Monday, April 14, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যমহাকাশে বাড়ছে ই আবর্জনা! আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের

মহাকাশে বাড়ছে ই আবর্জনা! আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের

Scientists fear that space debris is increasing!:একটা সময় মানুষ যখন প্রথম মহাকাশে পা রাখে, তখন সেই খবর গোটা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল একরকম উত্তেজনা আর গর্বের অনুভূতি নিয়ে। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, বিজ্ঞান যত এগিয়েছে, মানুষ যত বেশি করে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছে, রকেট উৎক্ষেপণ করেছে, মহাকাশে মিশন চালিয়েছে, ঠিক ততটাই একটা ভয়ংকর সমস্যা ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে—আর সেটা হলো মহাকাশে জমে থাকা ই-আবর্জনা, যা এখন শুধু বিজ্ঞানীদের নয়, সারা বিশ্বের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA)–র ‘স্পেস এনভায়রনমেন্ট রিপোর্ট’ যেন একেবারে হাড় হিম করে দেওয়ার মতো তথ্য সামনে এনেছে—বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত মহাকাশে অন্তত ৪০ হাজারেরও বেশি বস্তু পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যেগুলোর একটা বড় অংশ অকেজো স্যাটেলাইট, রকেটের পুরনো অংশ, বিভিন্ন মহাকাশ মিশনের পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশ, এমনকি ছোট ছোট ধ্বংসাবশেষ, যা একসাথে মিলিয়ে এখন একটা চলন্ত বিপদে পরিণত হয়েছে। এইসব জিনিস একসাথে মিলে যা তৈরি করছে, বিজ্ঞানীরা সেটাকেই বলছেন ‘স্পেস জাঙ্ক’ বা ‘মহাকাশ বর্জ্য’, আর তাদের আশঙ্কা, এখনই যদি এই সমস্যার সমাধানে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে একদিন মহাকাশে এমন এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হবে যেখানে নতুন স্যাটেলাইট পাঠানো তো দূর, পৃথিবীর বাইরের গবেষণাও কঠিন হয়ে উঠবে। এক বিজ্ঞানী মজা করে বলেছিলেন, “আমরা মহাকাশে এত কিছু পাঠিয়ে ফেলেছি যে এখন সেখানে জায়গা ফাঁকা নেই, যেন সেখানে একটা অদৃশ্য ভিড় চলছে!” কিন্তু এ যে নিছক ঠাট্টা নয়, সেটা বোঝা গেল ২০২৪ সালে যখন এক বছরেই প্রায় ১২০০টি বস্তু মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে খসে পড়ে।

তার মধ্যে কিছু ছোট, কিছু বড়, আর কিছু তো এতটাই গতি নিয়ে পড়ে যে সেটা বড়সড় দুর্ঘটনা ডেকে আনতে পারত। সৌভাগ্যবশত এখনও পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয়নি, কিন্তু যেকোনো দিন একটা ধাতব বস্তু ছাদের উপর পড়লে বা কোনো বিমানকে ধাক্কা দিলে কী হবে, সেটা ভাবলেই গায়ে কাঁটা দেয়। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ১ সেন্টিমিটারের চেয়েও বড় যেকোনো বস্তু যদি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে আছড়ে পড়ে, তা হলে সেটা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। আর এমন অন্তত ১২ লক্ষেরও বেশি মহাকাশ-বর্জ্য ইতিমধ্যেই মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত করার টুল MASTER (Meteoroid and Space Debris Terrestrial Environment Reference) বলছে, প্রায় ৫০০-৫৫০ কিমি উচ্চতায় এমন ই-বর্জ্যগুলি সক্রিয় কৃত্রিম উপগ্রহের পাশাপাশি পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, মানে এইসব বস্তু যেকোনো সময় সক্রিয় স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে পারে, আর সেটা হলে পৃথিবীর টেলিকমিউনিকেশন, ব্রডকাস্টিং, ইন্টারনেট, এমনকি আবহাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করা পরিষেবাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-এর এক প্রাক্তন বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, “মহাকাশে ই-আবর্জনা মানে শুধু একটা প্রযুক্তিগত সমস্যা নয়, এটা ভবিষ্যতের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্বের প্রশ্ন। আজকের দিনে শুধু উন্নত দেশ নয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোও মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছে। সবাই যদি শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে নতুন বস্তু পাঠায়, কিন্তু পুরনোগুলোকে সরানোর কোনো ব্যবস্থা না রাখে, তবে আগামী দিনে মহাকাশ হবে এক বিশালাকার আবর্জনার ভাগাড়।” এই সমস্যা নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু তার জন্য যতটা দ্রুত আর একযোগে আন্তর্জাতিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সেটা এখনও হয়নি। ২০২৩ সালে ইউনাইটেড নেশনের অধীনে একটি বৈঠকে মহাকাশে ই-বর্জ্য কমানোর জন্য ২০টিরও বেশি দেশ একসঙ্গে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বললেও তার বাস্তব প্রয়োগ এখনও সীমিত। যেমন, বেশ কিছু সংস্থা রোবোটিক বাহিনী পাঠানোর পরিকল্পনা করছে, যারা পুরনো স্যাটেলাইটগুলোকে কক্ষপথ থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে ‘ডিকমিশন’ করবে বা বায়ুমণ্ডলে জ্বালিয়ে ফেলবে।

Screenshot 2025 04 07 180428

আবার কেউ কেউ এমন প্রযুক্তি তৈরি করছে, যা ভবিষ্যতের মহাকাশযানে ‘আত্ম-বিনাশকারী’ যন্ত্র যুক্ত করবে, যাতে কাজ শেষ হলে সেই স্যাটেলাইট নিজেই নিজেকে ধ্বংস করে দেয়। এই রকম উদ্ভাবনী উদ্যোগ যেমন আশার আলো দেখাচ্ছে, তেমনই সাধারণ মানুষের মধ্যেও সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। কারণ, যদি আগামী দিনে আমরা ‘স্পেস ট্যুরিজম’ বা ‘স্পেস রিসার্চ’–এর স্বপ্ন দেখি, তবে এই ই-আবর্জনা আমাদের পথ আটকে দিতে পারে। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা NASA ইতিমধ্যেই তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, “মহাকাশে যদি এই বর্জ্য বাড়তেই থাকে, তবে এক সময় এমন কিছুর সৃষ্টি হবে যাকে বলা হয় Kessler Syndrome, যেখানে একটার সঙ্গে একটার সংঘর্ষ হতে হতে মহাকাশ ব্যবহারই অনিরাপদ হয়ে উঠবে।” এই ভয়াবহ চিত্র হয়তো এখনই চোখে দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য সেটা এক বিপজ্জনক বাস্তবতা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সাধারণ মানুষ হয়তো ভাবতে পারেন, “আরে মহাকাশ তো অনেক দূরে, আমাদের কী এসে যায়?” কিন্তু ভুল করবেন না, আপনার মোবাইলে যখন জিপিএস চালু হয়, আপনার বাড়িতে যখন ডিশ অ্যান্টেনা দিয়ে টিভি দেখা যায়, বা আবহাওয়া অফিস যখন ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা দেয়, তখন তার পেছনে কাজ করছে সেই মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইট। আর সেই স্যাটেলাইট যদি কোনও একদিন এই ই-আবর্জনার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিকল হয়ে যায়, তবে এক মুহূর্তেই বদলে যাবে পৃথিবীর অনেক কিছু। তাই বিজ্ঞানীরা শুধু বিজ্ঞানীদের মতো করে বলছেন না, বরং গল্পের মতো করে বোঝাতে চাইছেন—“মহাকাশ আমাদের নতুন প্রতিবেশী, আর ওখানে আমরা যা ফেলছি, সেগুলো একদিন ফিরে এসে আমাদেরই বাড়ির দরজায় কড়া নাড়বে।” তাই এখনই সময়, একসাথে ভাবার, একসাথে পদক্ষেপ নেওয়ার, যাতে আমরা ভবিষ্যতের আকাশটাকে সুরক্ষিত রেখে যেতে পারি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments