...
Wednesday, May 7, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যঅবিশ্বাস্য! নৌকা থেকে লাফ দিয়ে তিমি হাঙ্গরের পিঠে তরুণ

অবিশ্বাস্য! নৌকা থেকে লাফ দিয়ে তিমি হাঙ্গরের পিঠে তরুণ

Incredible! Young man jumps from boat onto whale shark’s back:সমুদ্র মানেই রহস্য, বিশালতা আর কখনও কখনও ভয়, কিন্তু মানুষ নামের প্রাণীটার মধ্যে যেন এক অদ্ভুত কৌতূহল আর দুঃসাহস সব সময় মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, আর সেটাই আরও একবার প্রমাণ করল এক তরুণ, যার দুঃসাহসিক কাণ্ড দেখে রীতিমতো চোখ কপালে উঠেছে নেটপাড়ার। সম্প্রতি এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, মাঝ সমুদ্রের মধ্যে নৌকায় থাকা এক তরুণ হঠাৎ করেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন বিশাল একটি প্রাণীর পিঠে—তা আর কিছুই নয়, একটি তিমি হাঙর বা ‘হোয়েল শার্ক’। এই দৃশ্য দেখে প্রথমে কেউ কেউ ভেবেছেন হয়তো এটাই কোনও সিনেমার শ্যুটিং, কারণ বাস্তবে এ রকম সাহস দেখানো সত্যিই ভাবনার অতীত। কিন্তু পরে জানা গেছে, এটি সত্যিকারের একটি ভিডিও এবং সেটি পোস্ট হয়েছে ‘Nature Is Brutal’ নামে একটি এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডল থেকে। ভিডিওটি ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখে ফেলেছেন, হাজার হাজার মন্তব্যে ভরে উঠেছে কমেন্ট সেকশন। কারও চোখে একে ‘অবিশ্বাস্য কীর্তি’, কারও চোখে ‘অপরাধ’। কেউ প্রশংসা করছেন তরুণের সাহসের, তো কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন প্রাণীটিকে বিরক্ত করার জন্য। অনেকেই বলছেন, “এত বড় একটা প্রাণী, যে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে নিজের মতো করে সাঁতার কাটছিল, তার পিঠে হঠাৎ করে চড়ে বসা একেবারেই ঠিক কাজ নয়।” আবার কেউ কেউ মজা করে লিখেছেন, “এবার হয়তো হাতির পর ঘোড়ার বদলে সাফারিতে তিমি হাঙরের চড়াই শুরু হবে!” তিমি হাঙর হল বিশ্বের বৃহত্তম মাছ, যা সাধারণত মানুষের কোনও ক্ষতি করে না এবং বেশ শান্ত স্বভাবের প্রাণী।

এদের মূল খাদ্য হল প্ল্যাঙ্কটন ও ছোট মাছ, এবং তারা সাধারণত গভীর সমুদ্রে বা উষ্ণ জলের মধ্যে থাকে। তবে যেহেতু প্রাণীটির আকার বিশাল—লম্বায় ৩০-৪০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে—তাই এর কাছাকাছি যাওয়ার সময় অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়, কারণ অজান্তেই তা মানুষের ক্ষতি করে ফেলতে পারে। এই ঘটনার পর সমুদ্রপ্রেমী ও প্রাণীবিদদের একাংশ বেশ চিন্তিত। তারা বলছেন, “এই ধরনের আচরণ যদি প্রচারে চলে আসে, তবে বহু মানুষ এটা অনুকরণ করতে পারে, যা মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে এবং সেইসঙ্গে এই বিপন্ন প্রাণীগুলির জীবনে অযাচিত ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বা অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড উপকূলেও এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে হোয়েল শার্কের সাথে সাঁতার কাটার সুযোগ দেওয়া হয়, কিন্তু সেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গাইড এবং নিরাপত্তার সুনির্দিষ্ট বিধি মেনে তবেই সেই অভিজ্ঞতা নেওয়া যায়। এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ওশান লাইফ সুরক্ষা সংগঠনগুলি আরও কড়া নিয়ম চালুর দাবি জানিয়েছে। ‘মেরিন অ্যানিমেল রেসকিউ’ সংস্থার এক সদস্য বলেন, “এই ভিডিওর মাধ্যমে ভুল বার্তা যাচ্ছে—যুবসমাজ ভাবতে পারে, এটি একটি দুঃসাহসিক অ্যাডভেঞ্চার, কিন্তু এটা একদিকে যেমন প্রাণীর প্রতি অবিচার, তেমনি নিজের জীবনও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া।” অন্যদিকে, তরুণটির নাম বা পরিচয় এখনও পর্যন্ত সামনে আসেনি, তবে কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে তিনি একজন ব্লগার এবং “অ্যাডভেঞ্চার কনটেন্ট ক্রিয়েটর”,

Screenshot 2025 04 23 144541

যিনি বিভিন্ন সাহসী কাজ করে সেগুলি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে থাকেন। তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দেখা গেছে, তিনি আগেও বিভিন্ন দুঃসাহসিক ভিডিও আপলোড করেছেন—কখনও আগ্নেয়গিরির মুখে ক্যাম্পিং, কখনও পাহাড়ি খাঁদে রাফটিং। তবে এই ঘটনার পর তিনি নিজেও একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, “আমি জানি এটা বিপজ্জনক ছিল, কিন্তু আমি খুব সাবধানে করেছিলাম এবং কোনওভাবে প্রাণীটিকে আঘাত করিনি।” যদিও এই ব্যাখ্যা অনেকেই মানতে নারাজ। ভারত, বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের বহু মানুষ এই ভিডিও দেখে চমকে উঠেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডঃ সৌগত দাস জানান, “তিমি হাঙর একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও শান্ত স্বভাবের প্রাণী। এই ধরনের আচরণ প্রাণীর উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং এর ফলে তারা তাদের স্বাভাবিক অভ্যাস থেকে বিচ্যুত হতে পারে।” এই ধরনের কাজ যে ভবিষ্যতে সামাজিকভাবে বিপজ্জনক প্রভাব ফেলতে পারে সে বিষয়েও সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই সমাজমাধ্যমে ‘ভিউস’ ও ‘ফলোয়ার’ পাওয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে রাজি, এমনকি নিজের ও অন্যের জীবনের মূল্য না বুঝেই। ঘটনাটি কোথায় ঘটেছে, তা নিয়ে এখনো সঠিক তথ্য মেলেনি, তবে অনেকে অনুমান করছেন এটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কোনও ট্রপিকাল এলাকায় ঘটেছে। এখনও পর্যন্ত কোনও পরিবেশবাদী সংগঠন বা সামুদ্রিক সুরক্ষা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেনি, তবে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে আইনি পদক্ষেপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট মহল। সব মিলিয়ে এই ঘটনা একদিকে যেমন সমুদ্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ এবং দুঃসাহসের প্রকাশ, তেমনি আবার এক বড়সড় সতর্কতাও। প্রকৃতি আর বন্যপ্রাণের সঙ্গে সহাবস্থান করতে হলে শুধুমাত্র কৌতূহল নয়, প্রয়োজন সম্মান, সংবেদনশীলতা ও দায়িত্ববোধ।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.