Explore closed deals in India : পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সীমান্ত পেরিয়ে পেহেলগামের মাটিতে যখন জঙ্গিদের রক্তচক্ষু হামলায় শহিদ হচ্ছেন ভারতীয় জওয়ানরা, ঠিক তখনই দিল্লি স্পষ্ট বার্তা দিল—এইবার আর ছেড়ে কথা নয়। জঙ্গি হামলার ঠিক দু’দিন পরেই ভারত সরকার কড়া পদক্ষেপ নিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে—ভারতে ব্লক করে দেওয়া হল পাকিস্তান সরকারের অফিসিয়াল এক্স (পূর্বতন টুইটার) অ্যাকাউন্ট। এই পদক্ষেপ শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নয়, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলেও ব্যাপক চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়া এখন সরগরম “ভারত পাকিস্তান ডিজিটাল যুদ্ধ” নিয়ে। একদিকে যেমন সীমান্তে জঙ্গি প্রতিহত করার কৌশল সাজাচ্ছে ভারতীয় সেনা, অন্যদিকে ডিজিটাল মাধ্যমে পাকিস্তানের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাগুলিকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে নেয়া হয়েছে এই কঠোর পদক্ষেপ। সূত্রের খবর, ভারতের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক (Ministry of Electronics and Information Technology) এক্স সংস্থাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানায় পাকিস্তান সরকারের অ্যাকাউন্ট ভারতে ব্লক করতে। সেই অনুরোধের ভিত্তিতে, এক্স কর্তৃপক্ষ পাকিস্তান সরকারের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টটি ভারতের ভেতরে কার্যত অদৃশ্য করে দেয়। অর্থাৎ, ভারতের মাটিতে বসে কেউ আর পাকিস্তানের সরকারি বার্তা দেখতে পারবেন না, কিংবা সেই একাউন্টের কোনো টুইট পড়তে পারবেন না।
পাকিস্তান সরকারের এক্স অ্যাকাউন্টটি বহু বছর ধরেই নানা আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানাতে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। পেশোয়ার হোক বা লাহোর, কিংবা কাশ্মীর নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে প্রচার চালানো হোক—এই অ্যাকাউন্ট ছিল পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান ডিজিটাল মুখপত্র। আর সেই অ্যাকাউন্ট যখন একদিন হঠাৎ করে ভারতের সার্ভারে ‘Unavailable’ দেখাতে শুরু করে, তখন থেকেই বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। অনেক ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী নিজেদের মোবাইলে বা ল্যাপটপে বার বার চেষ্টা করে দেখেন যে অ্যাকাউন্টটি আদৌ খোলা যাচ্ছে কি না, কিন্তু প্রতিবারই একই বার্তা—“This account has been withheld in India.”
এই পদক্ষেপের পিছনে ভারত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই স্পষ্ট। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে একটি বিবৃতি জানানো হয়েছে—“দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সামাজিক স্থিতি এবং জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমন কোনো বার্তা যাতে দেশের জনগণের মনে আতঙ্ক বা বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে, সেটিকে কখনোই সমর্থন করা যায় না।”
পাকিস্তান সরকার এখনও এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি, তবে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের এক অঘোষিত সূত্র জানিয়েছে, “ভারত এই পদক্ষেপ করে কেবল নিজেই নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে। এটা বাক্স্বাধীনতার পরিপন্থী।” তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই কড়া অবস্থান আসলে একটি সুপরিকল্পিত কৌশল—একদিকে জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়া, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহলে বার্তা—ভারত কোনোভাবেই সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয় না।
এই পদক্ষেপের ফলস্বরূপ দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্রশংসার সুর। অনেকেই বলছেন, “এটা একদম ঠিক সিদ্ধান্ত। যারা আমাদের দেশের সেনাদের ওপর হামলা চালায়, তাদের কণ্ঠ আমরা আমাদের দেশে শুনতে দেব কেন?” আবার কেউ কেউ লিখেছেন, “ভারত এবার ডিজিটাল কূটনীতিতেও শক্তিশালী হয়েছে।” বিশিষ্ট সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ অরুণাভ বসু জানান, “এই ধরনের অ্যাকাউন্ট ব্লক করাটা এখন অনেক দেশের পক্ষেই সম্ভব, কারণ ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। ভারতও যে তার নিজস্ব সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে সক্ষম, এই পদক্ষেপ তার বড় প্রমাণ।”
তবে এই সিদ্ধান্তের ভবিষ্যৎ প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। প্রথমত, পাকিস্তানের তরফ থেকে কোনো ডিজিটাল প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে—যেমন ভারতের কোনো সরকারি অ্যাকাউন্ট আন্তর্জাতিক স্তরে রিপোর্ট করা, কিংবা হ্যাকিং চেষ্টার সম্ভাবনা। দ্বিতীয়ত, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের মধ্যে তথ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হতে পারে। এবং তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে এই ঘটনা নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে—বিশেষত বাক্স্বাধীনতা বনাম জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্কে।
সাধারণ মানুষও এই পদক্ষেপে উৎসাহিত। অনেকে বলছেন, “ভারত এবার শুধু বন্দুক নয়, ডিজিটাল মিডিয়াতেও পাকিস্তানকে জবাব দিচ্ছে।” অন্যদিকে কিছু মানবাধিকার সংস্থা এই সিদ্ধান্তকে ‘আংশিক সেন্সরশিপ’ বলেও কটাক্ষ করেছে, যদিও তার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে নগণ্য। বিশেষ করে পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় ভারতীয় সেনাদের মৃত্যুর পর, দেশজুড়ে এক আবেগঘন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেই আবেগকে সম্মান জানিয়েই ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ—এটা বেশিরভাগ মানুষ বুঝতে পারছেন।
সার্বিকভাবে, পাকিস্তান সরকারের এক্স অ্যাকাউন্ট ভারতে বন্ধ হওয়া শুধুই একটি টেকনিক্যাল সিদ্ধান্ত নয়, এটি একাধিক বার্তা বহন করে। এটি একদিকে যেমন সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ের অংশ, তেমনি ডিজিটাল স্বাধীনতা ও নিরাপত্তারও প্রশ্ন। এটা একটি নতুন যুগের সূচনা যেখানে যুদ্ধ আর শুধু সীমান্তে নয়, লড়াই হচ্ছে তথ্যের ময়দানে, বার্তার লড়াই, মনস্তাত্ত্বিক দখল। আর সেই যুদ্ধে ভারত ধাপে ধাপে শক্ত হাতে এগিয়ে চলেছে।