No more ‘blue screen’, new surprise from Microsoft!:একটা সময় ছিল যখন অফিসে বসে কাজ করছেন বা কলেজের প্রজেক্টে মগ্ন, আর হঠাৎ কম্পিউটারটা দমকা বাতাসের মতো আচরণ করে স্ক্রিনটা নীল হয়ে যায়। সব কিছু বন্ধ, কিছুই আর কাজ করছে না—এটাই সেই ber berühmte ‘Blue Screen of Death’ বা ‘মৃত্যুর নীল পর্দা’। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি এমন কম্পিউটার ব্যবহারকারী বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই নীল রঙের স্ক্রিন যেন কম্পিউটারে কাজ করা মানুষের জন্য ছিল এক আতঙ্কের নাম, এক ভয়ের সঙ্কেত—যে মুহূর্তে নীল স্ক্রিন দেখলেই বোঝা যেত কিছু একটা সাংঘাতিক সমস্যা হয়েছে, আর কাজগুলো হয়তো পুনরুদ্ধারই করা যাবে না। তবে এবার সেই চেনা রঙের আতঙ্ক থেকেই মুক্তি দিতে চলেছে মাইক্রোসফট। কোম্পানির তরফে জানানো হয়েছে, তারা তাদের জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজে (Windows) নীল স্ক্রিনের বদলে নতুন রঙের স্ক্রিন নিয়ে আসছে, এবং এই পরিবর্তন ইতিমধ্যেই উইন্ডোজ ১১ ভার্সনে দেখতে পাওয়া যাবে। নতুন পরিবর্তনের ফলে, নীল স্ক্রিনের জায়গায় এবার থেকে ব্যবহারকারীরা দেখতে পাবেন সবুজ স্ক্রিন, আর এই সবুজ রঙের স্ক্রিন-ই ভবিষ্যতের নতুন বার্তা বহন করবে—হয়তো অশুভ নয়, বরং একটু শান্তিময়! শুধু সবুজ নয়, বিভিন্ন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, মাইক্রোসফট কালো স্ক্রিনও নিয়ে ভাবছে, কারণ উইন্ডোজ ১১ এবং আগামী উইন্ডোজ ১২-এর ডিজাইন হচ্ছে আরও বেশি মিনিমালিস্ট এবং অ্যাস্থেটিক—যার সঙ্গে মানানসই করে কালো বা সবুজ রঙের ‘Crash Screen’ বা ‘Error Screen’ অনেকটাই উপযুক্ত বলে মনে করছে তারা। এর ফলে ইউজারদের চোখেও পড়বে কম, আর টেকনিক্যাল দিক থেকেও সমস্যা চিনতে সুবিধা হবে।
এ প্রসঙ্গে মাইক্রোসফটের এক অভ্যন্তরীণ ডিজাইন টিমের সদস্য বলেছেন, “আমরা চাই নতুন উইন্ডোজে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স যেন শুধু কার্যকরই না হয়, বরং দৃষ্টিনন্দনও হয়। পুরনো ক্লাসিক নীল স্ক্রিন আমাদের ইতিহাসের অংশ হলেও, আমরা এখন আরও আধুনিক এবং কমফোর্টেবল ডিজাইন চায়।” উইন্ডোজ ১১-ই এই পরিবর্তনের প্রথম সূচনা করেছে, তবে মাইক্রোসফট জানিয়েছে, আসছে সেপ্টেম্বর মাসে যে উইন্ডোজ ১২ বাজারে আসবে, তাতে একেবারে নতুন লুক, নতুন ফিচার, এবং আরও স্মার্ট রেসপন্স থাকবে। তাতে এই সবুজ বা কালো স্ক্রিন শুধু ‘ক্র্যাশ’ বোঝানোর কাজ করবে না, বরং ইউজারকে সেই সমস্যার কারণ ব্যাখ্যা করে সমস্যা সমাধানে গাইডও করবে। দীর্ঘদিন ধরে প্রযুক্তি জগতে এই ব্লু স্ক্রিন একটি ঘৃণিত, অথচ পরিচিত শব্দ—‘Blue Screen of Death’ কথাটার মধ্যেই এক অদ্ভুত ভয় লুকিয়ে থাকে, বিশেষত যারা নিয়মিত কাজ করেন কম্পিউটারে তাদের কাছে। এটি আসলে এক ধরণের STOP Error, যা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে ঘটে যখন সিস্টেম কোনও মারাত্মক সমস্যায় পড়ে, যেখানে নিজেকে সেফ মোডে পাঠিয়ে বন্ধ করে দেয়। এই ব্লু স্ক্রিনের পিছনে রয়েছে RAM, হার্ডডিস্ক, ড্রাইভার ইনস্টলেশন বা ভাইরাস সংক্রান্ত ত্রুটি। এমনকি অনেক সময় অপারেটিং সিস্টেমের আপডেটের মাঝপথে কোনও বিঘ্ন ঘটলেও দেখা যায় এই নীল আতঙ্ক। যারা হ্যাকিং বা সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের কাছেও এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি সিগন্যাল, কারণ কোনও সফটওয়্যার বা ম্যালওয়্যার যখন সিস্টেমকে ভেঙে দেয়, তখন এই স্ক্রিনই অনেক তথ্য দেয়। তবে সাধারণ ইউজারদের কাছে এটি বরাবরই এক বিশ্রী অভিজ্ঞতা। এবার মাইক্রোসফট সেই দৃষ্টিভঙ্গিকেই একটু বদলাতে চাইছে। টেক এক্সপার্টদের মতে, নীল রঙ বরাবরই সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে—কিন্তু সেটিকে সবসময় নেতিবাচক হিসেবে দেখা হয়েছে।

তাই এবার সবুজ বা কালো দিয়ে একধরণের ভারসাম্য আনতে চাইছে মাইক্রোসফট, যাতে সংকেত হিসেবে সমস্যা বোঝালেও ব্যবহারকারীদের মনে মানসিক চাপ না পড়ে। কেউ কেউ বলছেন, এটা শুধুই রঙ পরিবর্তনের প্রশ্ন নয়, এটা হচ্ছে ডিজিটাল মনস্তত্ত্বের একটা অংশ। যেমন কেউ যখন রাতের বেলায় ফোন ব্যবহার করেন, তখন নীল আলো থেকে চোখ বাঁচাতে ‘ডার্ক মোড’ ব্যবহার করেন, এক্ষেত্রেও একই ভাবনা কাজ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি জগতে এই পরিবর্তনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন অনেকে। মুম্বইয়ের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অনুভব সেন বলছেন, “যদি ইউজারদের অভিজ্ঞতা আরও স্বচ্ছ ও চাপে কম হয়, তাহলে এটা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। তবে সমস্যা সমাধানের নির্দেশিকা যদি সহজ ভাষায় স্ক্রিনে দেখায়, তাহলে সেটা আরও কার্যকর হবে।” সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই পরিবর্তন নিয়ে বেশ চর্চা শুরু হয়েছে। কেউ বলছেন, “আহা! মৃত্যুর নীল পর্দা এবার সবুজ শান্তির বার্তা দেবে!”—আবার কেউ লিখেছেন, “ব্লু স্ক্রিন ছেড়ে এখন সবুজ বা কালো স্ক্রিন—প্রকৃতি বান্ধব Windows কি?” প্রযুক্তির পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের অনুভূতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে মাইক্রোসফটের ভাবনাকে আরও আধুনিক ও মানবিক করে তুলছে। উল্লেখ্য, উইন্ডোজ ১২ আসতে চলেছে ২০২৫-এর শুরুর দিকেই। তাতে যুক্ত হবে AI-চালিত অ্যাসিস্ট্যান্ট, আরও স্মার্ট ফাইল ম্যানেজমেন্ট, রিয়েল টাইম কনটেক্সচুয়াল হেল্প সিস্টেম এবং আরও উন্নত সিকিউরিটি ফিচার। এবং সেইসঙ্গে থাকবে এই নতুন সবুজ/কালো স্ক্রিন প্রযুক্তি, যা শুধু সমস্যার সংকেত নয়, সমাধানের এক ধাপও হতে চলেছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, নীল আতঙ্কের দিন শেষ, এখন ইউজারদের অপেক্ষা আরও আধুনিক, আরও স্মার্ট এবং মনোরম একটি উইন্ডোজ অভিজ্ঞতার জন্য। একটা ছোট্ট স্ক্রিনের রঙের পরিবর্তন হয়তো দেখতেও তেমন বড় কিছু নয়, কিন্তু প্রযুক্তির দুনিয়ায় এই ধরনের ছোট ছোট পদক্ষেপই ভবিষ্যতের বড় পরিবর্তনের সূচনা করে।