Kristi Nakshatra Award 2025:-কলকাতার বুকে আবার এক মন ছুঁয়ে যাওয়া সন্ধ্যার সাক্ষী থাকল শহরবাসী, যেখানে শুধু আলো ঝলমলে তারকার উপস্থিতি নয়, বরং শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটল একসাথে। “Kristi Cultural House”-এর পক্ষ থেকে অনুষ্ঠিত হলো “কৃষ্টি নক্ষত্র সম্মান ২০২৫”, যা এখন শুধু একটি সম্মান প্রদানের অনুষ্ঠান নয়, বরং বাংলার সংস্কৃতির এক অমূল্য সম্পদে পরিণত হয়েছে। এই বছরও অনুষ্ঠানে সম্মানিত করা হয়েছেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা গুণী ব্যক্তিত্বদের — কেউ সংগীতে, কেউ অভিনয়ে, কেউ বা সাহিত্য-চর্চায় কিংবা সমাজসেবায় নিজেদের অসামান্য অবদান রেখেছেন। এই আয়োজন শুধু তাদের কাজকে কুর্নিশ জানায় না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করে। এক মনোরম সন্ধ্যায় শুরু হয় অনুষ্ঠান, যেখানে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

উপস্থিত ছিলেন টলিপাড়ার বহু তারকা, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ এবং অসংখ্য শিল্পী, শিক্ষার্থী ও ভক্তকুল। মঞ্চে আলোকিত ছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, যিনি বলেন, “এই রকম অনুষ্ঠানের দরকার আছে, কারণ গুণী মানুষদের কৃতিত্বকে কুর্নিশ না জানালে সমাজ থেমে যায়। আমরা সবাই মিলে সংস্কৃতির এই আলোটা আরও দূরে পৌঁছে দিতে পারি।” এছাড়াও মঞ্চে ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী তন্বী লাহা রায়, যিনি বলেন, “এই অনুষ্ঠানটা শুধু একটা পুরস্কার দেওয়া নয়, এটা একটা আবেগ, একটা উপলক্ষ — আমরা কে কোথা থেকে এসেছি, আর কীভাবে এই সমাজে কিছু ফিরিয়ে দিতে পারি তার উদাহরণ।” অনুষ্ঠানে সম্মাননা পেয়েছেন যেমন নাট্যজগতের প্রবীণ নির্দেশকগণ, তেমনই সম্মানিত হয়েছেন আধুনিক সংগীতের তরুণ শিল্পী, কবি, শিক্ষাবিদ, এবং সমাজসেবায় যুক্ত একাধিক সংগঠন। অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক Kristi Cultural House-এর পরিচালক শ্রীমতী সুদীপ্তা রায় বলেন, “এই কাজটা আমরা প্রতি বছর খুব ভালোবাসা নিয়ে করি। অনেকেই আছেন, যারা নীরবে অনেক কাজ করেন, কিন্তু সমাজের সামনে তাঁরা উঠে আসেন না। কৃষ্টি নক্ষত্র সম্মান তাঁদের সেই সুযোগ দেয়।” সন্ধ্যাটি শুধু সম্মানের মধ্যেই আটকে থাকেনি, বরং মঞ্চে ছিল একের পর এক সঙ্গীত পরিবেশনা, কবিতা পাঠ, নৃত্য এবং নাটকের অংশবিশেষ। কলকাতার নামকরা কিছু সাংস্কৃতিক দলের পারফরম্যান্সে মুহূর্তে জমে ওঠে পরিবেশ।
একটি বিশেষ পরিবেশনা ছিল রবীন্দ্রসংগীতের উপর, যেখানে পুরোনো দিনের গানের মধ্য দিয়ে জীবনের গভীরতা তুলে ধরা হয়। দর্শকদের চোখে জল, মুখে হাসি, আর হৃদয়ে গর্ব — এটাই ছিল “কৃষ্টি নক্ষত্র সম্মান ২০২৫”। অনুষ্ঠানটির একটি দিক খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল — যেখানে বিশেষভাবে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল শহরতলি থেকে উঠে আসা নবীন প্রতিভাদের, যাঁরা সাধারণত বড় প্ল্যাটফর্মে সুযোগ পান না। তাঁদের মধ্য থেকে একাধিক কিশোর-কিশোরী যাঁরা নাটক, আবৃত্তি ও নৃত্যে দক্ষতা দেখিয়েছেন, তাঁদের পুরস্কার দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। উপস্থিত দর্শকদের একাংশ জানিয়েছেন, “এই ধরনের অনুষ্ঠান না থাকলে আমরা জানতেই পারতাম না, আমাদের আশপাশে এত প্রতিভা রয়েছে।” অনেকে আরও বলেন, “শুধু বড় বড় তারকাদের নয়, এই মঞ্চ নতুন প্রতিভার স্বীকৃতি দিচ্ছে বলেই সত্যিকারের সম্মান অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে এটি।” সামগ্রিকভাবে অনুষ্ঠানটি যে কতটা আবেগঘন ছিল, তা বোঝা যায় দর্শকদের প্রতিক্রিয়া থেকে।

কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “আজকের সন্ধ্যা ছিল নিখাদ বাংলার সংস্কৃতির আনন্দ। এই শহর এখনও গর্ব করতে পারে তার শিল্পী, সাহিত্যিক আর সমাজসেবীদের নিয়ে।” অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয় বাংলা সাহিত্যের বই ও স্থানীয় হস্তশিল্পীদের তৈরি সামগ্রী, যার মধ্য দিয়ে এক প্রকার লোকশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। Kristi Cultural House-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী বছর তারা এই অনুষ্ঠান আরও বড় পরিসরে এবং জেলার বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতে চান, যাতে কলকাতার বাইরেও এই স্বীকৃতি পৌঁছাতে পারে। সবমিলিয়ে “কৃষ্টি নক্ষত্র সম্মান ২০২৫” ছিল শুধু একটা পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান নয় — এটা ছিল একটা চলমান কাহিনি, যেখানে মানুষের পরিশ্রম, প্রতিভা ও মূল্যবোধকে কুর্নিশ জানানো হয়েছে। বর্তমান সময়ে যখন আমরা অনেক ক্ষেত্রেই নেতিবাচক খবর দেখি, তখন এই রকম এক সুন্দর সন্ধ্যা নতুন করে আশা জাগায়, মন ভালো করে দেয়, আর মনে করিয়ে দেয় — বাংলা এখনও বাঁচে তার সংস্কৃতি, শিল্প আর মানবিকতার জন্য। এমন একটি উদ্যোগ শহরের সাংস্কৃতিক পরিবেশকে যেমন উজ্জ্বল করে তোলে, তেমনই তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এক ইতিবাচক বার্তা ছড়ায় — যে ভালো কাজ করলে, একদিন তার স্বীকৃতি মিলবেই। আর তাই আগামী বছর এই অনুষ্ঠানে কে কে সম্মানিত হবেন, তা জানার আগ্রহ আজ থেকেই তৈরি হয়ে গেল।