Lakshmi Lakshmi Lakshmi Bhandar in Purba Medinipur:পূর্ব মেদিনীপুরের চন্ডিপুর পটুয়াপাড়া যেন এখন স্বপ্নের জায়গা। পটুয়া পরিবারের ঐতিহ্যবাহী পটশিল্প আজ নতুন রূপে নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে এক সাহসী অভিযানে নেমেছে। হরিচক, নানকারচক ও মুরাদপুর গ্রামের ১১৫টি পটুয়া পরিবার বিগত কয়েক বছর ধরেই নিজেদের ঐতিহ্যগত শিল্পকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রয়োজনীয়তার মোড়কে তুলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে। পটের গান ও চিত্রের সেই প্রাচীন রীতি আজও হৃদয়ে বয়ে চললেও, তাদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে মূল অস্ত্র হয়ে উঠেছে নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীর উপর পটচিত্রের নিপুণ প্রয়োগ। টি-শার্ট, শাড়ি, পাঞ্জাবি, কুর্তি, কাঠের ট্রে, ছাতা, জলপাত্র, এমনকি পেনদানি—সবখানেই এখন রঙিন পটচিত্রের ছোঁয়া।
কলকাতার ব্যাংক কর্মী রাজা নন্দীর কাছ থেকে লক্ষীর ভান্ডারের জন্য আসা বিপুল বরাত যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে এই শিল্পীদের জীবনে। আবেদ চিত্রকর ও সায়েরা চিত্রকরের উদ্যোগে গড়ে ওঠা কর্মশালা এখন শুধু পটশিল্পের নয়, পটুয়াপাড়ার রোজগারেরও কেন্দ্রবিন্দু। আবেদ চিত্রকর বলেন, “পটের গান শুনিয়ে পেট চলে না, তাই এখন সময়ের দাবি মেনে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসে পটশিল্প ফুটিয়ে তুলছি। তবেই পটশিল্প বাঁচবে, আমরাও বাঁচব।” তাঁর কথায়, শুধুমাত্র পটের গান পরিবেশন করে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে উঠেছে। বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী পটচিত্রের মাধ্যমে নানান সামগ্রী তৈরির কাজে শিল্পীরা মগ্ন। পটুয়াপাড়ার ১০-১২ জন শিল্পীর হাতে এখন কাজের ব্যস্ততা এতটাই যে খাওয়া-ঘুমের ফুরসত মিলছে না।

তাদের চোখে এখন নতুন স্বপ্ন—পটশিল্পের ঐতিহ্যকে বহন করে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে যাওয়ার। সমাজের নানা স্তরের মানুষ, বিশেষ করে লোকশিল্প প্রেমীরা এখন পটশিল্পকে আরও বেশি করে আপন করে নিচ্ছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের এই সাফল্য কেবল পটুয়াপাড়ার নয়, গোটা বাংলার লোকশিল্প সংস্কৃতির এক অনন্য জয়গাথা। প্রশাসন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকেও এ ধরনের প্রচেষ্টাকে আরও বেশি সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার দাবি উঠছে। কারণ এই শিল্পই বাংলার গর্ব। পটশিল্পীদের এই উদ্যোগ শুধু তাদের রুজিরুটি নয়, বাংলার মাটির গন্ধ মিশিয়ে তৈরি এক গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। আগামী দিনে চন্ডিপুর পটুয়াপাড়া হয়তো আরও বৃহত্তর শিল্পকেন্দ্রে পরিণত হবে, যেখানে পটশিল্পের রং ছড়িয়ে পড়বে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও।