Two young people gave honey to a violent villain! : গভীর জঙ্গলের নিস্তব্ধতায় একটি গাছের ডালে বসে রয়েছে এক বিশাল আকৃতির ভালুক, চোখ দুটো যেন কারও অপেক্ষায়। আশেপাশে ছায়া পড়া গাছের ফাঁকে হেঁটে বেড়াচ্ছে দুই তরুণ, হাতে একটি বাক্স – যার মধ্যে রয়েছে মধু। সাধারণত এমন দৃশ্য শুনলেই গা ছমছম করে ওঠে, কারণ ‘ভালুক’ মানেই হিংস্র, তাড়া করে আসবে, আঁচড়াবে, কামড়াবে। কিন্তু বাস্তবে যা ঘটেছে, তা যেন সিনেমার মতো। ভালুকটি একটুও আক্রমণাত্মক নয়, বরং তার মন পড়ে রয়েছে ওই মধুর বাক্সের দিকে। তরুণদের মধ্যে একজন একটি গাছের ডাল দিয়ে সেই বাক্স থেকে একটু মধু বের করে ভালুকের মুখের সামনে ধরে দেয়। ভালুকটি অত্যন্ত শান্তভাবে সেই মধু খায়, মুখে এক ধরনের প্রশান্তি যেন ফুটে ওঠে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গেছে এই ভিডিও, যার ক্যাপশনে লেখা, “Give love, not fear.” ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল ‘Tom.Bear.Tom’ থেকে আপলোড হওয়া এই ভিডিও ইতিমধ্যেই হাজার হাজার মানুষ দেখেছেন, ভালোবাসা জানিয়েছেন, কেউ কেউ আবার মন্তব্য করেছেন, “এটা যেন পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি ভিডিও”, “মানুষ আর বন্যপ্রাণীর মধ্যে বন্ধুত্বের এক আশ্চর্য নিদর্শন”। যদিও ‘খবর বাংলা’ এখনও ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেনি, বা ঘটনাটি কোথায় ঘটেছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তবে এই ভিডিওতে যে বার্তাটি ছড়িয়ে পড়েছে তা নিঃসন্দেহে মন ছুঁয়ে যায় – তা হল, সহানুভূতি, সহাবস্থান আর ভালবাসা।

এই ঘটনার ভিডিওতে যেটা লক্ষ্যণীয় তা হল তরুণদের চালচলনে কোনো রকম ভয় বা হঠকারীতা দেখা যায়নি, বরং তারা অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভালুকটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে এবং অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে তাকে মধু খাওয়ায়। অনেক বন্যপ্রাণী প্রেমী বলছেন, এই ধরনের কাজ প্রশংসনীয় হলেও, এটি অত্যন্ত বিপজ্জনকও। বিশিষ্ট বনদপ্তরের আধিকারিক তথা বন্যপ্রাণী গবেষক অরিন্দম দত্ত বলেন, “ভালুক একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও কখনো কখনো হিংস্র প্রাণী। তার সামনে এভাবে এগিয়ে যাওয়া বিপদের মুখোমুখি হওয়ার শামিল। তবে এই তরুণরা যে সাহস দেখিয়েছেন এবং প্রাণীটির প্রতি যে সহানুভূতি দেখিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এই ধরনের ইন্টারঅ্যাকশন অবশ্যই প্রশিক্ষণের অভাবে না হওয়াই ভাল।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্যপ্রাণীদের প্রতি মানুষের আচরণে সাম্প্রতিক সময়ে একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকেই এখন বন্যপ্রাণীকে কেবল হুমকি নয়, বরং প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখতে শিখেছেন। এই ভিডিওটি সেই মানসিক পরিবর্তনেরই প্রতিচ্ছবি। স্থানীয় মানুষজন যারা বনাঞ্চলের পাশে বসবাস করেন, তাঁদের মধ্যেও এই ভিডিও একটি আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “আগে আমরা শুনলে যে কোথাও ভালুক ঘোরাঘুরি করছে, সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কিত হয়ে যেতাম। কিন্তু এই ভিডিও দেখে মন বদলেছে। ওদের প্রতিও যে মায়া হয়, এটা আমরা বুঝতে পারছি।”
তবে এই ঘটনায় কিছু প্রশ্নও উঠে এসেছে – যেমন ভিডিওটি কি সত্যিই বাস্তব, নাকি সেটি পূর্ব-পরিকল্পিত? ভালুকটির ব্যবহার কি সত্যিই স্বাভাবিক, না কি আগে থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি নিশ্চিত কিছু বলা কঠিন। তবে যদি এটি বাস্তব হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে এটি একটি বিরল এবং দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা।
অনেক বন্যপ্রাণী সংস্থা এই ভিডিওটির মাধ্যমে সচেতনতা ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। তাঁরা বলছেন, “এই ধরনের ভিডিও যদি মানুষের মধ্যে সহানুভূতির বীজ বপন করে, তাহলে ভবিষ্যতের পৃথিবী প্রাণী ও মানুষের সহাবস্থানের জন্য আরও সুন্দর হবে। তবে সবসময় মনে রাখতে হবে, বন্যপ্রাণীর স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।”
এই ঘটনা থেকে ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় বার্তা পাওয়া যায় – প্রাণী হোক কিংবা মানুষ, ভালোবাসা এবং সহানুভূতি দিয়ে যদি সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়, তবে সবচেয়ে হিংস্রও কোমল হয়ে উঠতে পারে। এই ভিডিওতে ভালুকটির মুখে যে প্রশান্তির ছাপ, তা যেন প্রমাণ করে দেয়, সব প্রাণীই ভালবাসা বোঝে – শুধু তার প্রকাশের ভাষা ভিন্ন।
বর্তমানে ভিডিওটি ঘিরে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। নেটিজেনদের একাংশ চাইছেন এই তরুণদের চিনে নিতে, তাঁদের সাহসিকতার জন্য পুরস্কৃত করতে। কেউ আবার বলছেন এই ভিডিও সরকারের নজরে আনতে, যাতে পশু কল্যাণ ও বনদপ্তর বিষয়ক কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া যায়। এমনকি ইউটিউব ও ফেসবুকেও এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে রিল, শর্টস এবং শেয়ার্ড স্টোরির মাধ্যমে।
তবে একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ‘হিংস্র’ এই ভালুক ও দুই তরুণের মধুর এই কাহিনী শুধু ইন্টারনেটের একটি ভাইরাল ভিডিও নয়, বরং এটি একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা – যেখানে মানুষ আর বন্যপ্রাণীর মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হতে পারে বন্ধুত্বের, ভালবাসার, এবং শান্তির উপর ভিত্তি করে।