক তথ্য জানার এবং তা মেনে চলার বার্তা দিচ্ছেন রাজ্যের আবহাওয়া আধিকারিকরা। রাজ্যবাসীর প্রতি তাঁদের পরামর্শ—অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন, শিশুরা ও প্রবীণরা যেন বাড়ির বাইরে না যায়, নদী ও জলাশয়ে স্নান বা মাছ ধরার মতো কাজ থেকে বিরত থাকুন এবং সর্বদা খবরের আপডেট রাখুন। আগামী কয়েকদিন রাজ্যজুড়ে সক্রিয় থাকবে বর্ষা, তাই এখনই সময় সাবধানতার সাথে নিজেকে ও নিজের পরিজনদের নিরাপদ রাখার।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments