Youth Congress holds torch procession demanding “Save the Constitution”:-আসানসোলের রাস্তায় সোমবার সন্ধ্যা যেন এক অনন্য বার্তার বাহক হয়ে উঠল, যখন পশ্চিম বর্ধমান জেলা যুব কংগ্রেসের উদ্যোগে আয়োজিত হল “সংবিধান বাঁচাও” দাবিতে এক বর্ণাঢ্য মশাল মিছিল। চিত্রা মোড় থেকে শুরু হয়ে এই মিছিল গিয়ে থামে ভগৎ সিং মোড়ে, আর গোটা পথ জুড়ে প্রতিধ্বনিত হয় একটাই স্লোগান—”সংবিধান আমাদের অধিকার, ওকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।” হাতে মশাল, মুখে প্রতিবাদের অগ্নিস্নান স্লোগান, আর চোখে দেশের গণতন্ত্র রক্ষার দৃঢ় সংকল্প—এই ছবি সোমবারের আসানসোল শহরকে নতুন করে চেনাল। জেলা কংগ্রেস সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী নিজে উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দেন এই মিছিলে, সঙ্গে ছিলেন জেলা যুব কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা এবং কংগ্রেসের অন্যান্য শাখার সদস্যরাও। তাঁরা জানান, আজকের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেভাবে দেশের সংবিধানকে উপেক্ষা করে একচেটিয়া সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষের অধিকার, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা—সবকিছুরই হুমকি তৈরি হয়েছে। আর সেই কারণেই ‘সংবিধান বাঁচাও’ কর্মসূচিকে সামনে এনে তাঁরা জনসচেতনতা তৈরি করতে চেয়েছেন। দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, “সংবিধান আমাদের জাতির ভিত্তি। আজ যখন এই ভিত্তিকে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে, তখন কংগ্রেস চুপ থাকতে পারে না। যুব কংগ্রেসের এই কর্মসূচি দেখিয়ে দিল, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এখনও সংবিধানের পক্ষে কথা বলতে জানে।
” মিছিল থেকে আরও শোনা যায়, “আজ দেশের প্রশাসনিক কাঠামোকে ভেঙে দিয়ে একনায়কতন্ত্র কায়েম করার চেষ্টা চলছে। বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা, সংসদের মর্যাদা, সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা—সবই আজ প্রশ্নের মুখে। সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাও যেন হরণ করে নেওয়া হয়েছে। তাই এই অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর বার্তা নিয়ে আমরা মশাল হাতে পথে নেমেছি।” এই মশাল মিছিলকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও যথেষ্ট কৌতূহল দেখা দেয়। অনেকেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে এই মিছিলকে উৎসাহ দেন। কিছু দোকানদার তাঁদের দোকানের সামনের আলো নিভিয়ে দিয়ে মশালের আলোকে সম্মান জানান। শহরের প্রবীণ নাগরিক বিজয়বাবু বলেন, “আজকের এই সময়টাতে যখন সবাই চুপচাপ, তখন এই ছেলেমেয়েগুলো পথে নেমে যে বার্তা দিল, তাতে আশা জাগে।
সংবিধান বাঁচাতে হলে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে।” স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল। শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল শেষ হয় ভগৎ সিং মোড়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে। সেখানে যুব কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, আগামী দিনে জেলার বিভিন্ন অংশে এমন আরও কর্মসূচি নেওয়া হবে, যাতে সাধারণ মানুষ সংবিধান সম্পর্কে আরও সচেতন হন। উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সম্প্রতি সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দাবিতে বিরোধী দলগুলি সক্রিয় হয়েছে। পেগাসাস কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে কৃষি আইন, সিএএ-এনআরসি, বিচারব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ—এই সমস্ত ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে যুব কংগ্রেসের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের সচেতনতা মূলক কর্মসূচি মানুষের মধ্যে গণতন্ত্রের মূল্যবোধ বজায় রাখতে সহায়ক। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা সাংবাদিক অতনু ঘোষ বলেন, “যখন রাজনৈতিক দলের আন্দোলন ব্যক্তিস্বার্থ কিংবা নির্বাচনী কৌশলের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে, তখন যুব কংগ্রেসের মতো সংগঠনের এমন বার্তামূলক মিছিল এক নতুন দিশা দেখায়।” পাশাপাশি, সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই মিছিলের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে দ্রুতগতিতে। নেটিজেনরা বলছেন, “এটাই সময়, যখন পথে নামা দরকার। আর সংবিধানই আমাদের অস্ত্র।” এই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে, তা এখনই বলা মুশকিল। কিন্তু যেভাবে একটি ছোট উদ্যোগ শহরবাসীর মন ছুঁয়েছে, তাতে স্পষ্ট, গণতন্ত্র এবং সংবিধান আজও সাধারণ মানুষের ভাবনার কেন্দ্রে রয়েছে। যুব কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুধু মিছিল নয়, তাঁরা জেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গিয়ে সংবিধানের বিভিন্ন ধারার উপর সচেতনতামূলক আলোচনাসভারও আয়োজন করবেন। তারা চান, তরুণ প্রজন্ম সংবিধানকে শুধু পাঠ্যপুস্তকের বিষয় হিসেবে না দেখে, নিজেদের জীবনের মূল অংশ হিসেবে মেনে চলুক। সব মিলিয়ে বলা যায়, সোমবার আসানসোল শহরের রাস্তায় যে আগুন জ্বলেছিল তা শুধু প্রতিবাদের নয়, আশারও। আশার যে এখনও তরুণ প্রজন্ম সমাজ, রাষ্ট্র, এবং নাগরিক অধিকার নিয়ে ভাবছে, পথে নামছে, আর “সংবিধান বাঁচাও” কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে এক নতুন দেশের স্বপ্ন দেখছে।