Arjun Singh raids DI office in Barrackpore:একটা সময় ছিল যখন ব্যারাকপুর মানেই ছিল শিল্পাঞ্চলের গর্ব, কিন্তু এখন সেই ব্যারাকপুর যেন রাজনীতির উত্তাপের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা চাকরি হারিয়েছেন, যা রাজ্য সরকারের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশে হিমশিম খাচ্ছে, আর সেই সুযোগে বিজেপি রাজ্য সরকারকে নিশানা করে আন্দোলনে নেমেছে।
আজ ব্যারাকপুর ডিআই অফিসের সামনে প্রতীকী বিক্ষোভ দেখান ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার বিজেপি নেতৃত্ব। ব্যারাকপুর স্টেশন থেকে মিছিল করে ডিআই অফিস অভিযানে নেতৃত্ব দেন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সংসদ সদস্য অর্জুন সিং, বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী ফাল্গুনী পাত্র, ভাটপাড়ার বিধায়ক পবন সিং, ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মনোজ ব্যানার্জি, বিজেপি নেতা কুন্দন সিং ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এই অভিযানের আগে থেকেই ডিআই অফিসের সামনে মোতায়েন করা হয়েছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী, যা পরিস্থিতির উত্তেজনা বোঝাতে যথেষ্ট।

অর্জুন সিং বলেন, “এই সরকারটা পুরোটাই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। ব্যারাকপুরের বর্তমান সাংসদ পার্থ ভৌমিকের সুপারিশে বহু চাকরি হয়েছে। সেই সব হিসাব নেওয়া হবে।” এই বক্তব্যে স্পষ্ট যে, অর্জুন সিং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে চাইছেন।
এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ব্যারাকপুরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই ব্যারাকপুরে রাজনৈতিক সংঘর্ষ, বোমা-গুলি, অগ্নি সংযোগ, ভাঙচুর ইত্যাদি ঘটনা ঘটেছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনে ভয় ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, কারণ পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে বারবার।
এই আন্দোলনের ফলে স্থানীয় জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে মনে করেন, এই আন্দোলন রাজ্য সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি প্রয়োজনীয় প্রতিবাদ, আবার অনেকে মনে করেন, এটি রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য একটি কৌশল মাত্র। তবে একথা নিশ্চিত যে, এই আন্দোলনের ফলে ব্যারাকপুরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে এবং সাধারণ মানুষের জীবনে এর প্রভাব পড়ছে।

এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের উচিত দ্রুত যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করে শিক্ষাক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা, যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরে আসে। একইসঙ্গে, রাজনৈতিক দলগুলির উচিত আন্দোলনের নামে সহিংসতা না করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানানো, যাতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত না হয়।
এই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা সময়ই বলবে। তবে একথা নিশ্চিত যে, ব্যারাকপুরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন এক সংকটজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা।