State-of-the-art Gold ATM installed in Shanghai, China : বিশ্বজুড়ে যখন সোনার দাম এক এক করে সমস্ত রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলছে, তখনই অভিনব এক প্রযুক্তির ঝলক দেখা গেল চীনের সাংহাই শহরে, যেখানে দোকানের ঝঞ্ঝাট, ঠকে যাওয়ার ভয়, গয়নার খাঁটি না হবার দুশ্চিন্তা—সবকিছুর একেবারে পূর্ণাঙ্গ সমাধান এনে হাজির হয়েছে গোল্ড এটিএম, মানে এমন একটি এটিএম মেশিন যা সোনার গয়না গলিয়ে, ওজন করে, তার শুদ্ধতা যাচাই করে তাৎক্ষণিকভাবে বাজার মূল্যের ভিত্তিতে টাকা ট্রান্সফার করে দিচ্ছে সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে, এমনই অভিনব ব্যবস্থা চালু করেছে চীনের কিংহুড গ্রুপ (Kinghood Group), যারা এই যন্ত্র বসিয়েছে সাংহাই শহরের একটি বিলাসবহুল শপিং মলে, আর ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে না হতেই বিশ্বজুড়ে মানুষ চমকে উঠেছে, ভাবছে এটা তো জাদুর মতো—গয়না ঢুকাও, টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়ো, আর পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, কারণ আপনার চোখের সামনেই মেশিনে সোনা গলে যাচ্ছে, স্ক্যানারে ওজন ও বিশুদ্ধতা মাপা হচ্ছে, আর মোবাইলে ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার এসএমএস চলে আসছে,
বিশেষজ্ঞদের মতে এই প্রযুক্তির নাম “AI-Powered Automated Gold Recycling System”, যেটি শুধু প্রযুক্তির ব্যবহার নয় বরং সাধারণ মানুষের ভরসা অর্জনের এক নতুন ধাপ, কারণ বহু মানুষ গয়না বিক্রি করতে গিয়ে দোকানে ঠকেছেন, একে তো সঠিক দাম পাননি, তার উপর শুদ্ধতা নিয়ে বিভ্রান্তি, কিন্তু এখানে সেই আশঙ্কা নেই বলেই দাবি করেছেন কিংহুড গ্রুপের মুখপাত্র লি ওয়েই, তিনি জানান, “এই যন্ত্রে প্রতিটি পদক্ষেপ স্বচ্ছভাবে করা হয় এবং গ্রাহকরা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকেন, এছাড়াও প্রতিটি লেনদেনের ভিডিও রেকর্ড রাখা হয় যাতে ভবিষ্যতে কোনো অভিযোগ উঠলে তার সমাধান করা যায়,” এই যন্ত্রে তিন গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত গয়না গ্রহণ করা হচ্ছে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে সময় লাগছে মাত্র ৩০ মিনিট, এতে রয়েছে বিশেষ ধাতব বিশ্লেষণ প্রযুক্তি, ওয়েই আরও জানান, “এই যন্ত্রে প্রতি গ্রামে ১৮ ইউয়ান সার্ভিস চার্জ নেওয়া হচ্ছে, যেটা অনেকেই প্রথমে উচ্চ মনে করলেও যখন তারা পুরো সিস্টেমের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা দেখেন তখন তার মূল্য বুঝতে পারেন,” এই যন্ত্র শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে নয় বরং আর্থ-সামাজিক দিক দিয়েও এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন, কারণ বহু প্রবীণ বা একাকী থাকা নাগরিক যারা সোনা বিক্রি করতে পারেন না বাজারে গিয়ে, তারা এই মেশিনের মাধ্যমে নিরাপদে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবেন, এছাড়াও চীনের তরুণ প্রজন্ম যারা মোবাইল,

ডিজিটাল ব্যাঙ্কিংয়ে অভ্যস্ত তাদের জন্য এটি এক আদর্শ মাধ্যম হয়ে উঠছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইবো এবং টিকটকে ইতিমধ্যেই এই মেশিন নিয়ে হাজার হাজার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেখানে অনেকে মজা করে লিখেছেন “ATM মানে এখন Automated Treasure Machine!” অন্যদিকে ভারতের কর্নাটক রাজ্যের তুমকুর শহরেও এমনই একটি গোল্ড এটিএম চালু হয়েছে, যদিও সেটা শুধুমাত্র সোনা কেনার জন্য, ‘তুমকুর মার্চেন্টস ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ এই উদ্যোগে চালু করেছে ‘টিএমসিসি গোল্ডসিক্কা’ (TMCC Goldsikka) নামের এটিএম যেখানে গ্রাহকরা ২৪ ক্যারেট খাঁটি সোনার কয়েন কিনতে পারেন, ঠিক যেমন কফি ভেন্ডিং মেশিনে টাকা দিলে কফি বেরোয়, তেমনি টাকা দিলে নির্দিষ্ট ওজনের সোনার কয়েন বেরিয়ে আসছে মেশিন থেকে, এই দুটি উদ্যোগ ভবিষ্যতের দিক নির্দেশ করে দিচ্ছে—আমরা এমন এক যুগে প্রবেশ করছি যেখানে সোনার লেনদেন সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর, নিরাপদ ও ঝামেলামুক্ত হবে, এবং তা শুধু বড় শহর নয়, আগামী দিনে ছোট শহর, এমনকি গ্রামেও ছড়িয়ে পড়তে পারে যদি সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলি যৌথভাবে এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়,
বিশেষজ্ঞদের মতে এই এটিএম ব্যবস্থায় মুদ্রা বাজারেও প্রভাব পড়তে পারে, কারণ সোনার বাজারমূল্য হ্রাসবৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষ আরও তৎপর হবে ডিজিটাল বিক্রির দিকে, এবং এতে বেড়ে যাবে রিসাইক্লিং বা পুনঃব্যবহারযোগ্য সোনার হার, যা পরিবেশগত দিক থেকেও ইতিবাচক, বর্তমানে বিশ্বে সোনার দাম প্রতি আউন্সে ২৩০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে, এমন পরিস্থিতিতে এই গোল্ড এটিএম প্রযুক্তি এক নতুন পথ দেখাচ্ছে—স্বচ্ছতা, গতি এবং প্রযুক্তির মিশ্রণে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস পুনর্গঠনের এক বাস্তব উদাহরণ হয়ে উঠছে সাংহাইয়ের এই গোল্ড এটিএম, হয়তো আর কিছুদিন পর এই প্রযুক্তির ছোঁয়া ভারতেও এসে পৌঁছবে, আর তখন দোকানভিত্তিক সোনার বিক্রির রীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে, সাধারণ মানুষকে আর বারবার গহনার শুদ্ধতা প্রমাণ করতে হবে না, বরং একটি মেশিনই দেবে নির্ভরযোগ্য তথ্য ও তাৎক্ষণিক মূল্য, এবং তখন “গোল্ড এটিএম” শুধুমাত্র একটি যন্ত্র নয়, বরং মানুষের বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠবে।