Accusations of extortion again in Aushgram: কাটমানি ইস্যুতে একাধিকবার কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি জনগণের কাছ থেকে কাটমানি নেওয়া নেতাদের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। কিন্তু কাটমানির কালচার যে এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, তার প্রমাণ মিলল পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামে। এবার বাংলা আবাস যোজনার উপভোক্তা এক বিধবা মহিলার কাছ থেকে টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠল পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা এলাকায়। অভিযোগকারী মহিলার দাবি, তিন হাজার টাকা না দেওয়ায় তাঁর বাড়ির ছবি তোলেননি প্রশাসনের প্রতিনিধি। আর এই অভিযোগের তীর সরাসরি তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য বিল্লু মাজির দিকে।
ঘটনাটি আউশগ্রামের উক্তা গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাঙ্গাল গ্রামে। সেখানকার বাসিন্দা নিভা পাল নামে এক বিধবা মহিলা বাংলা আবাস যোজনার অনুদান পেয়ে নিজের বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়ার পর তিনি বাড়ি নির্মাণের কাজ করেন এবং দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে প্রশাসনের প্রতিনিধি বাড়িতে এসে ছবি তুলতে গেলে।
নিভা দেবীর অভিযোগ, যখন প্রতিনিধি তাঁর নির্মীয়মান বাড়ির ছবি তুলতে যাচ্ছিলেন, তখন পঞ্চায়েত সদস্য বিল্লু মাজি হঠাৎ বাধা দেন। বিল্লু মাজি তাঁকে সরাসরি জানান, “তিন হাজার টাকা না দিলে বাড়ির ছবি তোলা হবে না।” ফলে ছবি না তোলায় দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায় নিভা দেবীর। অসহায় হয়ে তিনি এলাকার বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর কথায়, “আমি একজন বিধবা। অনেক কষ্টে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছি। কিন্তু পঞ্চায়েত সদস্য তিন হাজার টাকা দাবি করলেন। টাকা না দিতে পারায় আমার ছবি তোলাও হলো না। এখন আমার দ্বিতীয় কিস্তির টাকা কবে পাব, জানি না।”
অভিযোগের মুখে থাকা পঞ্চায়েত সদস্য বিল্লু মাজি অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “এটি ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমি কোনো টাকা চাইনি। রাজনৈতিক কারণে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।” একই সুর শোনা গিয়েছে পঞ্চায়েত প্রধানের গলাতেও। তিনিও এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
তবে এই ঘটনার পরই বিরোধী দল বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে। বিজেপির যুব মোর্চার বর্ধমান বিভাগের কনভেনর সৌমেন কার্ফা বলেন, “এই ঘটনা প্রমাণ করল, তৃণমূল কংগ্রেস কাটমানির জন্য গরিব, অসহায় মানুষদেরও ছাড়ে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই হুঁশিয়ারি দিন, বাস্তবে তৃণমূলের নেতারা কাটমানি নেওয়া বন্ধ করেনি। এর তীব্র নিন্দা করছি এবং দোষীদের শাস্তি চাই।”কাটমানি ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগেও কড়া অবস্থান নিয়েছেন। সরকারি প্রকল্পের টাকা নিয়ে দুর্নীতি বরদাস্ত করবেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের একাধিক নেতা-কর্মীকে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে জনসমক্ষে টাকা ফেরত দিতে দেখা গিয়েছিল। তবে আউশগ্রামের এই ঘটনা দেখিয়ে দিল, মমতার বার্তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
আউশগ্রামের এই ঘটনা জানাজানি হতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অনেকেই পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। এক বাসিন্দার বক্তব্য, “আমাদের মতো গরিব মানুষের জন্য সরকার প্রকল্প এনেছে। কিন্তু পঞ্চায়েতের লোকেরা সেই টাকাও পেতে দেয় না। এত দুর্নীতি চলছে, কে আমাদের বিচার করবে?”আরেকজন বলেন, “বাংলা আবাস যোজনায় টাকা পেতে গেলে ঘুষ দিতে হয়। এটাই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিভা পালকে যেভাবে হয়রানি করা হয়েছে, তা ন্যক্কারজনক।”