The ‘king of the forest’ is busy watching football instead of hunting!:জঙ্গল মানেই ভয়, হিংস্রতা, প্রাণহানির আশঙ্কা, আর তারই মাঝে রাজত্ব করে যে প্রাণীটি, তাকে আমরা সবাই চিনি ‘বনের রাজা’ নামে—সিংহ। সেই সিংহ যদি হঠাৎ শিকারের বদলে খেলায় মন দেয়, আর তাও আবার ফুটবল ম্যাচ দেখতে গিয়ে মাঠের ধারে শান্তভাবে বসে পড়ে, তাহলে কি অবাক লাগবে না? অবিশ্বাস্য লাগলেও এমনই এক ঘটনা ঘটেছে আফ্রিকার গভীর জঙ্গলে, যেখানে সিংহকে দেখা গেছে নিরীহভাবে কচিকাঁচাদের ফুটবল খেলা উপভোগ করতে। এই অদ্ভুত ও মন ছুঁয়ে যাওয়া ঘটনার একটি ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে ইনস্টাগ্রামে ‘safariz’ নামক একটি জনপ্রিয় ওয়াইল্ডলাইফ পেজে, যেখানে দেখা যাচ্ছে একটি সিংহ মাঠ থেকে কিছুটা দূরে একটি গাছতলায় চুপ করে বসে রয়েছে, আর সামনে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দৌঁড়ে, চেঁচিয়ে, হাসিমুখে ফুটবল খেলছে। আশ্চর্যজনকভাবে সিংহটি একটুও আক্রমণাত্মক নয়, বরং যেন পাখির চোখে ম্যাচের দিকে তাকিয়ে রয়েছে—এই মুহূর্তটি দেখে রীতিমতো চমকে গিয়েছেন নেট নাগরিকরা, এবং সৃষ্টি হয়েছে হাজারো মজার মন্তব্য আর কৌতুক। কেউ লিখেছেন, “সিংহরাও মেসির ভক্ত!”, কেউ লিখেছেন, “এটিই হলো বাস্তবের সিংহা: শান্ত, ধৈর্যশীল, স্পোর্টসম্যান!” ভিডিওটি ২০ লক্ষেরও বেশি ভিউ পেয়েছে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই, আর কমেন্ট বক্সে ভরে উঠেছে বিশ্বজোড়া মুগ্ধতা ও কৌতুকের ঢল। যদিও ভিডিওটির সত্যতা যাচাই এখনো করা সম্ভব হয়নি, এবং ‘খবর বাংলা’ তার উৎস যাচাই না করেই এর স্বতঃসিদ্ধতা মেনে নিচ্ছে না, তবুও এই দৃশ্যটি মন ছুঁয়ে গেছে সবার।
ঘটনা যেহেতু আফ্রিকার কোনও জঙ্গলের, তাই ধরে নেওয়া যায় এটি হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকা বা কেনিয়ার কোনও সংরক্ষিত এলাকায় ঘটেছে, যেখানে সাফারি চলাকালীন সিংহদের মানবিক বা অপ্রত্যাশিত আচরণ মাঝে মাঝেই ক্যামেরাবন্দি হয়। ভিডিওটি যেভাবে ভাইরাল হয়েছে, তা প্রমাণ করে নেট দুনিয়া শুধু সংবাদ নয়, এমন ব্যতিক্রমী আবেগময় মুহূর্তগুলিকেও কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখে। এই ঘটনার সমাজিক প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ—মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সহাবস্থানের বার্তা এখানে স্পষ্ট, যদিও বাস্তবিক অর্থে এই ধরনের মুহূর্ত খুবই দুর্লভ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। পশু আচরণ বিশারদ ডঃ হেমন্ত চক্রবর্তী জানান, “সিংহরা সাধারণত সপ্রতিভ এবং আক্রমণাত্মক, তবে কিছু পরিস্থিতিতে তারা কৌতূহলী হয়ে উঠে—যেমন কোনো নতুন শব্দ, আলো বা চলাফেরা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সম্ভবত ফুটবলের শব্দ, দৌড়ঝাঁপ ও খেলোয়াড়দের মজা দেখে সেটি একটি নিরীহ কৌতূহল থেকে মনোযোগ দিয়েছে। এটি এক ধরনের বুদ্ধিমত্তারও প্রতিফলন।” তিনি আরও বলেন, “এটা ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে সিংহ হিংস্র প্রাণী, এবং তাদের কাছ থেকে এইরকম মধুর আচরণ আশা করাটা সর্বদা নিরাপদ নয়।” তবে ঘটনা বা ভিডিও সত্য হোক না হোক, মানুষের মনের ভেতরে একটা আশার আলো তো জাগিয়েই তুলেছে—জীবনের মধুরতা এমন জায়গা থেকেও প্রকাশ পেতে পারে, যেখান থেকে সাধারণত আমরা শুধু হিংস্রতা কল্পনা করি।
ফুটবল খেলতে ব্যস্ত ছেলেমেয়েদের মাঝে এই মুহূর্তটা যেন এক মানবিক অধ্যায় রচনা করেছে। স্থানীয় সমাজে যদি এমন ঘটনা সত্যিই ঘটে, তবে তা শুধু বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নয়, পরিবেশ শিক্ষা ও শিশুদের সাহসিকতাতেও একটা শক্ত বার্তা দিতে পারে। এই ঘটনার ছবিগুলি দেখে আফ্রিকার বিভিন্ন সাফারি ট্যুর কোম্পানিগুলিও ভিডিওটির ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছে, কারণ এই ধরনের ব্যতিক্রমী ভিডিও তাদের পর্যটনকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে সাহায্য করে। ইতিমধ্যে আফ্রিকান মিডিয়াতেও এই ঘটনা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। ‘নাইরোবি নিউজ’ এক রিপোর্টে জানিয়েছে, “জীবজগৎ আমাদের যতটা ভাবায়, ততটাই চমকেও দেয়। সিংহের এই ফুটবল প্রেম তার প্রমাণ।” অনেকে আবার প্রশ্ন তুলেছেন ভিডিওটি কি সত্যিই বাস্তব নাকি AI অথবা CGI ব্যবহার করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো পর্যন্ত এটির মধ্যে স্পষ্ট কোনো ‘এডিটিং ট্রেস’ পাওয়া যায়নি। আবার কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, যদি মানুষ এই ধরনের মুহূর্তকে অতিরিক্ত রোমান্টিসাইজ করে, তাহলে বাস্তবে সিংহের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা বাড়তে পারে, যা বিপজ্জনক। ভিডিওটি ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক, আনন্দ ও কৌতুক—সব মিলিয়ে এটি এখন একটি ইন্টারনেট সেনসেশন। আর আমরা যারা জঙ্গলের কথা শুনলেই গায়ে কাঁটা দিই, তাদের জন্য এই ভিডিও যেন এক অনন্য শিক্ষা—সবচেয়ে হিংস্র বলেই সব সময় হিংস্র আচরণ করতে হবে, তা কিন্তু নয়।