Shooting, bombing at a wedding in Purulia! Heated: শনিবার রাতের শান্তিময় পরিবেশ মুহূর্তে ভেঙে পড়ল পুরুলিয়ার মফস্বল থানার অন্তর্গত ঘোঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের টাটাড়ি গ্রামে, যখন এক সাধারণ বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে বক্স বাজানোকে কেন্দ্র করে শুরু হল বচসা, আর সেই বচসা মুহূর্তেই রূপ নিল এক রক্তাক্ত উত্তেজনার, যেখানে শূন্যে গুলি চালানোর অভিযোগে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল গোটা এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শনিবার গভীর রাতে যখন চারিদিক নিস্তব্ধ হয়ে আসছিল, তখন হঠাৎ বিয়ে বাড়ির উচ্চস্বরে বক্স বাজানোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দুই পক্ষের মধ্যে বচসা বাঁধে। প্রথমে তা শুধুই কথার লড়াই থাকলেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই বোমা ফাটার শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা গ্রাম। রাতের সেই আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই রবিবার সকালেও নতুন করে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় টাটাড়ি গ্রাম। ঘটনার সূত্রপাত শেখ সানজারুল নামে এক যুবকের বাইক দুর্ঘটনা থেকে, যিনি দ্রুতগতিতে গ্রামের গলিপথ দিয়ে যাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারেন এক ছোট্ট শিশু শেখ সামিরকে। এরপর তিনি নিজেও বাইক থেকে পড়ে যান। এই ছোট্ট ঘটনার পরেই একপ্রকার উসকে যায় আগুন, তৈরি হয় দু’টি গোষ্ঠী, আর তাদের মধ্যে শুরু হয় একে অপরের উপর ইট ছোড়া, তারপরই শুরু হয় বোমাবাজি। গ্রামের বহু ঘরবাড়ি, দরজা-জানালা ভাঙচুর করা হয়। সবথেকে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হন শেখ মমিন নামে এক স্থানীয় ব্যবসায়ী, যাঁর দোকানে চুরির অভিযোগ উঠেছে এবং লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান। শেখ মমিন বলেন, “দোকান ভেঙে আমার মাল লুঠ করে নিয়ে গেছে।
টাকাও নিয়ে গেছে। পুলিশ যেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়, আমরা আর নিরাপদ নই।” গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, এ ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা এই অঞ্চলে এর আগে ঘটেনি। যদিও কিছুদিন ধরেই স্থানীয় রাজনৈতিক উত্তেজনা ও পুরনো শত্রুতির জেরে এই ধরনের অশান্তি জমতে শুরু করেছিল বলে খবর। শনিবারের বিয়ে বাড়ির ঘটনাটি সেই চাপা উত্তেজনার আগুনে ঘৃতাহুতি দেয়। ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মফস্বল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা শুরু করে। গ্রামে রুট মার্চ করা হয়, মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশবাহিনী, যাতে করে আর কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। পুরুলিয়া জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। কেউ আইনের উর্দ্ধে নয়। যারা দোষী, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই কয়েকজন সন্দেহভাজনের নাম পাওয়া গিয়েছে এবং তদন্ত চলছে। এই ঘটনার পর থেকেই টাটাড়ি গ্রামে এক অজানা আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না, ছোট ব্যবসায়ীরাও দোকান বন্ধ রেখেছেন। এলাকার এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, “আমরা তো জানতাম না একটা বিয়ে বাড়ির আনন্দ এভাবে রক্তাক্ত হয়ে উঠবে।

এখন তো ছেলে-মেয়েদের স্কুলেও পাঠাতে ভয় লাগে।” এই পরিস্থিতি শুধু টাটাড়ি গ্রামেই নয়, আশপাশের গ্রামগুলিতেও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে বলছেন, পুলিশের আরও কঠোর নজরদারি দরকার ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছুদিন আগে থেকেই টাটাড়ি গ্রামে রাজনৈতিক দুই পক্ষের মধ্যে একটা অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হচ্ছিল, যা কোনও এক কারণেই প্রশাসনের নজরে আসেনি বা এলেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এই ঘটনার ফলে স্থানীয় মানুষজনের মধ্যে প্রশাসনের উপর আস্থা কিছুটা হলেও নড়ে গিয়েছে। অনেকে বলছেন, যদি শনিবার রাতেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে রবিবারের এই বিশৃঙ্খলা এড়ানো যেত। এখন প্রশ্ন উঠছে, এমন একটি মফস্বল এলাকায় যেখানে সাধারণত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে, সেখানে কীভাবে এক বিয়ে বাড়ি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অশান্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছল যে বোমাবাজি, গুলি চলল, দোকান লুঠ হল? এর পিছনে কি শুধুই ব্যক্তিগত শত্রুতা, নাকি রাজনৈতিক গন্ধও রয়েছে? সব মিলিয়ে পুরুলিয়ার এই ঘটনা আজ গোটা রাজ্যের কাছেই এক বড় প্রশ্নচিহ্ন। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালের গা গরম করা দিনে যখন মানুষের জীবন এমনিতেই কঠিন, তখন এই ধরণের হিংসাত্মক পরিস্থিতি মানুষকে আরও ভীত ও ক্লান্ত করে তুলছে। পুরুলিয়ার মতো জেলা, যেখানে আজও উন্নয়নের অনেক কাজ বাকি, সেখানে এমন অস্থিরতা খুবই দুঃখজনক। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কত দ্রুত ও কার্যকরভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে কতটা নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে পারে।