Wednesday, April 23, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসবিদেশ৩ বছরে প্রথমবার, রাশিয়া ইউক্রেন মুখোমুখি!

৩ বছরে প্রথমবার, রাশিয়া ইউক্রেন মুখোমুখি!

3 Governments for the first time, Russia Ukraine speed! : ২০২৫ সালের এপ্রিলের এক মনভুলানো সকালে, যখন ইউরোপজুড়ে চলছে বসন্তের আবহ, ঠিক তখনই ইতিহাসের পাতায় লেখা হতে চলেছে এক নতুন অধ্যায়—কারণ তিন বছর পর, প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বসতে চলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। দীর্ঘ রক্তাক্ত যুদ্ধ, ধ্বংস আর হাহাকারের পর অবশেষে আলোচনার টেবিলে বসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যেখানে শান্তির আলো জ্বালাতে মুখ্য ভূমিকা নিতে চলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হ্যাঁ, যুদ্ধ নয়, এবার আলোচনাই হতে চলেছে মূল অস্ত্র। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম “ট্রুথ সোশ্যাল”-এ নিজেই জানিয়েছেন, তিনি পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে আলাদাভাবে একাধিকবার বৈঠক করেছেন এবং উভয় পক্ষই আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছেন। যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০২২ সালে, যখন রাশিয়া ইউক্রেনের উপর আক্রমণ চালায়, আর তারপর থেকে যুদ্ধের আগুন শুধু ইউক্রেন নয়, গোটা বিশ্বের অর্থনীতি, রাজনীতি ও নিরাপত্তাকেও নাড়িয়ে দেয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া, হাজার হাজার মৃত্যু, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া শহর, এবং এক অনিশ্চয়তার মধ্যেই কাটছিল ইউক্রেনের প্রতিটি মুহূর্ত। যুদ্ধের শুরুর দিকে ইউক্রেনের জনগণের সাহসিকতা এবং প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির নেতৃত্ব গোটা বিশ্বকে আলোড়িত করেছিল। অন্যদিকে, রাশিয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হলেও নিজেদের অবস্থান থেকে একচুলও সরে আসেনি। এই সংঘর্ষ শুধু দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, এর আঁচ এসে লেগেছিল গোটা পৃথিবীতে—বিশেষত ইউরোপের জ্বালানী সংকট, খাদ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, রাশিয়া ও ইউক্রেনের রফতানি নির্ভর দেশগুলির উপর প্রভাব, এমনকি বিশ্বের নিরাপত্তা রাজনীতির ভারসাম্যও একপ্রকার বদলে গিয়েছিল। যুদ্ধ চলাকালীন আমেরিকা, ন্যাটো সহ পশ্চিমা দেশগুলি ইউক্রেনকে সমর্থন জানিয়ে একাধিক সামরিক ও আর্থিক সাহায্য করে, যেখানে রাশিয়া ছিল একা, তবে চীনের মত কিছু দেশের পরোক্ষ সমর্থনও পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে আলোচনার সম্ভাবনা—তা-ও আবার এমন একটি সময় যখন বিশ্বজুড়ে নির্বাচন, আর্থিক মন্দা ও জলবায়ু সংকট—সব মিলিয়ে এটি যেন আশার এক আলোকবর্তিকা।

russia ucraina putin zelensky 20230801081916

ডোনাল্ড ট্রাম্প এই আলোচনার বিষয়ে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি যুদ্ধের মাধ্যমে কোনো সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয় না। পুতিন এবং জেলেনস্কির সঙ্গে আমার আলোচনা অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল, এবং আমরা একটি বাস্তবসম্মত সমাধানের দিকে এগোচ্ছি।” রাজনৈতিক মহলের মতে, ট্রাম্পের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে বিশ্বশান্তির পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তবে এও বলা হচ্ছে যে এর পেছনে তাঁর নির্বাচনী উদ্দেশ্যও রয়েছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে, এবং আন্তর্জাতিক শান্তির দূত রূপে নিজেকে তুলে ধরলে তাঁর জনপ্রিয়তা নিঃসন্দেহে বাড়বে। কিন্তু রাজনীতি বাদ দিয়ে যদি সাধারণ মানুষের কথা ভাবি, তাহলে এই আলোচনার গুরুত্ব অপরিসীম। ইউক্রেনের এক সাধারণ নাগরিক নাদিয়া কলোসন বলেন, “আমরা আর মৃত্যু দেখতে চাই না। প্রতিটি দিন আতঙ্কে কাটে, শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না, ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই বাঙ্কারে ছুটতে হয়। যদি এই আলোচনার মাধ্যমে একটু শান্তি আসে, তাহলে সেটা হবে আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার।” একইভাবে, রাশিয়ার এক নাগরিক ইভান পেত্রোভ বলেন, “যুদ্ধ মানেই ক্ষয়ক্ষতি। আমরা চাই স্বাভাবিক জীবন, যেখানে আমাদের সন্তানেরা যুদ্ধ নয়, ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে বড় হবে।”

এই আলোচনার ফলাফল কী হতে পারে, তা এখনই বলা কঠিন, তবে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল বলছে, যদি এই বৈঠকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়—যেমন যুদ্ধবিরতির সময়সীমা, সীমান্তবর্তী এলাকায় সেনা কমানো, মানবিক সাহায্যের পথ খুলে দেওয়া, যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি—তাহলে আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, উভয় পক্ষকেই নমনীয় হতে হবে এবং জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার উপস্থিতিতে এই আলোচনাকে একটি স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে হবে। বিশ্বজুড়ে এই মুহূর্তে নজর রয়েছে এই আলোচনার দিকে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক, এমনকি যুদ্ধপ্রবণ অঞ্চলগুলির মানুষও আশায় বুক বেঁধেছেন—এই বৈঠক কি সত্যিই একটি নতুন সকাল এনে দিতে পারবে?

এখন দেখার বিষয়, এই আলোচনা কতদূর গড়ায় এবং সত্যিই কি পুতিন ও জেলেনস্কি তাঁদের অবস্থান থেকে কিছুটা হলেও সরে এসে মানবিকতার স্বার্থে একটি সমঝোতার পথে হাঁটবেন কিনা। যুদ্ধ অনেক দিয়েছে—ক্ষমতা, দম্ভ, আধিপত্য। কিন্তু কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য প্রাণ, স্বপ্ন আর ভবিষ্যৎ। তাই এবার সময় এসেছে কথা বলার, বোঝার, এবং মিলে চলার। যুদ্ধ নয়, শান্তি হোক শেষ কথা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments