Battlefield Ashoknagar, bullets and bombs continue:অশোকনগরের শান্ত পরিবেশ হঠাৎ করেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। দীঘরা মালিকবেরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দীঘারা উত্তরপাড়া এলাকায় শনিবার রাতে যা ঘটেছে, তা যেন কোনো বাংলা ছবির অ্যাকশন দৃশ্য! কিন্তু এটা সিনেমা নয়, একেবারে বাস্তব ঘটনা। যেখানে এক মদ্যপ ব্যক্তির কুরুচিকর মন্তব্য থেকে শুরু হয়ে, চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে গুলি, বোমাবাজি, রক্তপাত এবং অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় রূপ নেয়। রাতভর চলা এই গুলি-বোমা-কাণ্ডে গোটা এলাকা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। ঘটনাটি এতটাই গুরুতর যে, এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং রাত্রিব্যাপী টহল জারি রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার সন্ধ্যায় আনোয়ার মন্ডল নামে এক ব্যক্তি মদ্যপ অবস্থায় মহিলাদের উদ্দেশ্যে কুরুচিকর মন্তব্য এবং গালিগালাজ শুরু করে। এলাকার কিছু যুবক তাঁকে ধরে মারধর করে সতর্ক করে ছেড়ে দেন। ভেবেছিলেন, বিষয়টি এখানেই শেষ। কিন্তু না, কিছুক্ষণের মধ্যেই আনোয়ার মন্ডল দলবল নিয়ে ফিরে আসে এবং তৃণমূল বুথ সভাপতি মোশারেফ হোসেনের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে একের পর এক বোমা ছুঁড়তে শুরু করে বলে অভিযোগ। আতঙ্কিত এলাকাবাসী তখন যার যার বাড়িতে ঢুকে যায়। ঘরবন্দি হয়ে পড়ে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই।

এক প্রত্যক্ষদর্শী বৃদ্ধা জানান, “আমি জীবনে এত আওয়াজ শুনিনি, জানলা দরজা বন্ধ করে হুড়মুড় করে নাতি-নাতনিকে কোলে নিয়ে বসেছিলাম, মনে হচ্ছিল যুদ্ধ হচ্ছে।” শুধু বোমা নয়, দুষ্কৃতীরা এরপর গুলি চালাতে শুরু করে এবং গুলির আঘাতে একজন যুবক গুরুতর জখম হন। আহত ব্যক্তিকে বারাসাত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল হলেও, গুলির আঘাত তার ডান হাতে গুরুতর ক্ষতি করেছে। গোটা ঘটনার খবর পেয়ে অশোকনগর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় এবং দফায় দফায় তল্লাশি অভিযান চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু চমকে দেওয়ার মতো তথ্য সামনে আসে পুলিশি তল্লাশির পর—ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয় একাধিক তাজা বোমা এবং তৃণমূলের বুথ সভাপতি সৈয়দ বশির উদ্দিনের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, একটি রাজনৈতিক দলের বুথ সভাপতির বাড়িতে কীভাবে এল আগ্নেয়াস্ত্র? সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়ে গিয়েছে। বিরোধী দল বিজেপি দাবি করেছে, “এই ঘটনা প্রমাণ করে যে তৃণমূলের ছত্রছায়ায় এলাকায় দুষ্কৃতী রাজ চলছে। অস্ত্র ও বোমা সাধারণ মানুষের বাড়িতে কিভাবে থাকে, তার তদন্ত হওয়া উচিত।” অন্যদিকে তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “এটি একটি চক্রান্ত। বুথ সভাপতিকে ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশ সঠিক তদন্ত করলেই সত্য বেরিয়ে আসবে।” এলাকার সাধারণ মানুষ এখন চরম আতঙ্কে। রাত হলেই এলাকা যেন অজানা ভয়ে কাঁপে। দীঘারা উত্তরপাড়ার এক মা জানান, “আমার ছেলে প্রতিদিন কোচিং যায়। এখন আর যেতে দিচ্ছি না। স্কুল, বাজার সব বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে। সবাই বলছে আবার যদি কিছু হয়!”
এই ঘটনার ভবিষ্যৎ প্রভাব যথেষ্ট গুরুতর। প্রথমত, সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। মানুষ এখন পুলিশ দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে, কিন্তু একইসঙ্গে ভাবছে—পুলিশ চলে গেলে যদি আবার কিছু ঘটে? দ্বিতীয়ত, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা উদ্ধার, গুলি চলা—এসব যে কোনও মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। তৃতীয়ত, রাজনীতির ময়দানে আবার শুরু হবে দোষারোপের পালা। তৃণমূল বলবে রাজনৈতিক চক্রান্ত, বিরোধীরা বলবে প্রশাসনের ব্যর্থতা। কিন্তু এর মাঝে যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা হলো সাধারণ মানুষ। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “ঘটনার তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যেই কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং যারা দোষী, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। এলাকা শান্ত রাখতেই অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।”

একদিকে অশোকনগরের মানুষ এখন সন্ত্রস্ত, অন্যদিকে রাজ্যবাসীও ভাবছে—এই কি তবে রাজ্যের নতুন ছবি? যেখানে একটি ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে এত বড় হিংসা ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি থেকেই মেলে অস্ত্র? সব মিলিয়ে, অশোকনগরের ঘটনাটি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—শান্তির ভিত কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এবং সেটাই আমাদের সবাইকে ভাবাচ্ছে।