Miraculous scene during Basanti Puja in Rajabazar, Bankura:এই বছর বাঁকুড়ার সারেঙ্গা থানার অন্তর্গত রাজাবাজারের বাগাল পাড়ায় বাসন্তী পুজোর নবমীর দিন ঘটে গেল এক এমন ঘটনা, যা আজও সেখানকার মানুষ ভুলতে পারছেন না। পুজোর উৎসবের আনন্দ যখন চূড়ান্তে, ঠিক তখনই সকাল বেলায় এমন এক অলৌকিক দৃশ্য চোখে পড়ে যা নিমেষেই বদলে দেয় গোটা এলাকার পরিবেশ। স্থানীয় বাসিন্দা তারকনাথ মিশ্র পুজোর দিনে বাড়ির কাজে ব্যবহারের জন্য কুয়ো থেকে জল তুলে একটি বালতিতে রাখেন। এরপর তাঁর স্ত্রী বালতিতে থাকা জলে হঠাৎ দেখতে পান এমন কিছু বিচিত্র আলোর প্রতিফলন যা যেন দেখতে তিনটি উজ্জ্বল চোখের মতো! প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি, কিন্তু কাছ থেকে দেখার পর হতবাক হয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে ডাক পড়ল তাঁদের মেয়ে চায়না মিশ্রর। সেও এসে দেখে মায়ের কথার সত্যতা— জলের মধ্যে যেন ঠিক যেন তিনটি চোখ তাকিয়ে আছে! ব্যস, মুহূর্তের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।

প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন, কেউ মোবাইল বার করে ভিডিও তোলে, কেউ আবার প্রণাম করতে শুরু করেন বালতির দিকে। কয়েক মিনিটেই ঘটনাটি ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়— কেউ পোস্ট করছে ‘দেবীর কৃপা’, কেউ বলছে ‘অলৌকিক দর্শন’। গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা বলছেন, এমন ঘটনা জীবনে প্রথম দেখলেন। কেউ বলছেন, এটা নিঃসন্দেহে মা মহামায়ার আশীর্বাদ, কারণ এমন অলৌকিক চিহ্ন পুজোর দিনে এইভাবে প্রকাশ পাওয়া খুবই বিরল ঘটনা। আবার কিছু মানুষ পুরো ঘটনাটিকে ধর্মীয় দৃষ্টিতে না দেখে বিজ্ঞানের আলোয় ব্যাখ্যা করতে চান। সেই সময়েই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন স্থানীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সারেঙ্গা বিজ্ঞান কেন্দ্রের সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী। তিনি জানান, “আমরা জলের কিছুটা নমুনা সংগ্রহ করেছি। সম্ভবত জলের ভেতরে কোনো প্রকার ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে এমন আলোর প্রতিফলন হয়েছে, যেটা চোখের মতো দেখাচ্ছে। আগামীকাল আমরা জল পরীক্ষার জন্য পাঠাবো এবং তখন বিষয়টা পরিষ্কার হবে।” তবে বিজ্ঞানীরা যা-ই বলুন, স্থানীয় মানুষের বিশ্বাসে কিন্তু ভাঙন ধরেনি।
তাঁদের মতে, এই ঘটনাটি ঈশ্বরীয় ইঙ্গিত, মা বাসন্তীর বিশেষ কৃপা রাজাবাজারের মানুষের উপর বর্ষিত হচ্ছে। বাড়ির বাইরে তখন মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে, কেউ মাথায় সিঁদুর মাখিয়ে প্রণাম করছে, কেউ আবার বালতিভরা জলকে ঘিরে প্রদীপ জ্বালিয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করছে। স্থানীয় পুজো কমিটির সদস্য শ্রী সমীর চট্টোপাধ্যায় জানান, “আমরা তো অনেক বছর ধরে বাসন্তী পুজো করছি, কিন্তু এমন কাণ্ড কখনো ঘটেনি। এটা যে কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, সেটা সকলেই বুঝতে পারছেন।” এই ঘটনার পর নিরাপত্তার স্বার্থে কুয়ো ও বালতি ঘিরে দেওয়া হয় বাঁশ ও কাপড় দিয়ে, যেন ভিড় সামলানো যায়। প্রসাসনের পক্ষ থেকে সারেঙ্গা থানার পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা নেয়। যদিও প্রশাসন ঘটনার সত্যতা যাচাই না হওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করতে নারাজ। তবে ঘটনা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। স্থানীয় চিকিৎসক ডাঃ শ্যামল মণ্ডল বলেন, “মানুষের চোখ যা দেখে, সেটাই সবসময় সত্যি না-ও হতে পারে। জল, আলো ও মনের কল্পনার সমন্বয় অনেক সময় ভ্রান্ত ছবি সৃষ্টি করে। তবে পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা মুশকিল।

” এই ঘটনার পর শুধু রাজাবাজার নয়, আশেপাশের গ্রাম থেকেও মানুষজন ভিড় জমাতে শুরু করেন সেই অলৌকিক চোখ দেখার আশায়। কেউ বলছে এটা ভবিষ্যতের কোনো সংকেত, কেউ আবার নিজের সমস্যা দূর করতে এই জলে স্নান করার অনুরোধ করছে। আবার কেউ কেউ এই জল বোতলে ভরে বাড়ি নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবি ঘুরছে ‘দেবী বাসন্তীর চোখ’ ক্যাপশন দিয়ে। শুধু ফেসবুক নয়, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউবেও ভাইরাল এই অলৌকিক দৃশ্য। অনেকেই এই দৃশ্য দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছেন, মন্তব্য করছেন, “আজও মা তাঁর অস্তিত্ব জানান দিয়ে যান এই আধুনিক যুগেও।” ধর্ম, বিজ্ঞান, কল্পনা—সবকিছুর মাঝে এই ঘটনা এখন রাজাবাজারের এক আলোচিত ইতিহাস হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে বিজ্ঞান পরীক্ষার মাধ্যমে হয়তো জানা যাবে এর পেছনের আসল রহস্য, তবে আপাতত মানুষের বিশ্বাস আর আবেগ এই ঘটনাকে ঘিরে একটা অলৌকিক অনুভূতির জন্ম দিয়েছে। হয়তো এটাই আমাদের সংস্কৃতির রূপ—যেখানে বিশ্বাস আর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ একসাথে সহাবস্থান করে। এখন দেখার, আগামী দিনে বিজ্ঞান কী ব্যাখ্যা দেয়, আর মানুষের বিশ্বাস কীভাবে সেই ব্যাখ্যার সঙ্গে সহাবস্থান করে। তবে এই পুজোয় বাঁকুড়ার রাজাবাজার নিশ্চয়ই অন্য এক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে থাকল — এমন অলৌকিক চোখের ঝলক হয়তো যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে থেকে যাবে কল্পনার এক নতুন অধ্যায় হয়ে।