Saturday, April 19, 2025
Google search engine
Homeরাজনীতিঅন্যানো রাজনীতিবাণিজ্যযুদ্ধে মুখোমুখি ট্রাম্প ও চিন পিং

বাণিজ্যযুদ্ধে মুখোমুখি ট্রাম্প ও চিন পিং

Trump and Xi Jinping face off in trade war : বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে এক বিশাল নাটকীয়তা চলছে—একদিকে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, আর অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, দু’জনেই নিজেদের দেশের বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়েছেন এক ভয়ঙ্কর বাণিজ্য যুদ্ধে, যার প্রভাব শুধু যুক্তরাষ্ট্র আর চীনে সীমাবদ্ধ নয়, ছড়িয়ে পড়েছে সারা পৃথিবী জুড়ে, যার আঁচ লেগেছে ভারত, ইউরোপ, এমনকি বাংলাদেশেও, আর এই যুদ্ধ যেন থামার নামই নিচ্ছে না; ২০১৮ সালে ট্রাম্প যখন চীনের বিরুদ্ধে ৬০ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের ওপর শুল্ক চাপিয়ে দেন, তখন থেকেই শুরু এই ঠাণ্ডা যুদ্ধ, যার পাল্টা জবাবে চীনও আমেরিকান কৃষিপণ্য, প্রযুক্তি পণ্যসহ বহু জিনিসের ওপর শুল্ক আরোপ করে, ফলে দু’দেশের মধ্যকার আমদানি-রপ্তানি খাতে চরম টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়, এই দ্বন্দ্ব শুধু রাজনীতি বা অর্থনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে মার্কিন কৃষকদের ওপর, যারা সয়াবিন বা ভুট্টার মতো পণ্য চীনে রপ্তানি করতেন, তাদের অনেকেই আজ দেউলিয়া হওয়ার মুখে; আবার অ্যাপল, বোয়িং, হারলে ডেভিডসনের মতো বড় কোম্পানিগুলোও ব্যবসার ক্ষতি গুনছে কারণ উৎপাদনের খরচ বেড়ে গেছে, অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যে কোনও দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই,

সম্প্রতি তিনি এক বিরল ধাতু প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় গিয়েছিলেন যা বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় বার্তা বহন করে, কারণ চীন হচ্ছে বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ বিরল ধাতুর সরবরাহকারী, এই ধাতু ছাড়া মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, মিসাইল, এমনকি চিকিৎসা যন্ত্রপাতিও তৈরি করা যায় না, যদি চীন সত্যিই এই রপ্তানি বন্ধ করে, তবে আমেরিকার প্রযুক্তি শিল্পে বিশাল ধস নামতে পারে—এটাই যে ট্রাম্পের জন্য বড় বিপদ হতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য; এই যুদ্ধ যে শুধু দুই দেশের লড়াই নয়, বরং পুরো বিশ্বব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো, তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যখন ভারতসহ অনেক দেশ এই যুদ্ধের আঁচে পুড়ছে—যেমন ভারতের জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে ট্রাম্প সরাসরি জানিয়ে দেন, ‘আমরা আমেরিকান কোম্পানিকে সুরক্ষা দিতে চাই’, এতে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের অনেক পণ্য আমেরিকায় রপ্তানি করতে সমস্যা হচ্ছে, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমাদের দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা,

US China 1

অনেকে রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছেন, অনেকে আবার কর্মী ছাঁটাই করছেন, এই যুদ্ধ যে কতটা গভীরে গিয়েছে, তা বোঝা যায় যখন আন্তর্জাতিক সংস্থা IMF (ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড) ওয়ার্ল্ড ব্যাংক সতর্ক করে বলছে—এই বাণিজ্য যুদ্ধ যদি এখনই থামানো না হয়, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতি বড় মন্দার দিকে এগিয়ে যাবে; এমনকি মার্কিন বিনিয়োগ সংস্থা ব্রিজওয়াটার-এর প্রতিষ্ঠাতা রে ডালিওও বলেন, ‘এই ধরনের সংঘর্ষ কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি ভবিষ্যতে সামরিক সংঘর্ষেও রূপ নিতে পারে’; এই ভয়াল চিত্রের মধ্যেও ট্রাম্প থেমে নেই, তিনি নিজের সোশ্যাল মিডিয়াতে বলেন, “আমরা আমেরিকাকে আবার মহান করব, যে কোনো মূল্যে”, আর সি চিন পিং-এর জবাব, “চীন কারও চোখ রাঙানি মেনে নেবে না”, এই কথোপকথন যেন যুদ্ধের ডাকে পরিণত হয়েছে; বাংলাদেশও এই পরিস্থিতিতে নিশ্চিন্তে নেই, কারণ আমেরিকা ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য বাধা তৈরি হলে, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম ওঠানামা করে, ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বা প্রযুক্তি পণ্যের খরচ বেড়ে যায়, আবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বা আমেরিকার অর্ডার কমে যাওয়ায় শিল্পকারখানাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যার ফলে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে গার্মেন্টস কর্মীরা চাকরি হারাচ্ছেন কিংবা বেতন কম পাচ্ছেন; আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের মতে,

এই পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে হলে শুধু দুই দেশের নেতৃত্বের সদিচ্ছা দরকার, কারণ যুদ্ধ কেউ জেতে না—সবাই হারায়, কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই সদিচ্ছার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, বরং দুই নেতার মধ্যে কথার যুদ্ধ আরও ঘনীভূত হচ্ছে; রাজনৈতিক বিশ্লেষক টমাস ফ্রিডম্যান বলেন, ‘এটি আর বাণিজ্য যুদ্ধ নেই, এটি ক্ষমতা, আধিপত্য এবং এক নতুন বিশ্বব্যবস্থার লড়াই’, এই লড়াইয়ের শেষ কোথায়, তা কেউ জানে না, কিন্তু এটা নিশ্চিত, এই যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে, সাধারণ মানুষ তত বেশি ক্ষতির মুখে পড়বেন, আর সবার মনে সেই প্রশ্নই ঘুরছে—কে আগে হার মানবেন, ট্রাম্প নাকি চিন পিং?

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments