Friday, April 18, 2025
Google search engine
Homeপশ্চিমবঙ্গঅবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ, ধৃত ৪ বাংলাদেশী

অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ, ধৃত ৪ বাংলাদেশী

4 Bangladeshis arrested for entering India through system : জলপাইগুড়ি জেলার দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্ৰাম পঞ্চায়েতের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মানিকগঞ্জ বাজারের কাছে বৃহস্পতিবার দুপুরে যে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটল, তা যেন কোনও সিনেমার গল্পকেও হার মানায় – ছয় বছর আগে ভালোবাসার টানে এক বাংলাদেশি তরুণী অবৈধভাবে রাজস্থানে প্রবেশ করেছিল, বিয়ে করেছিল ভারতীয় যুবককে, সংসার করেছিল, দুই সন্তানের মা হয়েছিল, কিন্তু আজ যখন সেই নারী আবার নিজের দেশ বাংলাদেশে ফিরতে চেয়েছিল, তখন ধরা পড়ল সীমান্তে, তার সঙ্গে ধরা পড়ল আরও তিনজন, যার মধ্যে রয়েছে দুই শিশু এবং এক যুবক যিনি নিজেকে মহিলার দেওর বলে দাবি করেছেন, জলপাইগুড়ির মানিকগঞ্জ সীমান্তে টহলরত পুলিশের সন্দেহ হয় যখন তারা ওই চারজনকে সীমান্তবর্তী বাজার এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখে, জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে রোমহর্ষক তথ্য – ধৃত মহিলা সোহেনা আক্তার, বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর এলাকার বাসিন্দা,

1735029533588

রাজস্থানের এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ছয় বছর আগে, সেই সম্পর্কই তাকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে নিয়ে আসে, অবৈধভাবে প্রবেশ করে সে রাজস্থানে বসবাস শুরু করে, সেই যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় তার, তাদের সংসারে দুই সন্তান জন্মায়, কিন্তু সেই সংসার আজ ছেড়ে সে ফিরছিল নিজের দেশ, হয়তো একান্ত পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কোনও কারণেই এই ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত, তার সঙ্গে ছিল ভাইয়ের পরিচয়ে থাকা মুন্না খান, তবে পুলিশের সন্দেহ গভীর – কারণ তাদের কাছ থেকে ভারতীয় আধার কার্ড, মোবাইল ফোন ও ভারতীয় মুদ্রা উদ্ধার হয়েছে, যা স্পষ্ট করে দেয় যে দীর্ঘদিন ধরেই তারা এদেশে বসবাস করছিল, এমনকি বৈধ নথিপত্রের জোগাড় করেও ফেলেছিল, বিএসএফ সূত্রে জানা গেছে, এদিন দুপুরে তারা উম্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে চুপিসারে বাংলাদেশে প্রবেশের পরিকল্পনা করছিল, কিন্তু ঠিক আগেই মানিকগঞ্জ ফাঁড়ির পুলিশ তাদের ধরে ফেলে, ধৃতদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে যাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এই ঘটনাটি গভীর চিন্তার – কারণ অপরাধী যদি কোনও প্রাপ্তবয়স্ক হয়, শিশুরা তো শুধুই পরিস্থিতির শিকার, জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, “আমরা প্রাথমিকভাবে মানবিকতা বজায় রেখে তদন্ত করছি, তবে কোনওভাবেই দেশের নিরাপত্তা নিয়ে আপোষ নয়,” –

এই ধরনের অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনা কিন্তু নতুন নয়, জলপাইগুড়ি, কুচবিহার, মালদহের মতো সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে এই প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, কিছু ক্ষেত্রে পারিবারিক কারণ, আবার কিছু ক্ষেত্রে চোরাচালান বা মানবপাচার চক্রের অংশ হয়ে এই অনুপ্রবেশ ঘটে – বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্মুক্ত সীমান্তের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির দালালচক্র এই কাজগুলো পরিচালনা করে, স্থানীয় গ্রামবাসীরা বলছেন, “এমন অনেকেই দিনের পর দিন আমাদের এলাকায় ঘোরাফেরা করে, চেনা মুখ নয় বলেই সন্দেহ হয়,” জলপাইগুড়ি আদালতে শুক্রবার ধৃতদের পেশ করা হয়েছে এবং আদালত তাদের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে, তদন্ত চলছে তাদের ভারতে প্রবেশের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও এখানে কাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তা জানার জন্য, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ঘটনার পেছনে বৃহত্তর চক্রান্তও থাকতে পারে, কারণ শুধু প্রেম বা সংসারের কথা বলে সীমান্ত পার হওয়া সহজ নয়, আর একবার যারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করে ফেলেছে, তাদের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে কোনও রকম নিরাপত্তা বিপর্যয় ঘটানো হতে পারে – তাই এই ঘটনা যেমন মানবিক প্রশ্ন তোলে, তেমনি জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুও সামনে আনে, স্থানীয় সমাজকর্মী মনোরঞ্জন বসু বলেন, “এই শিশুদের ভবিষ্যৎ কোথায়? তাদের তো কোনও দোষ নেই, কিন্তু তারা এখন আইন ও নিরাপত্তার জটিল জালে আটকে পড়েছে,

” কেন্দ্রীয় সরকার যদিও সীমান্তে নজরদারি ও প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণে জোর দিচ্ছে, তবু মানুষের মনের টান কিংবা অসাধু উদ্দেশ্যের চক্রান্ত এখনও এই অনুপ্রবেশের পথ রোধ করতে পারেনি, এই ধরনের ঘটনা প্রতিবার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, মানবিকতার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তাও কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব – সত্য ও উদ্দেশ্যকে চিহ্নিত করা এবং কোনও দোষীকে ছাড় না দেওয়া, আবার কোনও নিরপরাধ বিশেষ করে শিশুদের যেন অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে না ঠেলে দেওয়া হয়, এই ঘটনায় বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা আরও কড়া করা হয়েছে বলে বিএসএফ সূত্রে খবর, পাশাপাশি এই ধরনের পরিস্থিতি যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়ে একটি স্থায়ী সমাধানের খোঁজ চলছে, সবমিলিয়ে জলপাইগুড়ি সীমান্তের এই ঘটনাটি শুধুই একটি অনুপ্রবেশের ঘটনা নয়, এটি বহু প্রশ্নের জন্ম দেয় – প্রেম, সংসার, নিরাপত্তা, মানবিকতা আর আইন – সব মিলিয়ে এক বিষণ্ণ বাস্তবতার মুখোমুখি আমরা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments