Hindutva flag-planting program to stop cars on the road:রানীগঞ্জের সাহেবগঞ্জ মোড় শুক্রবার সন্ধ্যায় এক ভিন্ন চিত্রের সাক্ষী থাকলো, যেখানে রাস্তায় চলন্ত গাড়ি আটকে তাতে ‘হিন্দুত্বের ধ্বজ’ লাগানো হয় আসানসোল সাংগঠনিক জেলা বিজেপি যুব মোর্চার পক্ষ থেকে। যুব মোর্চার এই কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন অভিক কুমার মন্ডল, যিনি জানান এই পদক্ষেপ ছিল সম্প্রতি কলকাতায় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার প্রতিবাদস্বরূপ। সেখানে অভিযোগ, হিন্দুত্বের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত কিছু পতাকা পথ চলতি মানুষের গাড়ি থেকে খুলে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল, আর সেই ঘটনাকে অপমানজনক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে করছেন বিজেপি-র যুব শাখার কর্মীরা। তাই সাহেবগঞ্জ মোড় এলাকায় পথচলতি বাইক, স্কুটার, চারচাকা গাড়ি আটকে নিজ হাতে চালকের অনুমতি ছাড়াই গাড়ির সামনের দিকে পতাকা লাগিয়ে দেন তারা, যার ফলে ওই এলাকায় কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বিঘ্নিত হয় এবং মানুষ অবাক হয়ে যান এমন আচরণে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন আমাদের প্রতিবেদক এবং তিনি জানান, অনেকেই এই কর্মসূচিকে ‘ধর্মীয় চেতনায় জাগরণ’ বললেও, কেউ কেউ এতে বিরক্তি প্রকাশ করেন, কারণ তাঁদের মতে, কারো ব্যক্তিগত যানবাহনে কারো মতামত বা বিশ্বাস চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। তবে স্থানীয় থানার তরফে জানানো হয়েছে, কর্মসূচিটি ছিল শান্তিপূর্ণ এবং কোনও বড় ধরনের গোলযোগ তৈরি হয়নি। এক পথচারী, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুল শিক্ষক বলেন, “আমি ধর্মে বিশ্বাস করি, কিন্তু গাড়ি আটকে জোর করে পতাকা লাগানোটা ঠিক পন্থা নয়। যার মনে হিন্দুত্ব আছে, সে নিজে থেকেই লাগাবে।” অন্যদিকে, অভিক মন্ডল জানান, “এটা কোনও ধর্মীয় জবরদস্তি নয়, এটা আমাদের ঐতিহ্য রক্ষার একটি নিদর্শন। যখন হিন্দুত্বের প্রতীক নিয়ে খোঁচা দেওয়া হয়, তখন আমাদের প্রতিবাদ করতেই হবে, আর আমরা সেটা পতাকার মাধ্যমে করেছি।
” বিজেপি যুব মোর্চার আরও অনেক সদস্য সেই সন্ধ্যায় মোড়ে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে প্রতিবাদ জানান এবং ‘হিন্দু জাগো’, ‘ধ্বজ লাগাও, সংস্কৃতি বাঁচাও’-র মতো স্লোগান তোলেন। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এই কর্মসূচি যদি ধার্মিক ঐক্যের কথা বলে, তবে এমন কর্মকাণ্ডে কি ধর্মীয় সম্প্রীতি বিঘ্নিত হয় না? এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এলাকার সামাজিক মাধ্যমে বহু রকমের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে—কারো মতে এটি সাংবিধানিক অধিকার চর্চার অংশ, আবার কেউ কেউ একে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে মনে করছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, কোনও পূর্ব অনুমতি ছাড়াই এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছিল, কিন্তু যেহেতু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং কোনও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়নি, তাই পুলিশ কোনও হস্তক্ষেপ করেনি। যদিও প্রশাসনের এক আধিকারিক নাম প্রকাশ না করে জানান, “এই ধরনের কর্মসূচি আগে জানিয়ে করলে ভালো হয়। শহরের রাস্তায় হঠাৎ করে গাড়ি থামানো আইনত ঠিক নয়।”

এক প্রবীণ সমাজকর্মী শ্রী কল্যাণ বসু বলেন, “যে কোনও ধর্ম বা মতবাদ নিয়ে মানুষের নিজস্ব চিন্তাধারা থাকতে পারে, কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশে কারো ব্যক্তিগত মতামত অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া কখনওই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা চাই সমাজে শান্তি থাকুক, মতের মিল-অমিল থাকতেই পারে, কিন্তু সহানুভূতির জায়গা যেন না হারায় কেউ।” এই ঘটনা আমাদের বড় একটা প্রশ্নের সামনে এনে দাঁড় করায়—যখন ধর্ম ও রাজনীতি হাত ধরাধরি করে পথে নামে, তখন সাধারণ মানুষের মতপ্রকাশ ও স্বাধীনতা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? কীভাবে নিশ্চিত করা যায় যাতে একজনের ধর্মবিশ্বাস অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করে? ভবিষ্যতে এই ধরনের কর্মসূচি কী ধরণের সামাজিক প্রভাব ফেলবে, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়, কিন্তু একটি বিষয় পরিষ্কার—এখানে ধর্মকে কেন্দ্র করে রাজনীতি যে আরও এক ধাপ এগোলো, তাতে সন্দেহ নেই। তাছাড়া, এই ঘটনার জেরে রাজ্যে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত সময়ে এমন কোনও কর্মসূচি ভবিষ্যতে আরও বড় আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি ভবিষ্যতে এই ধরনের ধর্মীয় প্রতীক সংক্রান্ত কর্মসূচিকে নিয়ন্ত্রিত না করা হয়, তাহলে তা আইনশৃঙ্খলার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। সাধারণ মানুষ ও নাগরিক সমাজের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ—তারা চাইলে সচেতনতা ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বিষয়গুলোকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। সবমিলিয়ে, এই কর্মসূচি যেমন হিন্দুত্ববাদীদের মধ্যে একতা তৈরি করেছে, তেমনি সমাজের একটি অংশের মধ্যে দুশ্চিন্তাও ছড়িয়েছে, যে দেশে ধর্মের নামেই বিভাজন তৈরি হচ্ছে কি না, এবং সেটাই ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় আশঙ্কার জায়গা।