Locals and commuters face difficulties as there is only one ticket counter : পূর্ব বর্ধমান জেলার অন্যতম ব্যস্ততম রেলস্টেশন ‘মশাগ্রাম জংশন’, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন, সেই স্টেশনের একটিমাত্র টিকিট কাউন্টারই আজ নিত্যযাত্রী ও স্থানীয়দের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাওড়া-বর্ধমান কর্ডলাইন শাখার এই গুরুত্বপূর্ণ জংশনটি খুব শিগগিরই সংযুক্ত হতে চলেছে হাওড়া-বাঁকুড়া শাখার সাথেও, যার ফলে আরও বেশি ট্রেন, আরও বেশি যাত্রী আসা-যাওয়া করবেন এই স্টেশন দিয়ে। বর্তমানে এখান থেকে বাঁকুড়া লোকাল ছাড়াও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ লোকাল ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলাচল করে। স্টেশনটিতে মোট সাতটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, অর্থাৎ এর পরিকাঠামো এবং গুরুত্ব অপরিসীম, অথচ অবাক করা হলেও সত্যি, গোটা স্টেশনে আছে মাত্র একটি টিকিট কাউন্টার, সেটিও স্টেশনের পশ্চিম প্রান্তে। মুশকিলটা হচ্ছে এখানেই—কারণ স্টেশনের পূর্বদিকে রয়েছে আট থেকে দশটি গ্রাম, যেখানকার শত শত মানুষ প্রতিদিন এই স্টেশন ব্যবহার করেন, কেউ যাচ্ছেন কলকাতায় চাকরির জন্য, কেউবা পড়াশোনার খাতিরে বর্ধমান, কেউ যাচ্ছেন বাঁকুড়া বা রানিগঞ্জে। কিন্তু তাঁদের টিকিট কাটতে হলে পড়তে হচ্ছে এক চরম দুর্ভোগে।
পূর্ব পাড়ের মানুষদের টিকিট কাটতে গেলে পেরোতে হয় একটি উঁচু ব্রিজ, বহু সিঁড়ি—যা একটি সুস্থ মানুষকেও হাঁপিয়ে তুলতে যথেষ্ট, সেখানে বয়স্ক মানুষ, অসুস্থ রোগী বা কোনো মহিলা যদি বাচ্চা কোলে করে আসেন, তাঁদের অবস্থা কীরকম হয়, সেটা কল্পনাও করা যায়। আর কেউ যদি বিকল্প পথ হিসাবে ভাবেন গাড়ি করে উল্টো দিক দিয়ে ঘুরে গিয়ে কাউন্টারে যাবেন, তাহলে তার জন্য অন্তত দুই কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হবে, যার মধ্যে পড়বে একটি রেলগেট, যেটা পড়ে গেলে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয় প্রায় ৩০ মিনিট—অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও যন্ত্রণাদায়ক এক প্রক্রিয়া। এই সমস্যার কথা জানিয়ে বহুবার নিত্যযাত্রীরা আবেদন জানিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষের কাছে, কিন্তু আজও তার কোনো সমাধান হয়নি।

গ্রামের একজন প্রবীণ মানুষ বুধন মণ্ডল বলেন, “আমি রোজ বর্ধমানে যাই ওষুধ কিনতে, কিন্তু সিঁড়ি ভেঙে গিয়ে টিকিট কাটতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠি, কখনও কখনও তো সময়ে পৌঁছাতেই পারি না। আমার মতো আরও কত লোক আছে, যারা এই সমস্যায় পড়ে।” একই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন কলেজ পড়ুয়া প্রতিমা দাস, তিনি জানান, “আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের সময় মতো ক্লাস ধরতে হয়, কিন্তু টিকিট কাটতে কাটতেই এতটা সময় চলে যায় যে কখনও কখনও ট্রেন মিস করি।” এহেন অবস্থায় স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ও সমাজকর্মীরাও বিষয়টি নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি মীনাক্ষী ঘোষ বলেন, “এত বড় জংশন স্টেশনে, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করছেন, সেখানে একটা মাত্র কাউন্টার—তা-ও এক পাশে? এটা কীভাবে সম্ভব? আমরা চিঠি লিখেছি, স্মারকলিপি জমা দিয়েছি, কিন্তু এখনও কোনো কাজ হয়নি।” এই সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান একটাই—পূর্ব পাড়ে একটি অতিরিক্ত টিকিট কাউন্টার তৈরি করতে হবে। এতে একদিকে যেমন নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগ কমবে, তেমনই স্টেশনের উপর চাপও কমবে, কারণ অনেক সময় একটাই কাউন্টারে ভিড় জমে যায়, ফলে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও মানুষ টিকিট না পেয়ে ট্রেন মিস করেন।
প্রযুক্তির যুগে যদিও অনেকেই বলবেন “অনলাইন টিকিট কেটে নিন না!”, কিন্তু বাস্তব বলছে অন্য কথা—গ্রামের মানুষদের অনেকেই এখনও স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না, অনেকের নেই ইন্টারনেটের সুবিধা, অনেকের নেই ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম, ফলে তাঁদের একমাত্র ভরসা এই কাউন্টার টিকিট। পাশাপাশি অনেক ট্রেন এখনও অফলাইনে টিকিট কাটতেই হয়। ফলে এই সমস্যার সমাধানে ডিজিটাল পথের সঙ্গে সঙ্গে পরিকাঠামোগত উন্নয়নও জরুরি। রেলওয়ের পক্ষ থেকে যদিও মাঝে মাঝে নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়, তবে বাস্তবে মাটিতে তা কতটা পৌঁছচ্ছে, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। মশাগ্রামের মত ব্যস্ত স্টেশনে যদি এখনও একজন যাত্রীকে টিকিট কাটতে এমন দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তাহলে পরিষেবা উন্নয়নের দাবি কেবল কাগজেই থেকে যাবে। নিত্যযাত্রীদের কণ্ঠস্বর ক্রমশই জোরালো হচ্ছে, তাঁরা চাইছেন একটি স্থায়ী সমাধান। রেল মন্ত্রকের কাছে তাঁদের একটাই আবেদন—“টিকিট কাউন্টারের অবস্থান এমন হোক, যাতে দুই পাশের মানুষই সমানভাবে উপকৃত হতে পারেন।” কারণ যাত্রীসেবাই যদি হয় রেলের আসল লক্ষ্য, তাহলে এই ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দাবি পূরণ করা উচিত কর্তৃপক্ষের। এখন দেখার বিষয়, এই দাবির প্রতি কতটা গুরুত্ব দেয় রেল প্রশাসন এবং কবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পান মশাগ্রামের হাজারো যাত্রী।