What are the rules and regulations at the Jagannath Temple in Digha? : দীঘার বুকে সমুদ্রের গর্জনের মাঝে এবার যেন দেবতাদের আশীর্বাদের এক অনন্য বাতিঘর হয়ে উঠতে চলেছে দীঘার নতুন জগন্নাথ মন্দির, আর এই নিয়ে গোটা বাংলায় এক অনাবিল উন্মাদনা বইছে, দীঘার সমুদ্রতট বরাবরই ভ্রমণপ্রেমীদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র, সেখানে এখন ধর্মীয় ভক্তি আর পর্যটন মিলেমিশে এক নতুন পরিচয় নিতে চলেছে এই জগন্নাথ মন্দিরের হাত ধরে, বিশেষ করে যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে উপস্থিত থেকে এই ঐতিহাসিক মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করবেন, তখন তার তাৎপর্য আরও বহুগুণ বেড়ে যায়, জানা গেছে, দীঘার এই জগন্নাথ মন্দির নির্মাণে অনুপ্রেরণা নেওয়া হয়েছে পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথ মন্দিরের আদল থেকে, তবে এক বড় পার্থক্য রেখেই এগিয়ে চলেছে এই মন্দিরের নীতি, যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য প্রবেশদ্বার খোলা থাকবে, অর্থাৎ, হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ বা অন্য যে কোনও ধর্মের মানুষ এখানে প্রবেশ করতে পারবেন এবং জগন্নাথ দেবের দর্শন লাভ করতে পারবেন, যা এক অভিনব সিদ্ধান্ত এবং সামাজিক সাম্যের এক শক্তিশালী বার্তা, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই একাধিক মঞ্চ থেকে জানিয়েছেন, ‘এটি কেবলমাত্র কোনও ধর্মের মন্দির নয়, এটি মানুষের মন্দির, এখানে কোনও বিভাজন থাকবে না’, এই মন্দির সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়মাবলী নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে ভক্তরা নির্বিঘ্নে এবং শৃঙ্খলিতভাবে দর্শন করতে পারেন, প্রথমত, মন্দিরে প্রবেশের জন্য
পর্যটকদের জুতো খুলতে হবে এবং নির্দিষ্ট প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকতে হবে, মন্দির চত্বরে কোনও ধরণের পলিথিন, প্লাস্টিক, ধূমপান বা মাদক দ্রব্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে, ভক্তরা মন্দির প্রাঙ্গণে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না, বিশেষ করে মন্দিরের মূল গর্ভগৃহে কোনও রকম ছবি তোলা বা ভিডিও করা যাবে না, নিরাপত্তার জন্য মন্দির প্রাঙ্গণে থাকবে নজরদারি ক্যামেরা এবং মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে থাকবে নিরাপত্তাকর্মী, দ্বিতীয়ত, মন্দিরে দৈনিকভাবে ৫৬ ভোগ নিবেদন করা হবে যা বিশেষভাবে দু’ভাগে বিভক্ত, সুক্কা (শুষ্ক ভোগ) এবং পাক্কা (রান্না করা ভোগ), এই ভোগগুলি মন্দির সংলগ্ন একটি আলাদা ভোগশালায় প্রস্তুত হবে, যেখানে বিশুদ্ধ উপায়ে রান্না করা হবে, মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন দীঘার জগন্নাথ মন্দিরে পুরীর খাজার পরিবর্তে থাকবে বাংলার নিজস্ব মিষ্টির আয়োজন, ফলে এখানে ভোগ হিসেবে থাকবে মুখরোচক প্যাঁড়া ও গজা, যা ইতিমধ্যেই স্থানীয় মিষ্টির দোকানগুলির জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে, বিশেষ দিনে যেমন রথযাত্রা, স্নানযাত্রা বা দীপাবলির সময় বিশেষ উৎসবমুখর পরিবেশ থাকবে এবং তখন প্রবেশের জন্য আলাদা কুপন ব্যবস্থা চালু করা হতে পারে ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য, এছাড়াও, বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য আলাদা প্রবেশ পথ এবং হুইলচেয়ার পরিষেবা রাখা হবে বলে জানা গেছে, প্রবেশের নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত, তবে উৎসবের দিনে সময় কিছুটা বাড়তে পারে, এছাড়া শিশু, প্রবীণ নাগরিক এবং মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা সারি থাকবে যাতে নির্বিঘ্ন প্রবেশ নিশ্চিত করা যায়, দীঘার স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ বিভাগ মিলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে, পুরীর মন্দিরের মত দীঘার এই মন্দিরেও থাকবে নিয়মিত সন্ধ্যা আরতি, যেখানে ভক্তরা সমুদ্রের হাওয়ায় দাঁড়িয়ে দেবতার সামনে দীপ্ত আরতির ঝলক দেখতে পারবেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা যেমন হোটেল-মোটেল মালিক, রেস্তোরাঁ ও ট্যাক্সি চালকরা এই মন্দিরকে ঘিরে নতুন

আশায় বুক বাঁধছেন, দীঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান অর্ণব দত্ত জানিয়েছেন, “দীঘার পর্যটন চেহারাই বদলে যাবে এই মন্দিরের হাত ধরে, প্রচুর দেশি-বিদেশি পর্যটক আসবেন এবং স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত হবে”, অপরদিকে, এক স্থানীয় বাসিন্দা বাপন জানা বলেন, “এমন উদ্যোগ সত্যি গর্বের, মন্দির শুধু ভক্তির জায়গা নয়, আমাদের সবার জন্য এক নতুন আশা”, পুরোহিত মহাসভা এবং স্থানীয় ধর্মীয় সংগঠনগুলিও এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এবং তাঁরা মনে করছেন এই মন্দির হতে চলেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির, তবে সাথে সাথে স্থানীয় প্রশাসন এও বলেছে, ভক্তদের মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে এবং কোনোরকম বিশৃঙ্খলা বা অশালীন আচরণ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, মন্দির উদ্বোধনের দিন বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় নিরাপত্তার জন্য কিছুক্ষণ রাস্তা বন্ধ রাখা হতে পারে এবং ভক্তদের যথাসম্ভব সহযোগিতা করতে অনুরোধ করা হয়েছে, সূত্রের খবর, এই মন্দির নির্মাণে যে পাথর ব্যবহার হয়েছে তা রাজস্থানের চিত্তোরগড় থেকে আনা হয়েছে এবং নির্মাণ কাজ তদারকি করেছেন ওড়িশার বিশিষ্ট মন্দির স্থপতি দল, ভেতরের অলংকরণে বাংলার লোকশিল্প এবং মিথিলার আঁচ পাওয়া যাবে, ফলে দীঘার জগন্নাথ মন্দির হবে এক অনন্য সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণের নিদর্শন, ভবিষ্যতে এখানে একাধিক উৎসব এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা আছে যা পর্যটনকে আরও ত্বরান্বিত করবে এবং দীঘার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে, সব মিলিয়ে দীঘার নতুন জগন্নাথ মন্দির কেবলমাত্র ভক্তির এক নতুন ঠিকানা নয়, এটি হয়ে উঠছে নতুন দীঘার হৃদস্পন্দন, যেখানে সমুদ্রের কলরবের সাথে মিশে থাকবে বিশ্বাসের মৃদু সুর।