America is in turmoil with anti-Trump protests : আমেরিকার রাজপথ যেন আজ এক বিশাল প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠেছে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে স্লোগান নিয়ে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে সামিল হয়েছে—নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন, লস অ্যাঞ্জেলস, শিকাগো, হিউস্টন, ডালাস, আটলান্টা—প্রায় ১,২০০-র বেশি স্থানে একসঙ্গে এমন ছবি দেখা গেছে, যা বিগত কয়েক দশকে খুব কমই দেখা গেছে। আর এই বিক্ষোভের কেন্দ্রে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যার বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত আর উগ্র ভাষা আমেরিকার বহু মানুষকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে। “হ্যান্ডস অফ আওয়ার রাইটস” নামে এই গণআন্দোলনে অংশ নিয়েছে প্রায় ১৫০টির বেশি সংগঠন—যার মধ্যে রয়েছে মানবাধিকার সংস্থা, শ্রমিক সংগঠন, ছাত্র সংগঠন, মহিলা সংগঠন এমনকি অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মীদের সংগঠনও।
এ যেন একসাথে আমেরিকার নানা স্তরের মানুষের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর—যারা বলছেন, “Enough is enough!” তারা ক্ষোভের সঙ্গে বলছেন, “আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হারাচ্ছি,” “ট্রাম্প আমাদের সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন,” “এই সরকার আমাদের কণ্ঠরোধ করতে চাইছে।” প্রতিবাদকারীদের কেউ কেউ ট্রাম্পকে সরাসরি “বদ্ধ উন্মাদ” বলে আখ্যায়িত করেছেন, আবার কেউ বলেছেন, “এমন স্বার্থপর সরকার আগে কখনো দেখিনি।” ৭২ বছর বয়সী জন মুর, যিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, বলেন, “আমি ভেবেছিলাম অবসরের পর একটু শান্তিতে থাকবো, কিন্তু এখন দেখি, প্রতিদিন একটা নতুন বিতর্ক তৈরি হচ্ছে, আর মানুষকে বিভক্ত করার রাজনীতি চলছে।” এই বিক্ষোভ শুধুমাত্র ট্রাম্পের শুল্ক নীতি বা অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে নয়, বরং তার সামগ্রিক নেতৃত্বের ধরণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার, পরিবেশ নীতি, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ডাক। এক তরুণী, অ্যাঞ্জেলা ক্রুজ, যিনি একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী, বলেন, “ট্রাম্প যেভাবে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট কাটছাঁট করছেন, তাতে আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আমরা কিভাবে চিকিৎসা শিখবো, রোগীদের কিভাবে পরিষেবা দেবো?” তার মতে, এই আন্দোলন শুধুমাত্র ট্রাম্প-বিরোধী নয়, বরং সাধারণ মানুষের অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানো।

এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে অভিবাসন নীতি। ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যেভাবে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, বিশেষ করে মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণ ও শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত, তা আমেরিকার মানবিক ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার এক মানবাধিকার কর্মী, সান্দ্রা লিওন বলেন, “শিশুদের মায়েদের থেকে আলাদা করা কি সভ্য সমাজের চিহ্ন? আমাদের দেশের মূল ভিত্তি তো ছিল সহানুভূতি আর মানবতা!” শুধু আমেরিকা নয়, এই বিক্ষোভের প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়েছে কানাডা, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকার কিছু অংশেও, যেখানে ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতিকে একধরনের ‘ভয়ঙ্কর জাতীয়তাবাদ’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির ফলে ইতিমধ্যেই বৈশ্বিক বাণিজ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে, ভারত, চিন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো দেশগুলো আমেরিকার বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে। আর এতে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা, মূল্যবৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের উপর প্রভাব—সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হোয়াইট হাউস থেকে অবশ্য এই ব্যাপারে ট্রাম্পের পক্ষে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প সবসময়ই দেশের মানুষের নিরাপত্তা ও স্বার্থের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন।
ডেমোক্র্যাটরা চায় অবৈধ অভিবাসীদের জন্য আমাদের করদাতাদের অর্থ ব্যয় হোক। রাষ্ট্রপতির লক্ষ্য হচ্ছে প্রকৃত মার্কিন নাগরিকদের জীবনমান উন্নত করা।” কিন্তু এই বিবৃতি জনতার রোষ থামাতে পারেনি। বরং ট্রাম্পের মন্তব্য— “আমরা ছাড় দিয়েই শুল্ক ধার্য করছি”—তাকেই অনেকে বলেছেন অপমানজনক এবং বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন। এবার এই বিক্ষোভের রাজনৈতিক প্রভাবও গভীর হতে পারে। অনেকেই বলছেন, এই আন্দোলন আগামী নির্বাচনে বড় ভূমিকা নেবে। ইতিমধ্যেই ডেমোক্র্যাটরা এই বিক্ষোভকে ব্যবহার করে জনমত গঠনে তৎপর। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র এক বছরের মাথায় এই পরিস্থিতি ট্রাম্পের জন্য বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, “এই মুহূর্তে আমেরিকায় যে গণআন্দোলন দেখা যাচ্ছে, তা শুধু ট্রাম্পবিরোধী নয়, বরং এক বৃহত্তর পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
মানুষ আর চুপ করে থাকছে না।” নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্ট অনুসারে, গত এক মাসে আমেরিকাজুড়ে বিক্ষোভের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় তিনগুণ বেড়েছে।মন পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কেউ চাকরি হারানোর ভয়ে, কেউ স্বাস্থ্যসেবার অভাবে, কেউ অভিবাসনের আইনি ঝুঁকিতে, কেউ বা জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত নীতির অস্পষ্টতায় চিন্তিত। আর এই সব চিন্তাই একত্রিত হয়ে তৈরি করেছে এক বিশাল তরঙ্গ, যার নাম—গণআন্দোলন। ট্রাম্পবিরোধী এই বিক্ষোভে মানুষের অংশগ্রহণ প্রমাণ করে দেয়, আমেরিকার গণতন্ত্র এখনও জীবিত, আর সাধারণ মানুষ জানে কখন, কিভাবে এবং কোথায় তাদের কণ্ঠ তোলার প্রয়োজন। এই আন্দোলন শুধু আমেরিকার নয়, গোটা বিশ্বের জন্য এক বার্তা—গণতন্ত্র মানে চুপচাপ মেনে নেওয়া নয়, বরং প্রশ্ন তোলা, প্রতিবাদ করা আর নিজের অধিকারের জন্য রুখে দাঁড়ানো। এখন দেখার, এই আন্দোলন কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, এবং ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে এর মোকাবিলা করে—কিন্তু একটা বিষয় নিশ্চিত, আমেরিকার রাজপথ এখন আর শুধুই যানবাহনের নয়, তা হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের সত্যের মঞ্চ।