Tuesday, April 15, 2025
Google search engine
HomeUncategorised আবারও ইকুয়েডরের শীর্ষে নোবোয়া

 আবারও ইকুয়েডরের শীর্ষে নোবোয়া

Noboa at the top of Ecuador again : ইকুয়েডরের রাজনীতির মঞ্চে আবারও ফিরে এলেন এক পরিচিত মুখ—ড্যানিয়েল নোবোয়া। দেশটির ২০২৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও জয়লাভ করে রক্ষণশীল দলের হয়ে তিনিই হতে চলেছেন দেশটির শীর্ষ নেতা। এবারের ভোটে ৯২ শতাংশ গণনার ফলাফলে দেখা গেছে, তিনি পেয়েছেন ৫৫.৮ শতাংশ ভোট, যেখানে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বামপন্থী প্রার্থী লুইসা গঞ্জালেস পেয়েছেন ৪৪.১ শতাংশ ভোট। এক কথায়, বেশ পরিষ্কার ব্যবধানেই জয়লাভ করেছেন নোবোয়া, তবে এই জয় একেবারে বিতর্কহীন নয়—কারণ এবার ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে দিয়েছেন পরাজিত গঞ্জালেস। তিনি সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “ইকুয়েডরের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে কুৎসিত ভোট জালিয়াতির ঘটনা।” তাঁর এই অভিযোগ নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যার প্রভাব দেশের রাজনীতিতে কিছুদিন ধরেই চলবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৩ সালেও একই প্রতিদ্বন্দ্বী গঞ্জালেসকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন নোবোয়া। সেবারও এক নতুন নেতৃত্বের আশায় মানুষ তাকে নির্বাচিত করেছিল, কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে তাঁকে সময়ের আগেই নতুন নির্বাচনে অংশ নিতে হয়। সেই নির্বাচনেরই ফলাফল এবার আবার নোবোয়াকে ক্ষমতার শীর্ষে ফিরিয়ে আনল।

ABVTA6NJJZDG5F57T4KZ2PMRFM

নোবোয়া এক তরুণ এবং গতানুগতিক রাজনীতিকদের থেকে একটু আলাদা ভাবমূর্তির অধিকারী। ৩৬ বছর বয়সী এই নেতা শুধু রাজনীতিবিদ নন, একইসাথে একজন সফল ব্যবসায়ীর পরিচয়ও বহন করেন। তিনি ইকুয়েডরের অন্যতম ধনী পরিবার থেকে উঠে এসেছেন, তাঁর বাবা আলভারো নোবোয়াও একাধিকবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তবে বাবার তুলনায় ড্যানিয়েল রাজনীতিতে কিছুটা বাস্তববাদী ও মিতব্যয়ী পথে হাঁটতে পছন্দ করেন। এবারের নির্বাচনী প্রচারে তিনি কর আরোপে কড়াকড়ি, ব্যয় সংকোচন, আর্থিক শৃঙ্খলা এবং ২০২৫ সালের মধ্যে অর্থনীতিতে ৪ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী গঞ্জালেস চাইছিলেন দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়ার সময়কার সামাজিক নিরাপত্তা নীতিগুলোর পুনঃপ্রবর্তন করতে, যার মধ্যে ছিল গরিবদের জন্য ভর্তুকি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি, আর কম আয়ের পরিবারদের সহায়তা।

তবে নির্বাচন নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। ইকুয়েডরে ভোটদান বাধ্যতামূলক, যার অর্থ ৬৫ বছরের নিচে সবাইকে ভোট দিতে হয়—না হলে ৪৬ মার্কিন ডলার পর্যন্ত জরিমানা দিতে হয়। এ ব্যবস্থার কারণে ভোটারদের অংশগ্রহণ খুব বেশি হলেও ভোট কারচুপির অভিযোগকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। গঞ্জালেসের অভিযোগ অনুযায়ী, অনেক কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেমে গড়বড়, ভোটার তালিকা নিয়ে অনিয়ম ও কিছু এলাকায় তার সমর্থকদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। যদিও এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, তবে তদন্তের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। ইকুয়েডরের নির্বাচন কমিশন যদিও জানিয়েছে যে পুরো প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হয়েছে, তবুও রাজনৈতিক উত্তেজনা কিছুতেই কমছে না।

স্থানীয়ভাবে এই রাজনৈতিক পালাবদল সাধারণ মানুষের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। নোবোয়ার করনীতি ও ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে অনেকেই ভাবছেন সরকারি ভর্তুকি কমে যেতে পারে, বিশেষ করে কৃষিজ এবং ছোট ব্যবসার ক্ষেত্রে। ইতিমধ্যেই কুইটো, গায়াকিল সহ বিভিন্ন শহরে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কুইটোতে এক চা বিক্রেতা রোজা মোরালেস বলেন, “নতুন প্রেসিডেন্ট যা বলছেন, তা ভালো শোনালেও, আমরা সাধারণ মানুষ কিন্তু চুলায় ভাত চড়াতে পারছি কিনা সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।” আবার কেউ কেউ আশাবাদী—যেমন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাভিয়ের কাস্ত্রো জানালেন, “নোবোয়া তরুণ, শিক্ষিত এবং আধুনিক চিন্তাধারার মানুষ। আমরা চাই এবার তিনি সত্যিই কিছু কাজ করে দেখান।”

নোবোয়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন দেশের ক্রমবর্ধমান অপরাধ, বিশেষ করে গ্যাং হিংসা ও মাদক পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। ২০২৩ সাল থেকে ইকুয়েডরে সহিংসতা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে। তার পূর্বসূরি গুইলার্মো লাসো এই পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। নোবোয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্স’ তৈরি করে এই অপরাধ দমন করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তা কতটা কার্যকর হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

আন্তর্জাতিক মহলেও এই নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ নির্বাচনের ফলাফলকে স্বাগত জানালেও ভোট কারচুপির অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ জানিয়েছে, “ভোটার অধিকার রক্ষা করতে হবে। নির্বাচন যেন দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল না করে।”

সব মিলিয়ে, নোবোয়ার ফিরে আসা শুধু একটি নির্বাচনী জয় নয়, বরং ইকুয়েডরের ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ। তিনি যেভাবে দেশ চালাবেন, তা ঠিক করে দেবে শুধু বর্তমান পরিস্থিতি নয়, আগামী দিনের অর্থনীতি, সমাজ ও রাজনীতির দিকনির্দেশও। তাঁর প্রতিশ্রুতি যদি বাস্তবে পরিণত হয়, তাহলে হয়তো দেশ কিছুটা উন্নতির পথে হাঁটবে, তবে ব্যর্থ হলে সাধারণ মানুষের হতাশা আরও তীব্র হবে। এখন প্রশ্ন একটাই—নোবোয়া কি পারবেন নিজের প্রতিশ্রুতি রাখতে?

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments