Tuesday, April 15, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্য৬ দিন ধরে গণধর্ষণ, বারাণসী কাণ্ডে গ্রেফতার ১২

৬ দিন ধরে গণধর্ষণ, বারাণসী কাণ্ডে গ্রেফতার ১২

Gang rape for 6 days, 12 arrested in Varanasi case: ফিরে এল আরেকটা লজ্জার কাহিনি, আবারও মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিল উত্তরপ্রদেশের বারাণসী শহর। এক ১৯ বছরের তরুণীকে লাগাতার ৬ দিন ধরে গণধর্ষণ করার অভিযোগে রীতিমতো সাড়া পড়ে গেছে গোটা দেশে, আর এই খবর সামনে আসতেই বারাণসীর আধ্যাত্মিক শহর যেন আচমকাই রূপ নিল নরকের দরজায়। ২৩ জন যুবক মিলে ওই তরুণীকে মাদক খাইয়ে, চক্রান্ত করে শহরের একাধিক হোটেলে আটকে রেখে যে নির্যাতন করেছে, তা শুধু ভয়ানকই নয়, মনুষ্যত্বকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ঘটনার শুরু ২৯শে মার্চ, যখন অভিযোগ অনুযায়ী এক পরিচিত যুবকের হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিল নির্যাতিতা। এরপর শুরু হয় ৬ দিনের এক নারকীয় অধ্যায়, যা শেষ হয় ৪ঠা এপ্রিল। জানা গেছে, অভিযুক্তরা প্রথমে তরুণীকে মাদক খাইয়ে অচেতন করে এবং তারপর একের পর এক হোটেলে নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরিবার ৬ই এপ্রিল বারাণসীর লঙ্কা থানায় অভিযোগ দায়ের করে এবং তারপরই গোটা ঘটনা সামনে আসে। পুলিশের তৎপরতায় ইতিমধ্যে ২৩ জন অভিযুক্তের মধ্যে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, আর বাকি ১১ জন এখনও পলাতক। বারাণসী পুলিশের কমিশনার অশোক মুথা জৈন জানিয়েছেন, “আমরা ইতিমধ্যেই ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছি এবং বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এই ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির পাশাপাশি সদ্য কার্যকর হওয়া ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS) অনুযায়ী একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে—যেমন গণধর্ষণ, অপহরণ, ষড়যন্ত্র, এবং মাদক প্রয়োগের মতো গুরুতর অভিযোগ। জানা গেছে, অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজন শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে, আবার কেউ কেউ স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

যার ফলে রাজনৈতিক মহলেও শোরগোল পড়ে গেছে। এই ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ডিজিকে দ্রুত তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর অফিস (PMO) সূত্রে বলা হয়েছে, “এই ধরণের বর্বরতা মেনে নেওয়া যায় না। অভিযুক্তদের যেন এক মুহূর্তও ছাড় না দেওয়া হয়।” মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও এই ঘটনার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং জানান, “এই ঘটনার দোষীরা কেউই রেহাই পাবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে তাদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে।” নির্যাতিতার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “আমরা কোনওভাবেই বুঝতে পারিনি, মেয়েটা কীভাবে এমন একটা চক্রে জড়িয়ে পড়ল। আমরা চাই, প্রত্যেক অপরাধীর যেন ফাঁসি হয়।” এই ঘটনা বারাণসীর শান্তিপূর্ণ এবং আধ্যাত্মিক ভাবমূর্তিতে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে। বারাণসী, যা কাশী বা বেনারস নামেও পরিচিত, দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের সবচেয়ে পুরনো এবং পবিত্র শহর হিসেবে বিবেচিত। গঙ্গার তীরে অবস্থিত এই শহর হিন্দু ধর্মের অন্যতম তীর্থক্ষেত্র, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার পুণ্যার্থী ও পর্যটক আসেন। কিন্তু এই ধরণের অপরাধ বারাণসীর সামাজিক কাঠামো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। স্থানীয়রা বলছেন, “এই শহর কাশী বিশ্বনাথের, এখানে এত বড় অপরাধ কীভাবে ঘটে গেল তা ভাবতেই শিউরে উঠছি।

Rape

প্রশাসনের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত।” অপরাধ ও সমাজ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এই ধরনের ঘটনা শুধু আইনি বা প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, এটা সমাজের ভেতরেই একটা গভীর পচনের প্রতিফলন। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নৈতিক শিক্ষার অভাব, মাদকাসক্তির প্রবণতা এবং নারীর প্রতি অবজ্ঞার মানসিকতা এই ধরনের ঘটনা বাড়াচ্ছে।” এই ঘটনা দেশজুড়ে নারী সুরক্ষা নিয়ে ফের একবার বিতর্কের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। দিল্লি, হায়দরাবাদ, উনাও, হাথরাসের মতো দৃষ্টান্তগুলো আগেও কাঁপিয়ে দিয়েছিল দেশকে, আর এখন বারাণসী তার আরও একটা অধ্যায় লিখল। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে—#JusticeForBanarasGirl, #HangTheRapists, #SaveOurDaughters, #BetiBachaoBetiPadhao ট্রেন্ড করতে শুরু করেছে টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, “কী লাভ এমন সব স্লোগানের, যদি বাস্তবে মেয়েরা নিরাপদ না হয়?” অপরদিকে, প্রশ্ন উঠেছে হোটেল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নিয়েও। কীভাবে একাধিক হোটেলে লাগাতার ৬ দিন ধরে এমন ঘটনা ঘটল, আর তারা কিছুই টের পেল না? পুলিশ জানিয়েছে, কিছু হোটেল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা সন্দেহজনক এবং তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করা হচ্ছে। বারাণসীর পর্যটন দপ্তরও বলছে, “আমরা হোটেলগুলোর লাইসেন্স রিভিউ করছি, যারা এই ধরনের অপরাধে সাহায্য করেছে বা চোখ বন্ধ রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অপরাধীদের মধ্যে কিছু নাবালকও রয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে জুভেনাইল আইনের অধীনেও মামলা চলবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এই ঘটনার ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “অবিলম্বে অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে সমাজে আরও অপরাধপ্রবণতা বাড়বে। মেয়েরা যদি ন্যায় না পায়, তবে এর প্রভাব পড়বে আগামী প্রজন্মের মননে।” রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও এই ঘটনার নিন্দা করে বলেছেন, “ভারতবর্ষে নারীদের সম্মান রক্ষা করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব, এরকম লজ্জাজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন আর না হয়।” এখন গোটা দেশের চোখ বারাণসীর সেই ১১ পলাতক অভিযুক্তের গ্রেপ্তারি এবং এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে। পরিবার, সমাজ, প্রশাসন সবাই চাইছে একটাই—ন্যায়। এই ঘটনায় শুধু একটি মেয়ের জীবন ধ্বংস হয়নি, সমাজের চেতনাও যেন ঝাঁকুনি খেয়েছে। এখন দেখার, সরকার, প্রশাসন ও সমাজ একসঙ্গে মিলে এই ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে কেমন লড়াই চালাতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments