Bengal BJP leadership arrives at Dilip Ghosh’s house with gifts:নিউটাউনের এক শান্ত বিকেলে রাজনীতির চেনা চেহারা যেন একটু বদলে গেল—না, কোনও রাজনৈতিক বৈঠক বা সাংবাদিক সম্মেলন নয়, বরং একেবারে ঘরোয়া, স্নিগ্ধ এক মুহূর্ত। কারণ শুক্রবার বিকেলে জীবনের এক নতুন অধ্যায়ে পা রাখতে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন বিজেপি রাজ্য সভাপতি, বর্তমানে বিজেপি সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিবাহের আগে, তাঁর বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব, উপহার হাতে, হাসিমুখে, ভালবাসা নিয়ে। সুকান্ত মজুমদার, লকেট চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো সহ আরও অনেক নেতা-কর্মী এদিন উপস্থিত ছিলেন দিলীপবাবুর নিউটাউনের বাড়িতে। রাজনীতির ব্যস্ততা ছেড়ে সবার মুখেই যেন একটু প্রশান্তি, একটু পারিবারিক স্নেহের ছোঁয়া। ঘরোয়া পরিবেশে তাঁদের উপস্থিতি যেন বোঝাল, রাজনৈতিক সম্পর্ক ছাড়াও, এই মানুষগুলির মধ্যে এক আন্তরিক বন্ধন আছে।দিলীপ ঘোষ, যাঁকে সাধারণ মানুষ একজন অকুতোভয় নেতা বলেই চেনে—তিনি বহুবার শাসকদলের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন, রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন, দলের মুখ হয়ে বহু বিতর্কিত মন্তব্যও করেছেন—সেই দিলীপবাবু হঠাৎ করে এমন এক ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিলেন, যা শুধু রাজনৈতিক মহলে নয়, সাধারণ মানুষের মনেও বিস্ময় তৈরি করেছে। কারণ বহু বছর ধরেই তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠমহলের মতে, এই সিদ্ধান্ত তাঁর দীর্ঘদিনের চিন্তার ফল, এবং এই পরিণয় নিঃসন্দেহে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে এক নতুন ছায়া ফেলবে।
এই ঘরোয়া বৈঠকে শুধু রাজনীতির আলোচনা নয়, বরং ছিল এক অন্তরঙ্গ মিলনমেলা। দিলীপবাবুর মা’র সঙ্গে কথাবার্তা বলেন নেতারা, উপহার তুলে দেন হাতে, মিষ্টিমুখ করানো হয়—সব মিলিয়ে যেন এক আত্মীয় বাড়ির বরণ অনুষ্ঠান। বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারিত হয়েছে বিকেল সাড়ে ৫টা, যেখানে দিলীপ ঘোষ ও পাত্রী রিঙ্কু মজুমদার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবেন। পাত্রীর সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য না মিললেও জানা গেছে, তিনি এক শিক্ষিত, রুচিশীল ঘরের মেয়ে এবং দিলীপবাবুর সঙ্গে বহুদিনের পারিবারিক পরিচয় থেকেই এই সম্পর্কের শুরু। দু’জনেই পরিবারের সম্মতিতেই এই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে গেছেন।দিলীপবাবুর এই বিয়ে যেন বঙ্গ রাজনীতিতে এক বিরল ঘটনা হয়ে উঠেছে। সাধারণত রাজনীতিকদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খুব বেশি হইচই হয় না, কিন্তু দিলীপবাবুর মতো একজন জননেতা যিনি সবসময় খবরের শিরোনামে থাকেন, তাঁর এই নতুন জীবনযাত্রা সাধারণ মানুষ এবং দলীয় কর্মীদের মধ্যে এক নতুন কৌতূহল তৈরি করেছে। অনেকে বলছেন, “বিয়েটা হয়তো দেরিতে করছেন, কিন্তু ঠিক সময়েই করলেন। রাজনীতির বাইরে নিজের জীবনের শান্তিটাও দরকার।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “দিলীপদা আমাদের পথপ্রদর্শক। আজকের এই ব্যক্তিগত মুহূর্তে আমরা সবাই তাঁর পাশে থাকতে চেয়েছি। ওঁর নতুন জীবনের জন্য শুভেচ্ছা।”

তবে শুধু শুভেচ্ছা নয়, এই ঘটনা ঘিরে নানা ধরনের আলোচনাও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, দিলীপ ঘোষ কি এখন একটু বেশি পারিবারিক হবেন? রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কি এর কোনও প্রভাব পড়বে? যদিও বিজেপি নেতৃত্ব এবং দিলীপবাবুর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, এই বিবাহের জন্য কোনও কর্মসূচির পরিবর্তন হচ্ছে না। দিলীপবাবু যথারীতি তাঁর রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করে চলবেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য মনে করছেন, এই বিয়ে হয়তো তাঁকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও স্থিতধী করে তুলতে পারে, কারণ একজন সংসারী মানুষ যখন সমাজের বৃহৎ স্তরে নেতৃত্ব দেন, তখন তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিও অনেকটা পরিণত হয়।এই বিবাহ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের মধ্যে রয়েছেন দিলীপবাবুর মা, ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, পাত্রী রিঙ্কু মজুমদারের পরিবার, এবং দু’-একজন বন্ধু। বিয়ের স্থান, সাজসজ্জা, আচার-অনুষ্ঠান সবই হবে অত্যন্ত অনাড়ম্বরভাবে, একেবারে ঘরের মধ্যে। দিলীপবাবুর মতো একজন রাজনৈতিক নেতার পক্ষ থেকে এমন সরল বিয়ে যেন এক অনন্য বার্তা দেয়—“জীবনের বিশেষ মুহূর্তগুলো বড় করে দেখাতে হয় না, বরং আন্তরিকতাই আসল।”এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর, সোশ্যাল মিডিয়া ভরে গেছে শুভেচ্ছা বার্তায়। অনেকে বলছেন, “রাজনীতি হোক যেমনই, এইভাবে একজন মানুষকে ব্যক্তিগত জীবনে এগোতে দেখে ভালো লাগে।” কেউ লিখেছেন, “দিলীপদা সর্বদাই ছিলেন ব্যতিক্রমী, বিয়েতেও তাই করলেন চমক।”বিবাহ জীবনের একটি বড় সিদ্ধান্ত। একজন নেতা হিসেবে যিনি সবসময় জনতার সামনে কঠোর, প্রতিবাদী এবং তীক্ষ্ণ বক্তব্যের জন্য পরিচিত, সেই দিলীপ ঘোষ এবার জীবনসঙ্গীর সঙ্গে এক নতুন পথচলা শুরু করতে চলেছেন। তাঁর এই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত যদি তাঁকে আরও সংবেদনশীল, মানবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলে, তবে তা রাজনৈতিক জীবনের পক্ষেও ইতিবাচক হয়ে উঠতে পারে।