The excitement of the KKR vs LSG match is at its peak. :ইডেন গার্ডেন যেন রঙিন স্বপ্নের মাঠ হয়ে উঠেছিল, কারণ কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম লখনউ সুপার জায়ান্টস এর হাইভোল্টেজ আইপিএল ম্যাচ ঘিরে গোটা শহরে ছিল এক অনন্য রকম উত্তেজনা, উন্মাদনা আর আবেগ। মাঠে যেমন লড়াই হয়েছে ব্যাট-বলের, তেমনি গ্যালারিতে আর শহরের অলিগলিতে ফুটেছে ক্রিকেট প্রেমীদের উচ্ছ্বাস। কে বলবে এটা শুধুই একটা ম্যাচ, আসলে এ যেন একটা উৎসব, একটা আবেগ, একটা মহাযুদ্ধ, যেখানে একদিকে ছিল কলকাতার প্রাণ, গর্ব, স্বপ্নের দল কেকেআর, আর অন্যদিকে ছিল লখনউয়ের বোলিং শক্তি আর স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনার জোর। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই ইডেনের বাইরের টিকিট কাউন্টারে লম্বা লাইন, স্টেডিয়ামের ভিতরে ঢোকার সময় কেকেআরের জার্সি পরা সমর্থকদের চিৎকার, হাতে পোস্টার – “আন্দ্রে রাসেল মানে বাজ পড়া ছক্কা”, “রিঙ্কু সিং মানেই শেষ ওভারের ম্যাজিক” – সব মিলিয়ে গোটা শহরটা যেন কেকেআর বনাম এলএসজি ম্যাচের রঙে রাঙা। যদিও লখনউ টিমের ফ্যান সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, কিন্তু তাঁরা চুপ করে বসে থাকেননি, কেএল রাহুল আর মার্কাস স্টইনিসের নাম ধরে গলা ফাটিয়ে সমর্থন জানিয়েছেন, আর সেই নিয়েই মাঠে হয়েছে দ্বৈরথে টানটান উত্তেজনা।

তবে মাঠে নামার আগে যে ব্যাপারটা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে সেটা হল এই মরশুমে কলকাতার দুর্দান্ত ফর্ম, যেখানে সুনীল নারাইন ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগে ছন্দে, আর রিঙ্কু সিং-এর শেষের দিকে জ্বলে ওঠার ক্ষমতা যেন অন্যরকম ভরসা দিয়েছে টিমকে। অন্যদিকে, এলএসজি-র ফর্ম ছিল একটু দোদুল্যমান, তবে বোলিং লাইনআপে যেমন মোহসিন খান, নভীন-উল-হক আর রবি বিষ্ণোই রয়েছেন, তাঁরা কোনও ম্যাচেই হাল ছাড়েন না। ঠিক সেই কারণেই এই ম্যাচটা ছিল ‘ডেভিড বনাম গোলিয়াথ’ র মতো। খেলার দিন ইডেনে পা রাখতে না পারা হাজারো মানুষ চোখ রেখেছিলেন টিভি স্ক্রিনে, মোবাইল লাইভ স্ট্রিমিংয়ে, দোকানের সামনে জমে গিয়েছিল ছোটখাটো গ্যাদারিং – আর এই সবকিছু দেখে বোঝাই যায় কলকাতার মাটিতে আইপিএল মানেই একটা আলাদা উৎসব। খেলার শুরুতেই টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া কেকেআরের অধিনায়ক শ্রেয়াস আয়ার বলেন, “আমরা এই মাঠে খেলতে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, সমর্থকেরা আমাদের বাড়তি এনার্জি দেয়।” ইনিংস শুরুতেই জ্বলে ওঠেন ফর্মে থাকা ওপেনার ফিল সল্ট, অন্যদিকে নারাইন ঝড় তোলেন পাওয়ারপ্লেতে, যার ফলে প্রথম ৬ ওভারে কেকেআর স্কোর করে ৬২ রান। এই স্কোর দেখে এক লখনউ সমর্থক, নাম সুহেল খান, যিনি নিজেই ক্রিকেট কোচ, বলেন, “ওদের শুরুটাই আমাদের পা টলিয়ে দিল, কেকেআর ঘরের মাঠে এমনই খেলে।” তবে মজার ব্যাপার হল, এই ম্যাচে এলএসজি-র হয়ে দুর্দান্ত কামব্যাক করেন রবি বিষ্ণোই, মিডল ওভারে দুটো উইকেট নিয়ে ম্যাচটা ধরে রাখেন।
শেষদিকে যদিও রিঙ্কু সিং আর আন্দ্রে রাসেলের ব্যাট থেকে আসে ঝড়ো রান, ১৯ ওভারেই কেকেআর স্কোর ছাড়ায় ১৮০+, যার ফলে স্টেডিয়াম যেন ছোটখাটো উল্লাসে ফেটে পড়ে। অন্যদিকে রান তাড়া করতে নেমে এলএসজি-র শুরুটা মোটামুটি হলেও, মার্কাস স্টইনিস আর নিকোলাস পুরান মিলে ইনিংস গুছিয়ে আনেন। ম্যাচের মোড় ঘোরে ১৬তম ওভারে, যখন রাসেল দুর্দান্ত ইয়র্কার দিয়ে স্টইনিসকে ফিরিয়ে দেন। এই উইকেটটাই যেন ম্যাচে টার্নিং পয়েন্ট ছিল। এক কলেজ পড়ুয়া কেকেআর ভক্ত, নাম রোহন দে, বলেন, “রাসেল শুধু পাওয়ার হিটার নয়, ওর বল করাটাও ম্যাজিকাল, ওই উইকেটেই খেলা আমাদের দিকে ঘুরে যায়।” শেষের দিকে যদিও পুরান একাই লড়াই চালান, কিন্তু নারাইনের অভিজ্ঞ স্পিনে শেষ ওভারে এলএসজি আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। কেকেআর ম্যাচ জিতে যায় ১২ রানে আর মাঠের সব প্রান্তে বাজতে থাকে “করব, লড়ব, জিতব!” গানটা, যেন কেকেআর-এর সঙ্গে গোটা শহরটা জিতে গেল। এই জয়ে কলকাতা উঠে গেল টেবিলের শীর্ষে, আর এলএসজি-র জন্য প্লে-অফে ওঠার রাস্তা হয়ে গেল একটু কঠিন। খেলার শেষে অধিনায়ক শ্রেয়াস বলেন, “আমাদের টিম স্পিরিটটাই সবচেয়ে বড় শক্তি, সব ছেলেরা নিজের দায়িত্ব জানে, আর এই ভরসার জোরেই আমরা এগিয়ে চলেছি।” অন্যদিকে লখনউ অধিনায়ক কেএল রাহুল বলেন, “আমরা ভালো লড়াই করেছি, কিন্তু কয়েকটা মুহূর্ত ম্যাচটা আমাদের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।” এই ম্যাচ ঘিরে কলকাতার স্থানীয় দোকানদার, রেস্টুরেন্ট, চায়ের দোকান, সব জায়গায় ছিল ব্যবসার বাম্পার লাভ, কারণ খেলার দিন বিকেল থেকেই ভিড় উপচে পড়েছে।
এক কেকের দোকানদার বলেন, “খেলার দিনটা যেন পূজোর দিনের মতো হয়, বিক্রি দ্বিগুণ হয়ে যায়।” এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই ম্যাচ ঘিরে চলেছে মিম, রিল, পোস্ট – ফিল সল্টের ব্যাটিং, নারাইনের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স আর রাসেলের সেই জাদু বল নিয়ে চর্চা যেন থামছেই না। সব মিলিয়ে, কেকেআর বনাম এলএসজি ম্যাচ শুধু এক ক্রিকেট লড়াই নয়, ছিল আবেগ, গর্ব আর শহরের জীবনের একটা বড় অংশ – যেখানে একটা ছক্কা, একটা উইকেট, একটা ক্যাচ গোটা শহরকে একসঙ্গে হাসায় বা কাঁদায়। এখন প্রশ্ন, এই জয়ের পর কেকেআর কি চ্যাম্পিয়ন ট্রফির দিকে একধাপ এগিয়ে গেল? বিশেষজ্ঞদের মতে, ফর্ম আর মনোবলের বিচারে কেকেআর এই মুহূর্তে অন্যতম সেরা টিম, আর যদি ইনজুরি না হয়, তাহলে এই ফর্মেই তারা অনেকদূর যেতে পারে। অন্যদিকে এলএসজি-র জন্য পরবর্তী ম্যাচগুলো এখন হয়ে উঠবে বাঁচা-মরার লড়াই। কিন্তু যেটাই হোক, এমন ম্যাচ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আইপিএল শুধু খেলা নয়, এ হল এক আবেগের নাম।