Urshola is walking around on a broomstick, viral video!:ফুচকা, বাঙালির অন্যতম প্রিয় স্ট্রিট ফুড। কিন্তু ভাবুন তো, সেই প্রিয় খাবারের উপর যদি ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় আরশোলা? চোখের সামনে যদি দেখা যায়, স্বচ্ছ কাচের বাক্সের ভেতরে সাজানো রয়েছে ফুচকা, আর তার মধ্যেই অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট আরশোলা? শুনেই গা ঘিনঘিন করছে তো? এমনই এক ঘটনা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের একটি জনপ্রিয় ও নামী রেস্তরাঁয়। এক ব্যক্তি ফুচকা খেতে গিয়ে আবিষ্কার করেন, বাক্সের মধ্যে রাখা ফুচকার ওপরে বেমালুম ঘুরে বেড়াচ্ছে একাধিক আরশোলা। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মোবাইল ফোনে গোটা দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেন এবং বিষয়টি রেস্তরাঁর এক কর্মীকে জানান। ভিডিওটি শেয়ার করেন সামাজিক মাধ্যমে এবং রবিবার সেই ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে শুরু হয়েছে বিতর্কের ঝড়।
ভিডিওটি দেখতে পেয়েই নেটদুনিয়ায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। কেউ কেউ লিখেছেন, “এ কেমন স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়!” আবার কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে মন্তব্য করেছেন, “একটা রেস্তরাঁ যদি এমন গাফিলতি করে, তাহলে আমাদের নিরাপদ খাবারের গ্যারান্টি কে দেবে?” আরও অনেকে সরাসরি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। যদিও এখনও পর্যন্ত স্থানীয় পুরসভা বা স্বাস্থ্যবিভাগের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এই ঘটনা স্বাস্থ্যের দিক থেকে যে এক গভীর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি কাচঘেরা ফুচকার বাক্সে একাধিক ছোট আকারের আরশোলা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই ভিডিও দেখে অনেকেই আতঙ্কিত, বিশেষ করে যাঁরা নিয়মিত ফুচকা খান বা পরিবার নিয়ে রেস্তরাঁয় খেতে যান। জনসাধারণের একাংশের দাবি, “এই ধরনের অব্যবস্থা জনস্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক। এমনিতেই রাস্তাঘাটে সাফাইয়ের অভাব, তার ওপর এই ধরনের খাবারে এমন সংক্রমণের আশঙ্কা থাকলে মানুষ কীভাবে নিশ্চিন্তে খাবার খাবে?”
অন্যদিকে এক স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ জানান, “যে কোনও খাদ্যদ্রব্যে আরশোলার সংস্পর্শ একাধিক রোগের কারণ হতে পারে। টাইফয়েড, ডায়ারিয়া, ফুড পয়জনিং ইত্যাদি সংক্রমণ ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এর থেকে দ্রুত প্রতিকার জরুরি।” একজন পরিবেশবিদের মতে, “শহরাঞ্চলে বেড়ে চলা পেস্ট কন্ট্রোলের ঘাটতি এবং খাদ্যব্যবস্থার গাফিলতির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে এই ঘটনায়। রেস্তরাঁ বা স্ট্রিট ফুড বিক্রেতাদের আরও সচেতন হওয়া উচিত।”
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর ‘খবর বাংলা’ সামাজিক মাধ্যমে অনুসন্ধান শুরু করে জানতে পারে, গাজিয়াবাদের ভাসুন্ধরা এলাকার একটি রেস্তরাঁতেই এই ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় একজন বাসিন্দা, মিসেস পূজা শর্মা বলেন, “এই রেস্তরাঁটি খুব জনপ্রিয়। প্রায় প্রতিদিন মানুষ এখানে এসে ফুচকা থেকে শুরু করে অন্যান্য স্ন্যাকস খান। এমন ভিডিও দেখে আমি চমকে গেছি। আমরা ভাবতেও পারিনি এমন কিছু ঘটতে পারে।”
রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষ যদিও এই ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে বর্ণনা করেছে এবং জানিয়েছে তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তবে ভিডিওটি সামনে আসার পর, তাঁদের ওপর জনরোষ বেড়েই চলেছে। অনেকেই বলছেন, কেবলমাত্র ক্ষমা চেয়ে এই ঘটনার নিষ্পত্তি হওয়া উচিত নয়, বরং যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনে রেস্তরাঁটি সাময়িক বন্ধ করা হোক এবং মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সংবাদমাধ্যমের তরফ থেকেও ভিডিওটি যাচাই করে দেখা হচ্ছে। ‘খবর বাংলা’ এই রিপোর্ট প্রকাশের সময় পর্যন্ত ভিডিওটির সত্যতা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি, তবে সামাজিক মাধ্যমে যে আলোড়ন তৈরি হয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না। ভিডিওটি ইতিমধ্যেই লক্ষাধিক মানুষ দেখে ফেলেছেন এবং হাজারের উপর শেয়ার হয়েছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারে।
এ ঘটনা একদিকে যেমন সাধারণ নাগরিকের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, অন্যদিকে খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিমালার বাস্তবায়ন নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। বর্তমানে দেশে ‘খাদ্য সুরক্ষা ও মান সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ (FSSAI)’ নামে একটি সংস্থা কাজ করছে। কিন্তু বাস্তবে তার নজরদারি কতটা কার্যকর, তা নিয়েই উঠছে নানা প্রশ্ন।
এই ঘটনার জেরে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে অন্যান্য জায়গাতেও। অনেকেই বলছেন, এটা যদি গাজিয়াবাদের মতো শহরে সম্ভব হয়, তাহলে কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি-সহ অন্যান্য মেট্রো শহরগুলিতে কী ঘটছে, তা নিয়েও তদন্ত হওয়া উচিত। একই সঙ্গে জনগণেরও সতর্ক হওয়া জরুরি — খাবার কেনার সময় চারপাশের পরিবেশ, পরিচ্ছন্নতা ও ব্যবস্থাপনায় নজর দেওয়া দরকার।
এই ঘটনার ভবিষ্যৎ প্রভাব কেবল ওই একটি রেস্তরাঁ বা শহরের সীমায় আটকে থাকবে না, বরং গোটা দেশের ফুড হাইজিন ব্যবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করবে। আশা করা যায়, প্রশাসন খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে রেস্তরাঁগুলির উপর কড়া নজরদারি চালাবে এবং নাগরিকদের জানাবে কীভাবে তারা নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারেন।