নতুন বছরের রঙে রাঙানো বাংলা চলচ্চিত্র প্রেমীদের জন্য এ যেন এক বড় উপহার — ২৫শে এপ্রিল মুক্তি পেল বহু প্রতীক্ষিত বাংলা চলচ্চিত্র “ভামিনী”। এটি শুধুমাত্র একটি ক্রাইম থ্রিলার নয়, বরং দক্ষিণ দিনাজপুরের গর্বের লোকসংস্কৃতি “গমিরা” নাচকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এক অভিনব গল্প, যেখানে ঐতিহ্য, থ্রিল, আর সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটে এক অপরূপভাবে। ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন প্রতিভাবান চলচ্চিত্র নির্মাতা স্বর্ণায়ু মৈত্র, যিনি বলছেন — “ভামিনী আমার স্বপ্নের প্রজেক্ট। আমি চেয়েছিলাম বাংলা সিনেমার মাধ্যমে আমাদের মাটির গন্ধ, লোকশিল্পের জাদু এবং এক আধুনিক থ্রিলারের স্বাদ একসাথে দর্শকদের উপহার দিতে।” প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির প্রথম দিনেই দেখা গেল হাউসফুল চিত্র, শহর কলকাতা থেকে শুরু করে দক্ষিণ দিনাজপুরের গ্রামীণ প্রেক্ষাগৃহ পর্যন্ত উৎসাহের ঝড়। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রিয়াঙ্কা সরকার, তথাগত মুখার্জি এবং নবাগত কিন্তু প্রতিভাবান অভিনেতা উমাকান্ত পাটেল, যিনি এই প্রথমবার বাংলা সিনেমায় বড় পর্দায় পা রাখলেন। প্রিয়াঙ্কা সরকার বলেন — “এই চরিত্রটি আমার কাছে এক নতুন চ্যালেঞ্জ। ভামিনী শুধুই একটি মেয়ের গল্প নয়, এটি এক সংগ্রামী আত্মার প্রতিচ্ছবি।” তথাগত মুখার্জি জানান — “এই ছবিতে কাজ করে আমার নিজেকেই নতুনভাবে আবিষ্কার করেছি। স্ক্রিপ্ট পড়েই বুঝেছিলাম, এ ছবি অন্যরকম।”
ভামিনীর মূল প্লট গড়ে উঠেছে এক রহস্যময় খুনের ঘটনা ঘিরে, যার সূত্র মেলে দক্ষিণ দিনাজপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। সেই সূত্র ধরেই শহর থেকে গ্রামে পৌঁছায় পুলিশ অফিসার অর্ণব সেন, যার চরিত্রে তথাগত। সেখানে তার দেখা হয় রহস্যময়ী ভামিনীর সঙ্গে — একটি চরিত্র, যাকে ঘিরে গড়ে ওঠে গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া একাধিক টুইস্ট। সিনেমায় গমিরা নাচের ব্যবহার যেমন দর্শককে লোকশিল্পের দিকে টেনে এনেছে, তেমনি থ্রিলার গল্পের বুনট তৈরি করেছে টানটান উত্তেজনা। গমিরা, যা মূলত এক ধরণের মুখোশনৃত্য, দক্ষিণ দিনাজপুরের একটি প্রাচীন লোকসংস্কৃতি। এটি সাধারণত দুর্গাপূজার সময় বা গ্রামীণ পরব-উৎসবে পরিবেশিত হয় এবং রাক্ষস, অসুর, দেবদেবী ও পৌরাণিক চরিত্রদের মুখোশ পরে নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এই নৃত্যকে ঘিরেই পরিচালকের কল্পনার জালে গড়ে উঠেছে গল্পটি, যেখানে লোকগাথা আর আধুনিক অপরাধের জগত একসাথে চলেছে। সিনেমার প্রিমিয়ারে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক স্বর্ণায়ু মৈত্র ছাড়াও মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করা শিল্পীরা এবং বাংলা চলচ্চিত্র জগতের একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। নজর কেড়েছেন অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা সরকারের স্টাইলিশ উপস্থিতি, যিনি ছবির মুক্তি উপলক্ষে বলেন —
“এই ধরনের গল্প দর্শক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। আশা করছি সবাই ভামিনীকে আপন করে নেবেন।” প্রিমিয়ারে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, পরিচালক সৃজিত মুখার্জি, এবং লোকসংস্কৃতি গবেষক অরিজিৎ ঘোষ, যিনি বলেন — “ভামিনীর মতো ছবি গমিরার মতো লোকনৃত্যকে জাতীয় স্তরে তুলে ধরার এক অনন্য উদ্যোগ।” দক্ষিণ দিনাজপুরের স্থানীয় লোকজনদের মধ্যে ছবিটি নিয়ে বিরাট উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষক সুদীপ দাস জানান — “আমাদের গ্রামের গমিরা নাচ একসময় হারিয়ে যাচ্ছিল। এখন সিনেমার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম আবার আগ্রহ দেখাচ্ছে।” এটি শুধু সিনেমার জয় নয়, বরং বাংলা লোকসংস্কৃতির জয়। বাংলা সিনেমায় এক নতুন ধারা আনতে চলেছে ভামিনী, যেখানে থ্রিলার কনটেন্টের সঙ্গে লোকজ ঐতিহ্যকে একই ফ্রেমে বাঁধা হয়েছে। অনেকেই বলছেন,

এটি ভবিষ্যতের সিনেমা নির্মাতাদের জন্য এক নতুন পথ খুলে দেবে। দর্শকরা চাইছেন আরও এই ধরনের ছবি — যা গল্প বলার মাধ্যমে আমাদের শিকড়ে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিটি নিয়ে হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছে — #Bhamini, #FolkThriller, #BanglaCinema, #BhamiraDance, #SouthDinajpurPride। সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ব্যবহারকারী লিখেছেন — “ভামিনী দেখার পর মনে হচ্ছে, আমাদের লোকসংস্কৃতির মধ্যেই লুকিয়ে আছে আসল থ্রিল।” ভামিনীর সাফল্য শুধু বক্স অফিস নয়, বরং বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন দিগন্তের সূচনা। চলচ্চিত্র সমালোচক রঞ্জন মুখার্জি বলেন — “এই ধরনের ছবি বাঙালি দর্শকের রুচিকে প্রসারিত করে, পাশাপাশি লোকশিল্পীদের কাজের মর্যাদা বাড়ায়।” ভবিষ্যতে এমন আরও চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুরোধ জানিয়েছেন অনেকেই। সত্যিই তো, যখন সিনেমা শুধু বিনোদন নয়, বরং সংস্কৃতির বাহক হয়ে ওঠে — তখন তা শুধু একটি ছবি নয়, এক আন্দোলন হয়ে দাঁড়ায়। ভামিনী যেন তারই প্রতিচ্ছবি। এখন দেখার, এই সাফল্যের পর বাংলা সিনেমার পরবর্তী পা কোন পথে এগোয় — কিন্তু এটা নিশ্চিত, ভামিনী তার নিজস্ব ছাপ রেখে গেল বাংলা সিনেমার মানচিত্রে।