Hurriyat involved in Pahelgam attack? NIA’s operation reveals big clue:কাশ্মীরের পেহলগাম হামলার পর দেশজুড়ে যেভাবে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, সেই একই সঙ্গে জাতীয় তদন্ত সংস্থা অর্থাৎ এনআইএ-এর একের পর এক অভিযানে যেভাবে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে, তাতে গোটা ঘটনার পেছনে আরও গভীর চক্রান্তের ইঙ্গিত স্পষ্ট হচ্ছে। ২২ এপ্রিল পেহলগামের এক জনপ্রিয় পর্যটন অঞ্চলে যে নৃশংস সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানো হয়েছিল, সেখানে ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের মৃত্যু এবং বহুজনের আহত হওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ। তখন থেকেই কেন্দ্র সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনী কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করে, আর তারই অংশ হিসেবে এনআইএ একাধিক সন্দেহভাজন, জঙ্গি এবং নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যদের উপর নজরদারি শুরু করে। এবার সেই তদন্তে উঠে এসেছে বিস্ফোরক তথ্য—এই হামলার পেছনে হুররিয়ত এবং জামাত-এ-ইসলামির মত সংগঠনগুলির ‘ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কার্স’-দের বড় ভূমিকা ছিল বলে ইঙ্গিত দিয়েছে এনআইএ।
সূত্র অনুযায়ী, এনআইএ গত ৪৮ ঘণ্টায় জম্মু-কাশ্মীরের নানা প্রান্তে ৩০টিরও বেশি জায়গায় অভিযান চালিয়ে কয়েকটি স্যাটেলাইট ফোন, ল্যাপটপ, পেনড্রাইভ, দেশবিরোধী লিফলেট, বিদেশি মুদ্রা এবং কিছু কাগজপত্র উদ্ধার করেছে, যেগুলির সঙ্গে সরাসরি পাকিস্তান-ঘনিষ্ঠ সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির সংযোগ রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এমনকি হুররিয়তের কয়েকজন সদস্য এবং জামাত-এ-ইসলামির নিষিদ্ধ নেটওয়ার্কের একাধিক সক্রিয় কর্মী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলেই মনে করা হচ্ছে। এই সমস্ত সংগঠনের কিছু লোকজন সরাসরি এই জঙ্গিদের থাকার জায়গা, অস্ত্র মজুত রাখা এবং যাতায়াতের জন্য সহযোগিতা করেছিল। এমনকি হামলার আগে রেকি করতেও সহায়তা করেছে বলে দাবি তদন্তকারী আধিকারিকদের।
NIA-এর এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা এই হামলার পেছনে জড়িত একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্কের সন্ধান পেয়েছি। এদের মধ্যে কিছু ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কার্স (OGWs) এমন ছিল, যারা দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশে এই নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছিল। আমরা ইতিমধ্যে ২০ জনেরও বেশি সন্দেহভাজনের সন্ধান পেয়েছি, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য যেটা সামনে এসেছে তা হল—সন্ত্রাসবাদীদের একটি দল ১৫ এপ্রিল পেহলগামে প্রবেশ করেছিল এবং তাদের মূল লক্ষ্য ছিল পেহলগাম ছাড়াও আরও তিনটি পর্যটন কেন্দ্র—আরু ভ্যালি, এমিউজমেন্ট পার্ক এবং বেতাব ভ্যালি। কিন্তু কাশ্মীর পুলিশের তৎপরতা এবং সেনার যৌথ নিরাপত্তা বলয় তাদের সেই পরিকল্পনা সফল হতে দেয়নি। তবে পেহলগামে তারা যে সন্ত্রাসের নৃশংস রূপ দেখিয়েছে, তা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
এই ঘটনার পেছনে যেভাবে কাশ্মীরের তথাকথিত স্বাধীনতাপন্থী সংগঠনগুলোর হাত থাকছে, তাতে রাজনৈতিক মহলও উত্তাল। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এই বিষয়ে মুখ খুলে বলেন, “এখন সময় এসেছে যে সমস্ত নিষিদ্ধ সংগঠন এবং তাদের ছায়া সংগঠনগুলিকে একযোগে নির্মূল করতে হবে। দেশের নিরাপত্তা ও জনগণের বিশ্বাসই সবথেকে বড়।” অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “কাশ্মীরে সন্ত্রাসের শেষ মুহূর্ত চলছে। যারা এই হামলায় জড়িত, তাদের কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানিয়েছেন, সম্প্রতি এলাকায় কিছু অচেনা লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়েছিল, তবে তারা নিরাপত্তা বাহিনীকে সে বিষয়ে কিছু জানায়নি। এক বাসিন্দা জানান, “আমরা ভাবিনি যে ওরা এমন কিছু করতে পারে। ওরা বাইরের লোক বলে মনে হয়েছিল, কিন্তু এত বড় হামলার প্ল্যান ছিল সেটা জানলে আগেই পুলিশকে জানাতাম।”
এই হামলা ও তদন্তের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার এবং সেনাবাহিনী আরও বেশি করে নজর দিতে শুরু করেছে সীমান্ত অঞ্চলে, বিশেষত যেসব জায়গা দিয়ে অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে। সামনের মাসেই একটি উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠকে এই গোটা ঘটনার পুনর্মূল্যায়ন হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ঘটনার রাজনৈতিক প্রভাবও সুদূরপ্রসারী। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ ফের মাথাচাড়া দিলে, তা দেশজুড়ে ভোট রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মনে এই ঘটনার গভীর প্রভাব পড়েছে—বিশেষ করে যারা পরিবারসহ কাশ্মীর ভ্রমণে যাচ্ছিলেন বা যেতে চাইছেন, তাদের মধ্যে প্রবল নিরাপত্তাহীনতা ছড়িয়েছে।
এই মুহূর্তে এনআইএ, RAW ও IB একযোগে তদন্ত চালাচ্ছে এবং আশা করা হচ্ছে, আগামী দিনগুলিতে এই জঙ্গি চক্র এবং তার মদতদাতাদের বিরুদ্ধে বড়সড় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।