A sign of doom? Why was the warfish spotted on the beach?: সমুদ্রের গভীরতম স্তর থেকে উঠে আসা এক বিশালাকার রহস্যময় মাছ নিয়ে আবারও আতঙ্ক ছড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে। মেক্সিকোর উপকূলে দেখা মিলেছে ‘ওয়ারফিশ’ বা ‘ডুমসডে ফিশ’ নামে পরিচিত এক বিরল সামুদ্রিক প্রাণীর! সাধারণত গভীর সমুদ্রের ২০০ থেকে ১০০০ মিটার নিচে বসবাস করা এই মাছকে জাপানে বলা হয় ‘ডুমসডে ফিশ’, কারণ বহু মানুষের বিশ্বাস, এই মাছের দেখা পাওয়া মানেই কোনো বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে ভূমিকম্প বা সুনামির আগাম বার্তা!সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বারবার এই মাছের দেখা মিলেছে বিভিন্ন দেশে, আর প্রায়ই এর কিছুদিন পরেই ঘটে গেছে ভয়াবহ ভূমিকম্প বা সুনামি। এবার মেক্সিকোর সমুদ্রতটে পাওয়া যাওয়ার পর থেকেই নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়েছে বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে। তাহলে কি সত্যিই ধ্বংসের ইঙ্গিত নিয়ে আসে এই মাছ, নাকি এটি শুধুই কাকতালীয় ঘটনা?
ওয়ারফিশ বা রেজারব্যাক ফিশ (Regalecus glesne) পৃথিবীর গভীর সমুদ্রে বসবাসকারী সবচেয়ে দীর্ঘ প্রজাতির মাছগুলোর মধ্যে একটি। এটি প্রায় ১১ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং এদের শরীর রূপালি, সরু ও ফিতের মতো দেখতে। সাধারণত, এই মাছ খুবই লাজুক প্রকৃতির এবং গভীর সমুদ্রের ২০০ মিটার বা তারও নিচে থাকে। তবে মাঝে মাঝে এদের দেখা মেলে উপকূলে, যা সাধারণ মানুষের মনে নানা ধরনের প্রশ্নের জন্ম দেয়।জাপানে বহু বছর ধরেই একটি প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে যে যখন সমুদ্রের গভীরে কোনো বড় পরিবর্তন ঘটে, বিশেষ করে ভূমিকম্পের সময়, তখন এই মাছ ভেসে ওঠে। জাপানে ২০১১ সালের বিধ্বংসী ফুকুশিমা ভূমিকম্প ও সুনামির আগেও বেশ কয়েকটি ওয়ারফিশ উপকূলে উঠে এসেছিল।
সম্প্রতি মেক্সিকোর ব্যাজা ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলের সমুদ্রসীমায় একটি বিশাল ওয়ারফিশ মৃত অবস্থায় ভেসে উঠতে দেখা গেছে। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা প্রথমে এটিকে দেখতে পান, আর মুহূর্তেই ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, কারণ এটি দেখা পাওয়ার পরই তারা মনে করতে থাকেন, তাহলে কি বড় কোনো দুর্যোগের আগাম বার্তা পেয়ে গেছি আমরা?একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, “আমরা এই ধরনের মাছ খুব কমই দেখি। যখনই কোনো বড় কিছু হতে যাচ্ছে, তখনই এগুলো উপরে চলে আসে। আমরা আতঙ্কিত!”বিজ্ঞানীরা অবশ্য এই কুসংস্কারের পক্ষে নন। তাঁদের মতে, ওয়ারফিশ সাধারণত অসুস্থ হলে বা গভীর সমুদ্রের প্রবল স্রোতের কারণে উপরে উঠে আসে। তবে কিছু গবেষণা বলছে, ভূমিকম্পের আগে সমুদ্রের তলদেশে টেকটোনিক প্লেটগুলোর অস্বাভাবিক নড়াচড়া হয়, যা গভীর পানির প্রাণীগুলোর জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলে।বিখ্যাত সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ডা. টিমোথি পলসন বলেন, “ওয়ারফিশের ভেসে ওঠা এবং ভূমিকম্প বা সুনামির মধ্যে সরাসরি কোনো বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক এখনো প্রমাণিত হয়নি। তবে গভীর সমুদ্রে কোনো পরিবর্তন ঘটলে এর প্রভাব কিছু প্রাণীর উপরে পড়তে পারে।”
মেক্সিকো এমনিতেই ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। এখানকার মানুষের মনে তাই ওয়ারফিশ দেখার পর ভয় আরও বেড়ে গেছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেছেন, “আমরা জানি না সত্যিই কিছু হবে কিনা, তবে এই ধরনের ঘটনা সাধারণত ভালো কিছু নির্দেশ করে না।”এদিকে, স্থানীয় প্রশাসন ও বিজ্ঞানীরা জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং ভূমিকম্প মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখতে বলেছেন।ওয়ারফিশ শুধুমাত্র মেক্সিকো নয়, জাপান, ফিলিপাইন, চিলি, ইন্দোনেশিয়া ও আমেরিকার উপকূলেও মাঝে মাঝে দেখা যায়। এই মাছের গভীর সমুদ্রে থাকার ধরন এবং এর আচরণ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।