Saturday, April 26, 2025
Google search engine
HomeUncategorised'জল বন্ধ করা যুদ্ধকে আমন্ত্রণ'ভারতের কঠোর পদক্ষেপে ক্ষুদ্র শেহবাজ শরিফ

‘জল বন্ধ করা যুদ্ধকে আমন্ত্রণ’ভারতের কঠোর পদক্ষেপে ক্ষুদ্র শেহবাজ শরিফ

‘Closing water is an invitation to war’: Shehbaz Sharif on India’s tough move : ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, করাচির গরম বাতাসে দুই দেশের মধ্যে ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের সূচনা হয়েছিল। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান, বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায়, এক চুক্তিতে সই করেছিলেন — যার নাম সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি। উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট, সিন্ধু নদ ও তার পাঁচটি উপনদী — ঝিলাম, চেনাব, রবি, শতদ্রু ও বিপাশা — এই সব নদীর জল দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে ভাগ করা। চুক্তি অনুযায়ী, ভারত শুধু ২০ শতাংশ জল ব্যবহার করতে পারবে, আর পাকিস্তান পাবে বিশাল ৮০ শতাংশ জল। প্রায় ৯ বছরের টানাপোড়েনের পর যে চুক্তি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে জলের শান্তির সেতু গড়েছিল, আজ সেই সেতুতে বড়সড় ফাটল ধরেছে।

সম্প্রতি ভারতের নেওয়া এক কঠোর পদক্ষেপ সেই পুরনো শান্তির চুক্তিতে ঝড় তুলেছে। ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সিন্ধু জলচুক্তির নিয়ম মেনে পাকিস্তানের ভাগের জল ব্যবহার নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ মুখ খুলে কড়া ভাষায় বলেছেন, “ভারত যদি পাকিস্তানের ভাগের জল বন্ধ করে দেয় বা দিক পরিবর্তন করে, তাহলে আমরা সেটিকে সরাসরি যুদ্ধের পদক্ষেপ হিসেবে দেখবো।” ইসলামাবাদে তড়িঘড়ি উচ্চ পর্যায়ের এক জরুরি বৈঠকও করেছেন শেহবাজ, যেখানে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর শীর্ষকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের পর পাকিস্তান একগুচ্ছ কঠোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে —

১. ভারত যদি সিন্ধু চুক্তি লঙ্ঘন করে, সেটিকে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য বলে ধরা হবে।
২. ভারতের সঙ্গে সমস্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিতের ইঙ্গিত দিয়েছে পাকিস্তান।
৩. সার্ক ভিসা প্রকল্প অনুযায়ী, সমস্ত ভারতীয় নাগরিকের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। শুধু মাত্র শিখ তীর্থযাত্রীদের জন্য ছাড় রাখা হয়েছে। বাকি ভারতীয়দের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৪. ইসলামাবাদে ভারতীয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর উপদেষ্টাদের ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’ ঘোষণা করা হয়েছে।
৫. ভারতের সঙ্গে সমস্ত ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করা হয়েছে।
৬. পাকিস্তান ভারতের সব বিমান সংস্থার জন্য তার আকাশপথ বন্ধ করার সিদ্ধান্তও বিবেচনা করছে।

এই ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আবার একেবারে চরমে পৌঁছেছে। সিন্ধু জলচুক্তি এতদিন দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মতো কাজ করছিল। ভারত আর পাকিস্তানের সম্পর্ক যতই খারাপ হোক না কেন, জল নিয়ে কখনও সরাসরি যুদ্ধের হুমকি আসেনি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভয়াবহ মোড় নিচ্ছে। ভারতের এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের জন্য বড়সড় ধাক্কা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তান ইতিমধ্যেই এক ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির অর্থনীতি নড়বড়ে, ডলার সংকট তীব্র, মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড ছুঁয়েছে। এর ওপর যদি ভারত থেকে সিন্ধু নদীর জল সরবরাহ কমে যায়, তাহলে পাকিস্তানের কৃষিক্ষেত্র ভেঙে পড়তে পারে। খাদ্য উৎপাদন কমবে, কৃষকরা পথে বসবে, আর তার প্রভাব সরাসরি পড়বে পাকিস্তানের বাজার, সমাজ এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে। এমন অবস্থায় অনেকে আশঙ্কা করছেন, পাকিস্তানে সামাজিক অস্থিরতা বাড়তে পারে, এমনকি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও তৈরি হতে পারে।

ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, “আমরা চুক্তির মধ্যে থেকেই কাজ করছি। পাকিস্তান বারবার সন্ত্রাসবাদকে মদত দিয়েছে, কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করেছে, তাই নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

WhatsApp Image 2025 04 24 at 6 34 14 PM

এদিকে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। ইসলামাবাদের এক ব্যবসায়ী রশিদ খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আমাদের দেশের নেতারা যদি সময়মতো সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে সাধারণ মানুষের জীবন নরক হয়ে যাবে। জল ছাড়া কৃষি কি সম্ভব?” করাচির এক কৃষক মহম্মদ হাসান চোখে জল নিয়ে জানান, “আমরা তো দিন গুনছি কখন বৃষ্টি হবে, এখন শুনছি জল আসবেই না, তাহলে বেঁচে থাকবো কী করে?”

এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞ মহলে প্রশ্ন উঠছে — তাহলে কী ভারত-পাকিস্তান ফের যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে? সত্যি বলতে, কেউ যুদ্ধ চায় না। কারণ দুই দেশই পারমাণবিক শক্তিধর। সামান্য জল নিয়ে যদি যুদ্ধ বাঁধে, তাহলে তার প্রভাব কেবল ভারত-পাকিস্তান নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়া এমনকি বিশ্ব রাজনীতিতেও পড়বে।

বিশেষজ্ঞ অনুপম সিং বলছেন, “ভারত নিজের অধিকার প্রয়োগ করছে ঠিকই, কিন্তু পরিস্থিতি খুব নাজুক। কোনো উস্কানিতে দুই দেশই ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাই দরকার ঠান্ডা মাথায় আলোচনায় ফেরা।” অপরদিকে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ মেহমুদ কুরেশি এক বিবৃতিতে বলেন, “ভারতের এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের প্রতি সরাসরি আক্রমণ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত হস্তক্ষেপ করা।”

অন্যদিকে, কিছু আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, পাকিস্তান এখন অনেকটাই দুর্বল, তাই তাদের হুমকির ভাষা যতই জোরালো হোক, বাস্তবে তারা বড় কোনো সামরিক পদক্ষেপে যাবে না। কারণ পাকিস্তানের অর্থনীতি এতটাই ভঙ্গুর যে যুদ্ধ চালানো তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।

সব মিলিয়ে, সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তিকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। দুই দেশের ভবিষ্যত নির্ভর করছে আগামী দিনে নেওয়া কূটনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর। জল জীবন, আর জীবন যদি হুমকির মুখে পড়ে, তখন সিদ্ধান্তগুলোও অনেক সময় আবেগঘন হয়ে ওঠে। দুই দেশ যদি শান্তির পথ বেছে নেয়, তাহলে সিন্ধুর ধার দিয়ে আবার বয়ে যেতে পারে শান্তির স্রোত, নাহলে ভয়াবহ পরিণতি এড়ানো কঠিন হবে। এখন সময় কথা নয়, কাজের — শান্তির পথে ফেরার।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments