Wednesday, April 23, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যকাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় নিহত পুরুলিয়ার আইবি অফিসার

কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় নিহত পুরুলিয়ার আইবি অফিসার

IB officer from Purulia killed in militant attack in Kashmir: কাশ্মীরের অপার সৌন্দর্য দেখতে গিয়ে সন্ত্রাসের শিকার হলেন এক বাঙালি। মঙ্গলবার বিকেলে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় শহিদ হলেন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) অফিসার মনীশ রঞ্জন মিশ্র। ছুটি কাটাতে গিয়ে প্রাণ গেল এক রাষ্ট্রকর্মীর, আর সেই সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই মুহূর্তে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ল গোটা পুরুলিয়া জেলা, বিশেষ করে ঝালদা পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড, যেখানে মনীশবাবুর পৈতৃক বাড়ি। মনীশ কর্মসূত্রে হায়দরাবাদের আইবি অফিসে সেকশন অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং কাশ্মীরের শ্রীনগর থেকে কিছুটা দূরের পহেলগামে পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ঠিক সেই সময়েই ঘটে এই নারকীয় জঙ্গি হামলা। একের পর এক গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে উপত্যকা, ভয়ে পালাতে থাকে সাধারণ মানুষ। কিন্তু কে জানতো, এমন এক নিষ্ঠুর মুহূর্তে প্রাণ হারাবেন পুরুলিয়ার মাটির সন্তান মনীশ। জানা গিয়েছে, এই জঙ্গি হামলায় মোট ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাঁদের মধ্যে মনীশ রঞ্জন মিশ্র ছিলেন অন্যতম। তবে সৌভাগ্যবশত তাঁর পরিবার—স্ত্রী ও দুই সন্তান প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।

বর্তমানে তাঁদের সেনা নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে। মনীশবাবুর মৃত্যুর খবরে একদিকে যেমন কেঁদে উঠেছে পরিবার, অন্যদিকে রাজ্যজুড়ে উঠেছে তীব্র প্রতিবাদের সুর। মনীশের মা বারবার ছেলের ছবি জড়িয়ে ধরে বলছিলেন, “ছুটি কাটাতে গেছিলো ছেলে, ফিরল দেশের জন্য আত্মবলিদান দিয়ে। আমি গর্বিত, কিন্তু ছেলেকে হারানোর যন্ত্রণা সহ্য হচ্ছে না।” প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, মনীশ ছোট থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী ছিল, সৎ আর নির্ভীক। ঝালদা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে পরে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। তাঁর এক স্কুলের সহপাঠী জানান, “মনীশ শান্তশিষ্ট, মেধাবী আর সাহসী ছিল। দেশের জন্য এমন আত্মত্যাগ মেনে নেওয়া কঠিন হলেও গর্বিত আমরা।” জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এই হামলা জঙ্গি সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF)-এর পরিকল্পিত কাণ্ড। উপত্যকায় আবারও অশান্তি ছড়াতে, পর্যটকদের লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছিল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর ইতিমধ্যেই মনীশ রঞ্জনের মৃত্যুকে ‘জাতীয় ক্ষতি’ বলে অভিহিত করেছে।

2Q==

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিশিষ্টরা মনীশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকেও পরিবারকে সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ঝালদার বিধায়ক বলেন, “এই অপূরণীয় ক্ষতির পাশে আমরা পরিবারটির পাশে আছি। রাজ্য সরকারকে জানাব যাতে শহিদ মর্যাদায় মনীশের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।” মনীশ রঞ্জনের এই মৃত্যু কেবল একটা পরিবার বা একটা শহরের ক্ষতি নয়, গোটা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর বড় প্রশ্ন তুলে দিল। কারণ একজন আইবি অফিসার, যিনি প্রতিনিয়ত দেশের গোপন নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেন, তিনি যদি ছুটি কাটাতে গিয়ে জঙ্গি হামলার শিকার হন, তবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কতটা সুনিশ্চিত, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, কাশ্মীর এখনও জঙ্গি প্রভাব মুক্ত নয়। কেন্দ্র সরকারের তরফে ধীরে ধীরে ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও, পর্যটকদের ওপর হামলা এবং সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ প্রায়শই ঘটে চলেছে। মনীশের মৃত্যু এই বাস্তবতাকেই আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। মনীশ রঞ্জনের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, তিনি ছিলেন অত্যন্ত পরিশ্রমী, নিষ্ঠাবান ও সৎ অফিসার। তাঁর কাজের প্রতি একাগ্রতা ও জাতীয় স্বার্থে নিবেদন তাঁকে সকলের প্রিয় করে তুলেছিল। তাঁর মৃত্যুর খবরে হায়দরাবাদ অফিসেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তাঁর সহকর্মী অমরেশ সিং বলেন, “মনীশ শুধু ভালো অফিসার নয়, একজন ভদ্র, সংবেদনশীল মানুষ ছিলেন। এমন মানুষের মৃত্যু আমাদের পক্ষে বড় আঘাত।” শুধু পুরুলিয়া নয়, গোটা বাংলাজুড়ে এই মৃত্যু ঘিরে চলছে আলোচনা, ক্ষোভ ও শ্রদ্ধার অশ্রু।

অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “মনীশ আমাদের ভাই, আমাদের বন্ধু, আমাদের গর্ব। এই মৃত্যু যেন বৃথা না যায়।” আর এই ঘটনার পরেই কাশ্মীর ঘুরতে যাওয়ার আগে পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি উঠেছে সর্বস্তরে। বিশেষ করে সরকারি অফিসার বা তাঁদের পরিবারের ঘুরতে যাওয়ার সময় কড়া নজরদারি ও নিরাপত্তা দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসনের কর্তারা। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা দেশের একতা ও নিরাপত্তার উপর বড় আঘাত। দীর্ঘদিন ধরে কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, এই হামলা ফের প্রমাণ করল জঙ্গিরা এখনও সক্রিয়, এবং কোনও সুযোগ পেলে তারা আঘাত হানতেই পারে। মনীশ রঞ্জনের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আরও একবার মনে করিয়ে দিল—দেশের প্রতিটি নাগরিক যখন ছুটি কাটাচ্ছেন, তখন কেউ না কেউ পাহারায় রয়েছেন, আর সেই পাহারাদারেরা যখন প্রাণ হারান, তখন শুধুই নয়নজলে তাদের বিদায় জানানো নয়, প্রয়োজন তাঁদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে জঙ্গি দমনে আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া। ঝালদায় মনীশের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

রাজ্য সরকার তাঁকে শহিদ মর্যাদা দিতে পারে বলে জানা গেছে। স্কুল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠন তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে শোকসভার আয়োজন করছে। আর গ্রামে মনীশের নামে একটি স্মৃতিসৌধ তৈরির দাবি উঠেছে স্থানীয়দের তরফে। সর্বোপরি, এই ঘটনা আমাদের শেখায়—একজন সাধারণ মানুষও কত অসাধারণ হতে পারেন, যদি দেশের জন্য তাঁর হৃদয়ে থাকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। মনীশ রঞ্জন মিশ্র সেই সাধারণ মানুষের অসাধারণ অধ্যায়ের নাম, যিনি ছুটি কাটাতে গিয়ে শহিদ হয়ে গেলেন, রেখে গেলেন দেশপ্রেমের এক গভীর দৃষ্টান্ত। তাঁর মৃত্যুর আগুন যেন শুধু কষ্টই নয়, আমাদের জাগিয়ে তোলে, সতর্ক করে দেয় এবং শিখিয়ে দেয়—শান্তির জন্য লড়তে হলে সাহসিকতা, সততা আর আত্মত্যাগের দরকার, আর মনীশ রঞ্জন সেই তিনটিই একসঙ্গে নিজের জীবনে মিশিয়ে দিয়ে গেলেন আমাদের মাঝে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments