Friday, April 25, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসপহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় বিশ্বজুড়ে তীব্র নিন্দার ঝড়

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় বিশ্বজুড়ে তীব্র নিন্দার ঝড়

Terrorist attack in Pahalgaon draws worldwide condemnation : কাশ্মীরের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে শান্তি খুঁজতে যাওয়া পর্যটকদের স্বপ্নময় ভ্রমণ মুহূর্তে পরিণত হল বিভীষিকায়, যখন পহেলগাঁওয়ের একটি পর্যটকবহরে জঙ্গিদের গুলিবৃষ্টি নামল, প্রাণ হারালেন ২৬ জনের বেশি নিরীহ মানুষ, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন বিভিন্ন রাজ্য থেকে আগত পর্যটক। এক মুহূর্তে হাসিমুখ, মোবাইল ক্যামেরায় সেলফি তোলা মানুষগুলোর শরীর ঝাঁজরা হয়ে গেল গুলিতে, গাড়ির জানালা বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগল, চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল মৃত্যুর সুনসান নৈঃশব্দ্য আর কান্নার চিৎকার। এই ঘটনায় শুধু কাশ্মীর বা ভারত নয়, কেঁপে উঠেছে গোটা বিশ্ব। আমেরিকা, ইজরায়েল, ইতালি, রাশিয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশ পর্যন্ত তীব্র নিন্দা ও শোক প্রকাশ করেছে। জানা গেছে, হামলাকারীরা ছিল পাঁচজন জেহাদি, যারা ইতিমধ্যেই পাকিস্তান সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ করেছিল এবং এই হামলার পরিকল্পনা ছিল দীর্ঘদিনের। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে খবর, এই হামলার পেছনে লস্কর-ই-তইবা এবং জয়েশ-ই-মহম্মদের মিলিত মদত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। হামলার পরেই নিরাপত্তা বাহিনী গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে, শুরু হয়েছে তল্লাশি অভিযান, হেলিকপ্টারে করে আহতদের স্থানান্তর করা হয় নিকটবর্তী সামরিক হাসপাতালে। এই রক্তাক্ত হামলায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, কেরল এবং তামিলনাড়ুর মানুষজন। প্রত্যেকেই ছিলেন ছুটি কাটাতে আসা পর্যটক। মৃতদের মধ্যে সাত বছরের একটি শিশুও রয়েছে, যার মুখে এখনো ঝুলে ছিল মায়ের হাত ধরে তোলা একটি গানের রেকর্ড করা ভিডিওর শেষ ফ্রেম। হামলার পরেই গোটা দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা তাঁদের সমবেদনা জানান এবং নিহতদের পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দেন।

1200 675 23959569 thumbnail 16x9 seikhhasina

এই ঘটনার বিষয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স, যিনি বর্তমানে ভারত সফরে রয়েছেন তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে, বলেন, “এই হামলা কেবল ভারতের ওপর নয়, সমগ্র মানবতার ওপর আঘাত। আমরা ভারত সরকারের পাশে আছি। যারা এই কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছে, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।” ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি সোশ্যাল মিডিয়া এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “কাশ্মীরে যা ঘটেছে তা ভয়াবহ, আমরা ভারতের পাশে আছি, নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।” বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি বর্তমানে নয়াদিল্লিতে রয়েছেন, এই হামলাকে “মানবসভ্যতার বুকে ক্ষতচিহ্ন” বলে আখ্যা দেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, “কাশ্মীরের এই ধরনের হামলা কেবল শান্তি বিনষ্ট করে না, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।” ভারত সরকারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “এ ধরনের জেহাদি হামলা আমরা মেনে নেব না, কঠিনতম জবাব দেওয়া হবে। পহেলগাঁও-সহ সমগ্র কাশ্মীর উপত্যকায় নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে, সীমান্ত এলাকায় সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।” স্থানীয় এক পুলিশ অফিসার জানান, “যাঁরা হামলা চালিয়েছেন তাঁরা অত্যন্ত প্রশিক্ষিত, খুব কম সময়ের মধ্যেই এই হামলা সম্পন্ন করে পালিয়ে যান। তবে আমাদের হাতে তাদের সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র রয়েছে, খুব শিগগিরই তাঁদের খোঁজ পাওয়া যাবে।”

এই হামলার প্রত্যক্ষদর্শী একজন আহত পর্যটক বলেন, “আমরা গান শুনছিলাম গাড়ির ভিতর, হঠাৎ মনে হল বৃষ্টি পড়ছে… কিন্তু একটু পরেই বুঝলাম গুলি চলেছে, গাড়ির কাচ ভেঙে পড়েছে, সবাই চিৎকার করছে। আমি চোখ খুলে দেখি আমার পাশের সিটে বসা মেয়েটার গায়ে রক্ত। ও আর বেঁচে নেই।” এমন মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা তাঁদের জীবন থেকে মুছে যাবে না কোনোদিন। কাশ্মীরের স্থানীয় মানুষরাও এই হামলার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন। একজন হোটেল মালিক বলেন, “এই পর্যটকেরাই আমাদের জীবনের রুটি-রুজি, ওঁদের উপর হামলা মানে আমাদের উপরই আঘাত। যারা এই হামলা চালিয়েছে, তারা কাশ্মীরিদের বন্ধু হতে পারে না।” পহেলগাঁও, যা কাশ্মীরের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, এই হামলার পর পর্যটন শিল্প বড়সড় ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। পর্যটনের ওপর নির্ভর করে কাশ্মীরের বহু মানুষ, আর এ ধরনের ঘটনা পর্যটকদের আস্থা নষ্ট করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হামলা শুধু মানুষ খুন নয়, ভারত সরকারের প্রতি এক মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করার পরিকল্পনার অংশ। পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে, কারণ সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ এত সহজে হওয়া আদৌ কাকতালীয় কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে। ভারত ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের জঙ্গি মদতের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতীয় প্রতিনিধিরা এই বিষয়ে আলোচনার দাবি তুলেছেন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে জঙ্গি তৎপরতা দমন করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এই হামলার ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন। রাজনৈতিক পর্যায়ে যেমন এই ঘটনার কড়া প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তেমনি সামাজিক স্তরেও ক্ষোভ ফুটে উঠেছে। তরুণ সমাজ সোশ্যাল মিডিয়ায় একসঙ্গে প্রতিবাদে সরব হয়েছে। “#PrayForPahalgam”, “#StopTerrorism”, “#JusticeForTourists” ইত্যাদি হ্যাশট্যাগে ঝড় উঠেছে এক্স, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক জুড়ে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিভাবে আরও শক্তিশালী করা যায়, সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর হাতে আরও আধুনিক প্রযুক্তি তুলে দেওয়া যায় কিনা।

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা কেবল একটি সন্ত্রাসবাদী কাণ্ড নয়, এটি মানুষের আত্মবিশ্বাস, নিরাপত্তা ও শান্তির ওপর এক নির্মম আঘাত। তবে আশার কথা, এই অন্ধকার মুহূর্তেও গোটা দেশ একজোট হয়ে উঠেছে, ক্ষোভ, শোক আর প্রতিবাদে মুখর হয়েছে, এবং সর্বস্তরের মানুষ চাইছেন, এমন ঘটনা আর না ঘটুক কখনও – শান্তি ফিরে আসুক কাশ্মীরে, মানুষের মুখে আবার ফুটে উঠুক হাসি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments