Thursday, July 17, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসদেশ রাজ্যে একশো দিনের কাজ কবে চালু, উত্তর এখনও অধরা

 রাজ্যে একশো দিনের কাজ কবে চালু, উত্তর এখনও অধরা

A show in the state is still good, the answer is elusive : রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে সকাল হলেই একটা প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খায়—”আমার কাজ কবে হবে?” পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ গ্রামীণ মানুষ যারা একশো দিনের কাজ প্রকল্পের উপর নির্ভরশীল, তারা আজ কার্যত অনিশ্চয়তায় ভুগছে। এই প্রকল্প, যা মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা আইন (MGNREGA)-এর আওতায় আসে, বহু দরিদ্র পরিবারের ভরসার জায়গা ছিল, বিশেষত দিন আনা-দিন খাওয়া মানুষের। কিন্তু গত এক বছর ধরে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতে এই প্রকল্প কার্যত বন্ধ অবস্থায়। কলকাতা হাই কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, আগামী ১ আগস্ট থেকে প্রকল্পটি ফের চালু করতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এখনও পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি, ফলে রাজ্যজুড়ে তৈরি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা।

এই মুহূর্তে দিল্লিতে চলছে কেন্দ্রীয় কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। উপস্থিত রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব পি উলগানাথন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, বৈঠকের প্রথম দুই দিন—সোমবার ও মঙ্গলবার—বাংলার কোনও বক্তব্য রাখারই সুযোগ হয়নি। প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, বুধবার শেষ দিনে হয়তো সচিব নিজের বক্তব্য রাখার সুযোগ পাবেন। তবে প্রকল্প চালুর বিষয়ে এখনও কেন্দ্রীয় স্তরে কোনও আশাব্যঞ্জক বার্তা আসেনি। বরং কেন্দ্রের অবস্থান থেকে অনুমান করা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনার পরই কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রশাসনিক মহলের একাংশ মনে করছেন, এটি নিছক অর্থনৈতিক বা প্রশাসনিক সমস্যার ফল নয়, এর পিছনে গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। একাধারে প্রকল্পের বকেয়া অর্থ মেটানো হচ্ছে না, আবার রাজ্যকে এই প্রকল্প থেকে কার্যত বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন, লোকসভা ভোট এবং রাজ্য-কেন্দ্র রাজনৈতিক সংঘাত—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। এমনকি, বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে যেখানে প্রকল্প স্বাভাবিকভাবে চলছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল রাজ্যে প্রকল্প বন্ধ থাকা নিঃসন্দেহে একপেশে আচরণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অপরদিকে, এই প্রকল্প বন্ধ থাকায় রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়েছে, তা অকল্পনীয়। বীরভূমের এক গ্রামের শ্রমিক মঙ্গল মুর্মু বলেন, “গত বছরেও দিনে পাঁচশো টাকা পেতাম, এখন ধান কাটার মৌসুম ছাড়া কোনও কাজ নেই। ছেলেমেয়েদের স্কুলের খরচ চালানোই মুশকিল হয়ে গেছে।” একই রকম কথা বললেন উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার বাসিন্দা সুচিত্রা বিবি—”একশো দিনের কাজ বন্ধ হওয়ায় রান্না গ্যাস ভর্তি করা, চিকিৎসার খরচ চালানো, এমনকি চাল কেনার টাকাও জোগাড় হচ্ছে না।”

প্রকল্প চালু না হওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন মহিলারা। কারণ এই প্রকল্পে নারীদের অংশগ্রহণ সবসময়ই বেশি থেকেছে। শিশুপালন, পরিবার সামলানো, ঘরকন্নার ফাঁকে যখন সময় বের করে একশো দিনের কাজে যেতেন, তখন সেই আয়ের ওপর নির্ভর করেই চলত সংসার। কিন্তু এখন সেই আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই বাধ্য হয়ে উচ্চ সুদে ঋণ নিচ্ছেন, যা ভবিষ্যতে আরও বিপদের ইঙ্গিত।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ১.১ কোটি পরিবার এই প্রকল্পে কাজ পেয়েছিল, কিন্তু ২০২3 সালের শুরু থেকেই কেন্দ্র রাজ্যের প্রতি একাধিক অভিযোগ তুলে প্রকল্পের অর্থ ছাড় বন্ধ করে দেয়। কেন্দ্রের দাবি ছিল, রাজ্য সরকারের তরফে নানা অসঙ্গতি, ভুয়ো শ্রমিকের নাম এবং প্রকল্পে স্বচ্ছতা না থাকায় টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। যদিও রাজ্য সরকার বারবার জানিয়েছে, তারা সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে রিপোর্ট পাঠিয়েছে এবং নতুন নিয়মে পেমেন্ট সিস্টেম চালু করেছে। তবুও টাকা আসেনি।

রাজ্য সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা একাধিকবার চিঠি দিয়েছি, নথিপত্র পাঠিয়েছি, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের গ্রামে নিয়ে গিয়েছি, কিন্তু তবুও অর্থ ছাড় হয়নি। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া কিছু নয়।”

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “মামলার রায় হাতে আসার পরই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। আদালতের নির্দেশের আলোকে যদি কোনও বাধ্যবাধকতা থাকে, তা হলে তা মেনে নেওয়া হবে। কিন্তু আমাদের কাছে এখনও বহু প্রশ্ন রয়েছে প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিয়ে।”

এই প্রসঙ্গে সমাজতাত্ত্বিক অধ্যাপক অনির্বাণ চক্রবর্তী বলেন, “একশো দিনের কাজ প্রকল্প শুধু রোজগারের রাস্তা নয়, এটি একটি সামাজিক নিরাপত্তার প্রতীক। যেখানে সরকারি সাহায্যের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষ মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারেন। এটি বন্ধ হয়ে গেলে গ্রামাঞ্চলের বেকারত্ব বাড়বে, পরিযায়ী শ্রমিক সংখ্যা বাড়বে, এমনকি সামাজিক অস্থিরতা দেখা দেবে।”

তবে এই সঙ্কট শুধু প্রশাসনের নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে লাখো মানুষের ভবিষ্যৎ। শিশুদের পড়াশোনা, বয়স্কদের ওষুধ, মহিলাদের আত্মনির্ভরতা, সব কিছুই প্রশ্নের মুখে। রাজ্য সরকার আদালতের রায়কে হাতিয়ার করে কেন্দ্রের উপর চাপ সৃষ্টি করলেও, যতদিন না প্রকল্প ফের চালু হচ্ছে, ততদিন এই অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহল থেকে কেন্দ্রকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও #100dayswork এবং #SaveMGNREGA ট্রেন্ড করছে।

একদিকে দিল্লিতে দপ্তরীয় বৈঠক, অন্যদিকে গ্রামের মাঠে খালি থালা, এই বিরোধের মাঝখানে পড়ে কষ্ট পাচ্ছে রাজ্যের কোটি কোটি গরিব মানুষ। পঞ্চায়েতের সামনে, ব্লক অফিসের গেটে ঘোরাফেরা করেও যখন তারা স্পষ্ট উত্তর পাচ্ছেন না, তখন একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—”রাজনীতি কি তবে রোজগারের চেয়েও বড়?”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments