Attempted theft at temple in Bidhannagar, Durgapur, 2 arrested:পহেলা বৈশাখের রাত্রে যখন গোটা বাংলা নতুন বছরের আনন্দে মাতোয়ারা, তখনই দুর্গাপুরের বিধাননগরে ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা, যা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে এলাকার অলিতে গলিতে। বিধাননগরের ডিডিএ মার্কেট সংলগ্ন বহু বছরের পুরোনো কালীমন্দিরে ঘটল চুরির চেষ্টা, আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতারাতি উত্তাল হয়ে উঠল স্থানীয় মানুষজনের আবেগ ও নিরাপত্তার প্রশ্ন। ঘটনাটি ঘটে ১৪২২ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন অর্থাৎ ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৪ এপ্রিল, রাত্রি প্রায় ১১টা নাগাদ, যখন কালীমন্দিরে রাতের শেষ পুজো শেষ করে পুরোহিত বাড়ি ফিরে যান।

কিছুক্ষণের মধ্যেই চার-পাঁচ জনের একটি দল মন্দির চত্বরে ঢুকে পড়ে এবং মন্দিরের লোহার দরজা ভাঙার চেষ্টা করে বলে স্থানীয়দের দাবি। ঠিক সেই সময়ই আশপাশের কিছু লোকজন যারা গরমের রাতে বাইরে বসে গল্প করছিলেন, তারা দরজা ভাঙার আওয়াজ পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। তৎক্ষণাৎ চোরেরা ঘটনাস্থল ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করে, তবে স্থানীয়রা বিষয়টি মন্দির কমিটিকে জানালে, তাঁরা বিধাননগর পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ দায়ের করেন। পরদিনই পুলিশের তৎপরতায় ঘটনাস্থলের আশেপাশে লাগানো সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে দুজন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করা হয়। রাতারাতি অভিযান চালিয়ে বিধাননগরের কমিউনিটি সেন্টার এলাকা থেকে ওই দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের নাম এখনও সরকারিভাবে জানানো হয়নি, তবে তারা স্থানীয় নয় বলেই প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।
বিধাননগর ফাঁড়ির পুলিশ জানিয়েছে, চুরির চেষ্টার পেছনে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে এবং ধৃতদের জেরা করে চক্রের মূল মাথাদের খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা চলছে। এদিন সকালে ধৃত দুই ব্যক্তিকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানানো হয়েছে। মন্দির কমিটির সভাপতি শ্রী বিপ্লব ঘোষ বলেন, “এই মন্দির শুধু পুজোর জায়গা নয়, আমাদের আবেগ, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির কেন্দ্র। এখানে চুরির চেষ্টা মানে গোটা সমাজের উপর আঘাত। আমরা চাই পুলিশ দোষীদের কঠোর শাস্তি দিক।” স্থানীয় বাসিন্দা সরলা দেবী বলেন, “মেয়েরা রাতে একা বেরোতে ভয় পায়। মন্দিরে যদি নিরাপদ না থাকে, তবে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?” এই ঘটনার পর থেকেই এলাকায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনেকেই বলছেন, মন্দিরের মত পবিত্র জায়গায় যদি চুরির চেষ্টা হয়, তবে সাধারণ মানুষ কতটা নিরাপদ? অপরাধীরা মন্দিরে প্রবেশ করে চুরি করতে পারে, ভাবতেই গা শিউরে ওঠে।

এলাকার প্রবীণ নাগরিক শ্যামলাল ঘোষের কথায়, “আগে এমনটা কখনও হয়নি। এটা আমাদের সংস্কৃতির অবমাননা। আইনকে কঠোর হাতে ব্যবস্থা নিতে হবে।” পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, মন্দির চত্বরে পর্যাপ্ত আলো ও আরও উন্নতমানের সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর জন্য মন্দির কমিটিকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, পাড়ায় পাড়ায় রাত্রিকালীন পুলিশ টহল আরও বাড়ানো হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিধাননগর থানার ইনচার্জ। দুর্গাপুরের বিধাননগর এলাকায় এই ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা আগে খুব কমই ঘটেছে, তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ঘটনাটি গভীর আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে পহেলা বৈশাখের রাতে, যখন সকলে আনন্দ-উৎসব ও পারিবারিক জমায়েতে ব্যস্ত, তখন এরকম একটা ঘটনা গোটা এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁকফোকর স্পষ্ট করে দেয়। মন্দির কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, খুব শীঘ্রই মন্দিরে নিরাপত্তা বাড়ানো হবে, এবং স্থানীয় ক্লাবগুলোর সঙ্গে মিলে এলাকায় একটি ‘নাইট ভলান্টিয়ার টিম’ গঠন করা হবে যারা রাতের দিকে এলাকায় নজরদারি রাখবেন। চোরেরা কী উদ্দেশ্যে মন্দিরে ঢুকেছিল, সেটাও পুলিশ খতিয়ে দেখছে। শুধুই সোনার গহনা, দানবাক্সের টাকা চুরি না কি এর পেছনে আছে কোনও তন্ত্র-মন্ত্রের চক্র, সেই দিকেও নজর দিচ্ছে তদন্তকারী দল। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই মন্দিরে একাধিকবার বড় বড় পূজা-উৎসবের সময় বহু দামি গহনা ও রত্ন ব্যবহার করা হয়, যা হয়তো চোরদের টার্গেট ছিল।

ঘটনাটি দুর্গাপুর শহরের সামাজিক পরিবেশ ও ধর্মীয় আবেগের উপরও গভীর প্রভাব ফেলেছে। ভক্তদের একাংশ মন্দিরে আবার ‘শুদ্ধিকরণ যজ্ঞ’ করার কথা ভাবছেন। এলাকার শিশু ও মহিলাদের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে। অনেকেই বলছেন, এটি শুধুমাত্র একটি চুরির চেষ্টা নয়, এটি আমাদের ধর্মীয় পরিকাঠামোতে আঘাত। এই ঘটনার পরে প্রশাসন, পুলিশ এবং সমাজের সকলে মিলে যদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেন, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেবল একটি মন্দির নয়, এই শহরের প্রতিটি ধর্মস্থান যেন নিরাপদ থাকে, তার দায়িত্ব এখন প্রশাসনের। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব সকলেরই। এখন গোটা দুর্গাপুর তাকিয়ে আছে, কবে এই দুষ্কৃতীদের কঠোর সাজা হবে আর এলাকায় স্বাভাবিক ছন্দ ফিরবে।