Saturday, April 12, 2025
Google search engine
HomeDurgapujaবর্ধমান শহরের বুকে এক টুকরো অযোধ্যার রাম মন্দির

বর্ধমান শহরের বুকে এক টুকরো অযোধ্যার রাম মন্দির

A piece of Ayodhya’s Ram temple in the heart of Burdwan city:বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজোর আবহে বর্ধমান শহরে এবার দেখা যাচ্ছে এক অন্যরকম পুজোর থিম। বর্ধমান শহরের ইছলাবাদ কিরণ সংঘ তাদের ৬৮তম বর্ষে এক অভিনব থিমের মাধ‍্যমে সকলের নজর কাড়তে চলেছে। দুর্গা প্রতিমা তৈরি হচ্ছে অযোধ্যার রাম মন্দিরের আদলে, যেখানে রামায়ণের গল্প ফুটিয়ে তোলা হবে। মণ্ডপে ঢুকতেই যেন মনে হবে, আপনি প্রবেশ করেছেন অযোধ্যার পবিত্র রাম মন্দিরে। এই থিমের মাধ্যমে দর্শনার্থীরা শুধুমাত্র দুর্গাপুজোর আনন্দই পাবেন না, বরং ভারতীয় পুরাণের অন্যতম প্রধান চরিত্র রামের গল্পকেও আবার একবার নতুনভাবে দেখার সুযোগ পাবেন।

কিরণ সংঘের পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সুরজিৎ দত্ত জানান, “এবার আমরা অযোধ্যার রাম মন্দিরকে আমাদের পুজোর মূল ভাবনা হিসেবে বেছে নিয়েছি। এটি শুধু একটি মন্দির নয়, এটি ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। আমরা আশা করছি যে, এই থিমের মাধ্যমে মানুষ আমাদের পুরোনো ঐতিহ্যকে মনে রাখবেন এবং ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি তাদের শ্রদ্ধা আরও বাড়বে।”

Capture 6

এই থিমের ভাবনা আসে তখনই, যখন অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ নিয়ে সারাদেশে চর্চা চলছে। ভারতীয় ইতিহাসে রাম মন্দিরের গুরুত্ব বিশাল। ২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, বহু বিতর্কের পর অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ শুরু হয়, যা বহু মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটায়। এই মন্দির নির্মাণের সঙ্গে জড়িত রয়েছে হিন্দু ধর্মের গভীর বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও ইতিহাস। তাই কিরণ সংঘ এবার তাদের পুজোর মাধ্যমে সেই রাম মন্দিরের আদলে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছে।

মণ্ডপের প্রধান ডিজাইনার অনিন্দ্য ঘোষাল বলেন, “এবারের পুজোতে আমরা রাম লিলার আদলে কিছু অংশ ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি। এই পুজো শুধু আমাদের জন্য নয়, আমাদের বর্ধমানবাসীর জন্যও এক গর্বের বিষয়। আমরা আশা করি, এই থিম দর্শনার্থীদের মনে গভীর ছাপ ফেলবে।”

বর্ধমান শহরের বাসিন্দারা এই পুজোকে ঘিরে দারুণ উত্তেজিত। শহরের প্রবীণ বাসিন্দা শিবানী ঘোষ বলেন, “প্রত্যেক বছর পুজোতে আমরা কিছু না কিছু নতুন থিম দেখতে পাই, কিন্তু এবারের রাম মন্দিরের থিমটি আমাদের জন্য বিশেষ কিছু। অযোধ্যার সঙ্গে আমাদের এমনই এক সম্পর্ক, যা বহু প্রাচীন। এই থিম আমাদের ইতিহাস এবং আমাদের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাহায্য করবে।”

এছাড়াও, তরুণ সমাজের মধ্যে এই থিম নিয়ে দারুণ উদ্দীপনা রয়েছে। বর্ধমান শহরের কলেজের ছাত্র রূপক ঘোষাল বলেন, “এবারের পুজোর থিমটি খুবই প্রাসঙ্গিক। আমরা সবাই জানি, রাম মন্দির নির্মাণের ঐতিহাসিক ঘটনার কথা। তাই এই থিম আমাদের দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি আরও বেশি সম্মান জানাবে।”

বর্ধমান শহরের ইছলাবাদ কিরণ সংঘের পুজোতে এবার মণ্ডপ সজ্জায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাম মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরির জন্য বিশেষ ডিজাইনার এবং কারিগরদের ব্যবহার করা হচ্ছে। মণ্ডপ তৈরির কাজ শেষ মুহূর্তে জোরকদমে চলছে। ইতিমধ্যেই শহরের বেশিরভাগ মানুষ এই থিম দেখতে মণ্ডপের দিকে ভিড় জমাচ্ছেন।

পুজোর উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, দর্শকদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুজোর দিনগুলোতে শহরের প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। এছাড়া, পুজো মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে এবং প্রতিমা দর্শনের জন্য নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা রাখা হয়েছে, যাতে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পুজোর প্রস্তুতিতে কিছুটা বাধার সৃষ্টি হয়েছে। তবুও, পুজো উদ্যোক্তারা বলেছেন, “আমরা সব রকম প্রস্তুতি নিচ্ছি যাতে পুজোর দিনগুলো নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও আমরা কাজ শেষ করে ফেলতে সক্ষম হবো। চতুর্থীর দিন থেকে শহরে যে ভিড় দেখা যাচ্ছে, তা থেকে বোঝা যাচ্ছে মানুষের মধ্যে কতটা উন্মাদনা রয়েছে।”

এই থিমের পুজো বর্ধমান শহরের পুজো সংস্কৃতিতে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। রাম মন্দিরের আদলে পুজো হওয়া শুধু বর্ধমানবাসীর জন্য নয়, সারা রাজ্যের জন্য একটি বিশেষ বার্তা বহন করবে। আগামী বছরগুলিতে আরও অনেক পুজো কমিটি থিমের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

Capture 5

পুজো উদ্যোক্তারা বলছেন, এই ধরনের থিম মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সৌহার্দ্য বাড়াবে। হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান দেবতা রামের মন্দিরকে থিম হিসেবে ব্যবহার করা মানে ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানো। এই পুজো দেখতে আশেপাশের অঞ্চল থেকেও অনেক মানুষ ভিড় করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পুজো কমিটির সদস্য অরিন্দম দাস বলেন, “আমরা চাই, আমাদের এই পুজোর থিমের মাধ্যমে সকলের মনে ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জাগ্রত হোক। রাম মন্দির শুধু একটি স্থাপত্য নয়, এটি আমাদের আত্মিক বিশ্বাসের প্রতীক। এই থিমের মাধ্যমে আমরা ধর্মীয় ঐক্য এবং শাস্ত্রের শিক্ষা প্রচার করতে চাই।”

বর্ধমান শহরের এই পুজো শুধু থিম নয়, এটি এক ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি। রাম মন্দিরের আদলে তৈরি এই মণ্ডপ এবং দুর্গা প্রতিমা দেখার জন্য মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝেও পুজোর আয়োজন চলছে জোরকদমে। শেষ মুহূর্তে শহরের বাসিন্দারা মণ্ডপে ভিড় জমাচ্ছেন, আর পুজোর দিনগুলোতে এই থিম বর্ধমানবাসী ও দর্শনার্থীদের মন কাড়বে বলে সকলেই আশাবাদী।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments