CID summons Arjun Singh’s son-in-law : রাজনৈতিক উত্তাপের আঁচ যেন ক্রমশই বাড়ছে বাংলার রাজনীতিতে, আর সেই উত্তাপের কেন্দ্রবিন্দুতে ফের উঠে এলেন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ ও হেভিওয়েট বিজেপি নেতা অর্জুন সিং। কো-অপারেটিভ দুর্নীতির মামলায় যেখানে এর আগেই একাধিকবার অর্জুন সিংকে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে, এবার সেই কেলেঙ্কারির সূত্রেই তলব করা হয়েছে তাঁর জামাইকে। রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি তাকে আগামী ৫ মে ভবানী ভবনে হাজিরা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। আর এখানেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা, শাসক বনাম বিরোধীর চাপানউতোর, এবং জনমানসে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন—এই তলব কি নিছকই আইনি প্রক্রিয়া, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অদৃশ্য ছায়া?
ব্যারাকপুর-ভাটপাড়া অঞ্চলে কো-অপারেটিভ দুর্নীতির অভিযোগ বহুদিন ধরেই চর্চার কেন্দ্রে। অভিযোগ অনুযায়ী, স্থানীয় কিছু কো-অপারেটিভ সংস্থায় লক্ষ লক্ষ টাকার আর্থিক অনিয়ম হয়েছে, যেখানে জমির রেকর্ড, লোন, এবং সদস্যপদ নিয়েও ঘনিষ্ঠ মহলে উঠেছে অসঙ্গতির অভিযোগ। এই মামলায় আগে থেকেই অর্জুন সিং-এর নাম জড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে প্রশাসন, যদিও তিনি বারবার তা অস্বীকার করে বলেছেন, “এই মামলার সঙ্গে আমার বা আমার পরিবারের কোনও প্রত্যক্ষ যোগ নেই। আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেনস্থা করার জন্যই এসব করা হচ্ছে।” এবার তাঁর জামাইকে তলব করায় আরও জোরালোভাবে মুখ খুললেন অর্জুন সিং। তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার পরিবারকে নিশানা করে আমাকে চমকাতে চাইছেন। কিন্তু আমি জানিয়ে দিচ্ছি, এইভাবে আমাকে থামানো যাবে না।”
সিআইডির তরফে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের খুঁটিনাটি প্রকাশ করা না হলেও সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ভাটপাড়া-নৈহাটি এলাকার একটি কো-অপারেটিভ হাউসিং প্রোজেক্টের সঙ্গে অর্জুন সিং-এর জামাইয়ের আর্থিক লেনদেন ও ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সেই সূত্র ধরেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে। তবে বিরোধীরা একে রাজনৈতিক চক্রান্ত বলেই দাবি করছে। বিজেপির উত্তর ২৪ পরগনার সভাপতি একরামুল হক জানিয়েছেন, “যেখানে ক্ষমতায় নেই, সেখানেই শাসক দল প্রশাসনের হাত ব্যবহার করে বিরোধী নেতৃত্বকে কোণঠাসা করতে চাইছে। অর্জুন সিং যে অঞ্চলে ভোটে প্রভাব ফেলতে পারেন, তাই তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে টার্গেট করা হচ্ছে।”
এই ঘটনায় ব্যারাকপুর-ভাটপাড়া এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। একদিকে বিজেপির কট্টর সমর্থকরা একে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলেই মনে করছেন, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ এই দুর্নীতি মামলার স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন। ভাটপাড়া বাজার এলাকার এক ব্যবসায়ী শ্যামল দাস বলেন, “আমরা চাই প্রকৃত তদন্ত হোক। যাঁরাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকুন না কেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা হোক। কিন্তু সেটাকে যেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় রূপ না দেওয়া হয়।”
স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই তদন্তের জেরে উত্তর ২৪ পরগনার রাজনীতিতে একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অর্জুন সিং যদিও ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে সরাসরি লড়েননি, কিন্তু তাঁর সংগঠনগত প্রভাব এখনও ব্যারাকপুর এলাকায় দৃশ্যমান। তাঁর জামাইকে তলব করা মানে, রাজনৈতিকভাবে তাঁকে কোণঠাসা করার চেষ্টা হতে পারে—এমন আশঙ্কা অনেকের মনেই তৈরি হয়েছে। তবে অনেকেই আবার বলছেন, যদি দুর্নীতির কোনও যোগসূত্র থাকে, তবে তা তদন্ত হওয়া জরুরি।
অন্যদিকে, শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “তদন্তকারী সংস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করছে। কেউ যদি দোষী না হন, তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অর্জুন সিং বরং জনসমক্ষে এসে সমস্ত তথ্য পেশ করুন।”
এদিকে ভবানী ভবনের নোটিশ পাওয়ার পর অর্জুন সিং-এর পরিবারেও চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তবে জামাই এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পরবর্তী পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সাংবাদিক মহলে আলোচনা, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আগামী কয়েকদিনেই রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনার পারদ চড়তে পারে। লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের আগে যদি এই মামলার মোড় অন্যদিকে ঘুরে যায়, তবে তা বিজেপির নির্বাচনী প্রচারেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আবার, প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি কোনও দৃঢ় প্রমাণ উঠে আসে, তাহলে তৃণমূল এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে বিজেপিকে আক্রমণ করতে পারে।
সার্বিকভাবে, এই ঘটনার অভিঘাত রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক ক্ষেত্রেও পড়ছে। কারণ, সাধারণ মানুষ দুর্নীতির বিচার চাইলেও রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি অভিযোগে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তাই সবার দাবি, সত্য উদঘাটিত হোক, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়—সত্যিকারের বিচারেই ফিরুক মানুষের আস্থা।