Three out of top 10 in Narendrapur Ramakrishna Mission in Madhyamik:-বাংলার শিক্ষা জগতে ফের একবার গর্বের সঞ্চার করল নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়। এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে রাজ্যের প্রথম দশজন মেধাবীদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান থেকে তিনজন ছাত্র। এই তিনজন ছাত্রের অসাধারণ কৃতিত্ব শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের নয়, বরং গোটা বাংলার শিক্ষাব্যবস্থার সাফল্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। পঞ্চম স্থানে রয়েছে দুজন—চৌধুরী মোহাম্মদ আসিফ ও সোম তীর্থ করণ, দুজনেই ৬৯১ নম্বর পেয়ে রাজ্যের মেধা তালিকায় সমান স্থানে পৌঁছেছে। অষ্টম স্থানে রয়েছেন পুষ্পক রত্নম, যিনি বিহারের বাসিন্দা হলেও নরেন্দ্রপুরের মতো এক গুরুসংঘের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠেছেন এবং আজ নিজের নাম দেশের মেধাতালিকায় তুলে ধরেছেন। শুধু পড়াশোনা নয়, নৈতিক শিক্ষা, আত্মনিবেদন ও শৃঙ্খলার আদর্শেও তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে। পুষ্পকের কথায়,

“আমার এই ফলাফলের পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে আমার পরিবারের, শিক্ষকদের এবং মিশনের গঠনমূলক পরিবেশের। এখানে আমরা শুধু বই পড়ি না, মানুষ হতে শিখি।” ভবিষ্যতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় সে এবং দেশের বিজ্ঞানভিত্তিক উন্নয়নে নিজের অবদান রাখতে চায়। উল্লেখযোগ্যভাবে, পুষ্পক সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগাঁও হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে এবং জানিয়েছে, “এই ধরনের বর্বর হামলা আমাদের জাতীয় সত্তাকে চ্যালেঞ্জ করে। এর পাল্টা আমরা অবশ্যই চাই।” এই কথাগুলি তার দেশপ্রেম এবং সামাজিক সচেতনতার পরিচয় বহন করে। অন্যদিকে, আসিফ এবং সোম তীর্থ নিজেদের এই সাফল্যে আনন্দিত হলেও যথেষ্ট সংযত, তাঁরা জানিয়েছেন,
“মিশনের নিয়মিত রুটিন, ধ্যান, পড়াশোনার সময় নির্ধারণ এবং জীবনদর্শন আমাদের মানসিকভাবে তৈরি করে। আমরা কৃতজ্ঞ আমাদের শিক্ষক ও আশ্রমের সকলের প্রতি।” এই সফলতা যে হঠাৎ করে আসেনি, তা বোঝা যায় তাঁদের রোজকার রুটিন থেকেই—ভোর পাঁচটায় উঠে ধ্যান, তারপর পড়াশোনা, মধ্যাহ্নভোজের পর কিছু বিশ্রাম এবং আবার পড়াশোনা—সবটাই এক সুসংগঠিত পরিবেশে। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষা ও মানবিকতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে রয়েছে। শ্রীমৎ স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান শুধু পরীক্ষার নম্বর নয়, একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ গড়ে তোলার চেষ্টায় বিশ্বাসী। এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান প্রধান মহারাজ বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য শুধু পাস করানো নয়, জীবনে সৎ, পরিশ্রমী ও সমাজসচেতন নাগরিক তৈরি করা। আজ এই ফলাফল আমাদের সেই দিকেই এগিয়ে চলার প্রমাণ।” স্থানীয়দের মধ্যেও এই খবর নিয়ে চরম উত্তেজনা—অনেকেই বলেন,

“আমরা জানতাম মিশন থেকে ভালো রেজাল্ট হবে, কিন্তু তিনজন একসাথে প্রথম দশে আসবে, এটা সত্যিই অভাবনীয়।” অভিভাবকদের মধ্যেও খুশির হাওয়া, অনেকেই বলছেন এই প্রতিষ্ঠান শুধু পড়াশোনা শেখায় না, সন্তানদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। রাজ্য শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ধরনের ফলাফল রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং ছাত্রছাত্রীদের প্রতি এক ধরনের নতুন আশাবাদ তৈরি করে। পাশাপাশি, বহু অভিভাবক এখন থেকেই সন্তানকে নরেন্দ্রপুর মিশনের মতো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির চেষ্টা শুরু করেছেন। এমন সাফল্যের ছায়ায়, আগামী দিনে মিশনের প্রতি মানুষের আস্থা আরও গভীর হবে তা বলাই যায়। তবে এই সফলতার পাশাপাশি এই ছাত্রদের সামনে এখন একটি বড় দায়িত্বও আছে—নিজেদের এই কৃতিত্বকে দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে কাজে লাগানো। আমরা আশা করি, এই তরুণ মেধাবীরা আগামী দিনে ডাক্তার, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, সমাজকর্মী বা যে যাই হোক না কেন, তাঁরা তাঁদের চরিত্র ও মূল্যবোধ দিয়ে সমাজের প্রকৃত নায়ক হবেন। এমন এক সময়ে, যখন সারা দেশে বিভাজন, সহিংসতা এবং অবিশ্বাসের বাতাবরণ ছড়াচ্ছে, তখন নরেন্দ্রপুর মিশনের মতো প্রতিষ্ঠান এবং এর ছাত্রদের এই সাফল্য যেন এক আলো হয়ে ওঠে, যা ভবিষ্যতের প্রজন্মকে পথ দেখাবে।