Sukantar calls Adrit on the phone for the first time in Madhyamik:রায়গঞ্জ করোনেশন হাই স্কুলের ছাত্র অদৃত সরকার এবারের মাধ্যমিকে প্রথম স্থান অধিকার করায় যেমন একদিকে গর্বে গর্বিত তাঁর পরিবার, স্কুল এবং জেলা, তেমনই গোটা রাজ্যবাসীর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে এক অনাবিল আনন্দ। এই বিজয় শুধু একজন ছাত্রের নয়, এটি একটি গোটা শিক্ষাগত পরিকাঠামোর সাফল্যের প্রতিচ্ছবি, যা আজ আবারও প্রমাণ করল – সৎ চেষ্টা, অধ্যবসায় এবং দৃঢ় মনোভাব থাকলে যেকোনো সাফল্যই সম্ভব। আর সেই সাফল্যের স্বীকৃতি দিতে দেরি করলেন না রাজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মুখ – রাজ্য বিজেপি সভাপতি ও বালুরঘাটের সাংসদ ডঃ সুকান্ত মজুমদার। ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে তিনি শুভেচ্ছা জানালেন অদৃত সরকারকে, আর এই ঘটনাই হয়ে উঠল আজকের সবচেয়ে আলোচিত মুহূর্ত।
সুকান্ত মজুমদার নিজেও উত্তরবঙ্গের সন্তান হওয়ায়, রায়গঞ্জের মতো শহর থেকে এমন একজন মেধাবী ছাত্রের উঠে আসাকে তিনি এক বিশেষ বার্তা হিসেবে দেখছেন। ফোনে অদৃতকে তিনি বলেন, “তুমি শুধু তোমার পরিবার নয়, গোটা উত্তরবঙ্গ এবং বাংলা রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করেছো। তোমার ভবিষ্যৎ যেন আরও উজ্জ্বল হয়, এই কামনা করি। তোমার এই সাফল্য আগামী প্রজন্মকে আরও অনুপ্রাণিত করবে।”
অদৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভীষণ মনোযোগী অদৃত। মা সুদীপ্তা সরকার এবং বাবা অরুণাভ সরকার, যাঁরা দুজনেই রায়গঞ্জে থাকেন, তাঁদের মুখে গর্বের ছাপ স্পষ্ট। মা বলেন, “ও কখনও কোনও টিউশনে যায়নি। স্কুল আর বাড়িতেই পড়াশোনা করেছে। নিজের মতো করে পড়েছে, নিজের মতো করে রুটিন বানিয়ে নিয়েছে। আমরা শুধু পাশে থেকেছি।”
করোনেশন স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৌশিক বসু জানিয়েছেন, “অদৃত আমাদের স্কুলের গর্ব। ওর ফলাফল শুধু আমাদের নয়, গোটা জেলার শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নতির প্রমাণ। আমরা চাই আগামী বছরগুলোতে আরও ছাত্র এমন কৃতিত্ব অর্জন করুক।”
এই সাফল্য রায়গঞ্জের মতো এক আধা-শহরীয় অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার ভিতকে আরও মজবুত করল। কারণ, বহু সময়ে অভিযোগ ওঠে যে বড় শহর এবং রাজ্যের রাজধানীর বাইরে পড়ুয়ারা পিছিয়ে থাকে পরিকাঠামোর কারণে। কিন্তু অদৃত প্রমাণ করে দিলেন, পরিকাঠামোর ঘাটতি থাকলেও চেষ্টা থাকলে কিছুই অসম্ভব নয়।
অদৃতের এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে স্থানীয় প্রশাসনও তার বাড়িতে গিয়ে তাকে সংবর্ধনা জানিয়েছে। রায়গঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান বলেন, “এই সাফল্য শুধু একজন ছাত্রের নয়, এটি একটি গোটা শহরের সম্মান। আমরা চাই ও ভবিষ্যতে আইআইটি বা আইএএস-এর মতো পরীক্ষায়ও নাম করুক।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় অদৃতের ছবি ও নাম এখন ভাইরাল। ‘#অদৃত_সরকার’, ‘#রায়গঞ্জের_গর্ব’, ‘#মাধ্যমিকে_প্রথম’, ‘#অদম্য_মেধা’ – এই হ্যাশট্যাগগুলি নিয়ে চলছে চর্চা। বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও অদৃতকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

একদিকে সুকান্ত মজুমদারের ফোন কল যেমন অদৃতের মনোবল অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে, তেমনই রাজনৈতিক মহলেও এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, রাজ্যের শাসক দলের বাইরের কোনও নেতা যখন সরাসরি ছাত্রকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানান, তখন তা নিঃসন্দেহে এক ইতিবাচক বার্তা বহন করে।
অদৃত নিজে বলেছেন, “আমি স্যরদের এবং বাবা-মাকে ধন্যবাদ জানাই। আমার স্বপ্ন ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। আমি চাই সবাই আমাকে দেখে অনুপ্রাণিত হোক।”
এই ঘটনার ভবিষ্যৎ প্রভাব যেমন অদৃতের নিজের ভবিষ্যতের ওপর পড়বে, তেমনই রায়গঞ্জ ও উত্তরবঙ্গের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এই খবর নতুন করে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার উৎসাহ জোগাবে। শিক্ষাক্ষেত্রে এমন সাফল্য বহুবার রাজনৈতিক এবং সামাজিক বার্তা দেয় – যা শুধু পরীক্ষার ফলাফল নয়, বরং একটি গোটা সমাজকে শিক্ষার আলোর দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের শিক্ষা দপ্তরের একজন আধিকারিক জানান, “আমরা অদৃতের এই সাফল্যে আনন্দিত। আগামী দিনে এদের মতো কৃতী ছাত্রছাত্রীদের জন্য আরও স্কলারশিপ এবং গাইডেন্স প্রোগ্রাম চালুর চিন্তা ভাবনা চলছে।”
এই একটি ফোনকল, একটি ফলাফল, একটি ছাত্রের কঠিন পরিশ্রম – সব মিলিয়ে গড়ে তুলল এক সাফল্যের কাহিনি। রায়গঞ্জ আজ গর্বিত, অদৃত আজ এক নাম, এক অনুপ্রেরণা।