Men will be able to travel to their homeland in Lokale:মহিলাদের জন্য বরাদ্দ ‘মাতৃভূমি লোকাল’ ট্রেন এতদিন ছিল যেন একরকম স্বাধীনতার রেলপথ। যেখানে অফিস টাইমে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের মধ্যেও মহিলারা একটু স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারতেন, কোনও পুরুষের ভিড়-ধাক্কা-ধাক্কি ছাড়াই। কিন্তু এবার সেই ‘মাতৃভূমি লোকাল’-এর দৌড় এক ধাপ বাড়ল, কারণ এখন থেকে নির্দিষ্ট কিছু বগিতে পুরুষরাও যাতায়াত করতে পারবেন এই ট্রেনে। একদিকে যেমন এই সিদ্ধান্তে খুশি বহু পুরুষ যাত্রী, অন্যদিকে কিছুটা বিভ্রান্তি ও বিতর্কেরও জন্ম হয়েছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, এটা সাময়িক নয়, বরং জনস্বার্থে খুব চিন্তাভাবনা করে নেওয়া সিদ্ধান্ত। গল্পটা শুরু হয়েছিল কয়েক বছর আগে, যখন শিয়ালদা ডিভিশনের ব্যস্ত রুটগুলোতে, বিশেষ করে বারাসাত, ডানকুনি, বঁড়গাছি, গড়িয়া, ডায়মন্ড হারবার, দক্ষিণেশ্বরের মতো জায়গা থেকে প্রচুর মহিলা যাত্রী দিনে অফিস টাইমে ট্রেনে ওঠানামা করেন। সাধারণ লোকাল ট্রেনের কামরায় যাত্রীদের চাপ এমন জায়গায় পৌঁছয়, যেখানে মহিলারা নিজেদের নিরাপত্তা বা স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পান না। এই সমস্যা থেকেই ভারতীয় রেল চালু করে ‘মাতৃভূমি লোকাল’ – শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত বিশেষ ট্রেন।দিনে মাত্র দুটি ট্রেন – এক সকালে, এক সন্ধ্যায় – তবে এই ট্রেনগুলোর চাহিদা ছিল আকাশছোঁয়া। এতে মহিলাদের মধ্যে স্বস্তির পাশাপাশি একটা মানসিক নিরাপত্তাও তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু সমস্যা তখন শুরু হয়, যখন সাধারণ লোকালে পুরুষ যাত্রীদের জন্য বগির সংখ্যা কমে যায়। ১২ বগির ট্রেনে যেখানে আগে ১০টি বগি পুরুষদের জন্য থাকত, সেখানে এখন ৯টি বগি দেওয়া হয়, বাকিগুলো মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। তার ফলেই বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে শুরু হয় যাত্রীদের বিক্ষোভ, অবরোধ ও রেল চলাচলে বিঘ্ন। গত সপ্তাহে দমদম, হাবড়া, বারুইপুর, ক্যানিংয়ের মতো জায়গায় ট্রেন অবরোধ করে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের দাবি ছিল, “মহিলাদের জন্য আলাদা ট্রেন থাকতেই পারে, কিন্তু তার জন্য পুরুষদের যাতায়াতে অসুবিধা করা ঠিক নয়। আমাদের অফিসও আছে, সময়মতো পৌঁছাতে না পারলে চাকরি যায়।” এই পরিস্থিতিতে রেলের তরফে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়, যেখানে শিয়ালদা ডিভিশনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা অংশ নেন। তারা সিদ্ধান্ত নেন, ‘মাতৃভূমি লোকাল’-এর নির্দিষ্ট কিছু বগিতে পুরুষদের যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হবে। আজ, বারাসাত জংশনে রেলের আধিকারিকেরা নিজে ‘মাতৃভূমি লোকাল’-এ উঠে সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের মতামত শোনেন এবং একটি সার্ভেও করেন। এরপরই ঘোষণা করা হয়, আজ থেকে মাতৃভূমি লোকালের তিন নম্বর, চার নম্বর ও পাঁচ নম্বর বগিতে পুরুষ যাত্রীরাও উঠতে পারবেন। এতে কিছুটা হলেও সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এক পুরুষ যাত্রী জানালেন, “আমার অফিস পার্ক স্ট্রিটে। ডানকুনি থেকে উঠি। সাধারণ লোকালে এত ভিড় থাকে যে উঠতেই পারি না। এখন অন্তত একটা অপশন থাকল।” অন্যদিকে এক মহিলা যাত্রী বললেন, “আমরা ভেবেছিলাম এটা একমাত্র আমাদের জন্য।

এখন যদি পুরুষরাও আসে, তাহলে আবার কি আগের মতো ঠেলাঠেলি শুরু হবে?” যদিও রেল কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে, “এটা কোনওভাবেই মহিলাদের স্বার্থে আঘাত নয়। পুরুষদের জন্য বগির সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয়েছে, বাকি বগিগুলো শুধুই মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। কোনওরকম গণ্ডগোল বা বিশৃঙ্খলা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কিন্তু সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি বড় পরিবর্তন। কারণ রেল ব্যবস্থা কখনওই পুরোপুরি লিঙ্গ নিরপেক্ষ নয়, বরং তা লিঙ্গভিত্তিক পরিষেবার ভিত্তিতে চলে। ‘মাতৃভূমি লোকাল’ সেই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হয়ে উঠেছিল। এখন সেখানে পুরুষদের প্রবেশ অনুমতি সমাজে কী বার্তা দেয়, তা সময় বলবে। তবে এই সিদ্ধান্ত যে বাস্তব পরিস্থিতির দাবি মেটাতে নেওয়া হয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। অফিস টাইমের ভিড়, পুরুষ যাত্রীদের সীমিত কামরা, এবং পরপর বিক্ষোভের মুখে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত। আগামী দিনে হয়তো এই ধরনের ট্রেনে ‘সংকর কামরা’ (shared compartment) বাড়বে, যেখানে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকবে, এবং রেলও আরও আধুনিক ব্যবস্থা আনবে। তবে আপাতত এই সিদ্ধান্তে যাত্রীদের একটা অংশ খুশি। এবং সবথেকে বড় কথা, যাত্রীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা প্রশাসনের এক ইতিবাচক পদক্ষেপ। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। আমরা ‘খবর বাংলা’-র পক্ষ থেকে এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাই, এবং প্রত্যাশা রাখি – যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা বজায় রেখে রেল কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে আরও আধুনিক ও মানবিক পরিষেবা চালু করবে।