BJP accuses Naren of coal theft:আসানসোলে আবারও রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়ালো কয়লা চুরি ইস্যুতে। সোমবার আসানসোল বিজেপির জেলা পার্টি অফিসে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন বিজেপির জেলা সভাপতি দেবতুনু ভট্টাচার্য এবং রাজ্য নেতা তথা প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তাঁদের সরাসরি অভিযোগ, পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং ঝাঁজরা প্রজেক্ট কোলিয়ারির জেনারেল ম্যানেজার মিলে সংঘবদ্ধভাবে কয়লা চুরির কাজে লিপ্ত হয়েছেন। দেবতুনু ও জিতেন্দ্র দু’জনেই জানান, এই অবৈধ কয়লা চুরির বিষয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেডের (ECL) চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টরের (CMD) কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হবে, পাশাপাশি দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারকেও বিষয়টি অবহিত করা হবে।
দেবতুনু ভট্টাচার্য বলেন, “পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়েও কয়লা চুরির র্যাকেট চালাচ্ছেন। মানুষের স্বার্থের কথা ভুলে গিয়ে নিজের স্বার্থে কয়লা ব্যবসার সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন।” অন্যদিকে, জিতেন্দ্র তিওয়ারি আরও সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, “কয়লা চুরির টাকা দিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলছে। আমরা এ নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে চলেছি।”
এই অভিযোগের পর রাজ্য রাজনীতিতে স্বাভাবিকভাবেই আলোড়ন তৈরি হয়েছে। যদিও এই বিষয়ে তৃণমূলের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে তৃণমূলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, “বিজেপি এখন মিথ্যা অভিযোগের আশ্রয় নিচ্ছে। পাণ্ডবেশ্বরের মানুষ জানেন কে কি কাজ করে। এসব নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি পাণ্ডবেশ্বর ও আশপাশের এলাকায় কয়লা চুরির অভিযোগ বাড়ছে। বিশেষ করে ছোট ছোট কোলিয়ারিগুলিতে, যেখানে নিয়মিত নজরদারির অভাব রয়েছে। এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দা জানিয়েছেন, রাতের অন্ধকারে কয়লার গাড়ি চলাচল অনেক বেড়ে গেছে, আর প্রশাসন নীরব দর্শক হয়ে রয়েছে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “প্রথমে দু’একটা ট্রাক দেখা যেত, এখন তো দিনে-রাতে কয়লার গাড়ির লাইন লেগে থাকে। আমরা বুঝতে পারছি বড়সড় কোনও অবৈধ কারবার চলছে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়লা চুরি ইস্যু বরাবরই পশ্চিম বর্ধমান জেলায় রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন আসার আগে এই ধরণের অভিযোগ অনেক সময় আরও তীব্র হয়ে ওঠে। তবে এইবার অভিযোগ এসেছে সরাসরি এক বিধায়কের বিরুদ্ধে, ফলে এই ঘটনা রাজনৈতিকভাবে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে, ইসিএল (ECL) কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “যদি লিখিত অভিযোগ আসে, আমরা যথাযথ তদন্ত করব। কেউ অবৈধভাবে কয়লা পাচার বা চুরির সাথে যুক্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশের তরফ থেকেও জানানো হয়েছে, বিষয়টি নজরে রয়েছে এবং প্রয়োজন হলে নিরপেক্ষ তদন্ত করা হবে। দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, “যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, আমরা কোনো রাজনৈতিক পরিচয় না দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।”
এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, কয়লা চুরির মতো গুরুতর অভিযোগে নিরপেক্ষ তদন্ত হোক, আবার কেউ বলছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই এই অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্বও পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, শুধু অভিযোগ করেই থেমে থাকবে না, প্রয়োজন হলে বড়সড় আন্দোলনের রাস্তাও বেছে নেবে। দেবতুনু ভট্টাচার্য বলেন, “পাণ্ডবেশ্বরের জনগণের টাকা লুট করে যারা ফায়দা তুলছে, তাদের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই চলবে।”
এদিকে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ইস্যু ভবিষ্যতে জেলা রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তা শুধু ব্যক্তি নয়, গোটা শাসক দলের ভাবমূর্তিতেও বড় ধাক্কা দিতে পারে। আর যদি অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলেও বিজেপির ওপরই পাল্টা চাপ আসবে রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের চেষ্টা করার জন্য।
এখন দেখার, আসানসোল-পাণ্ডবেশ্বর অঞ্চলে এই কয়লা চুরি বিতর্ক আগামী দিনে রাজনীতির কোন রং বদলায়।