Monday, April 14, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যআবহাওয়াভিজতে চলেছে দক্ষিণ বঙ্গের তপ্ত মাটি

ভিজতে চলেছে দক্ষিণ বঙ্গের তপ্ত মাটি

The hot soil of South Bengal is about to get wet : দীর্ঘ দিনের দাবদাহে পুড়তে থাকা দক্ষিণবঙ্গের মাটিতে অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টির বার্তা নিয়ে এসেছে হাওয়া অফিস। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছিল রাজ্যের মানুষ, বিশেষ করে হাওড়া, হুগলি, কলকাতা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম ও ঝাড়গ্রাম জেলার জনজীবন কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল। রাস্তায় কমে গিয়েছিল মানুষের আনাগোনা, দুপুরের দিকে ফাঁকা হয়ে পড়ছিল বাজারঘাট, আর বাস-অটোর যাত্রীর সংখ্যাও অনেকটা কমে গিয়েছিল। এবার সেই গরমের মোকাবিলায় প্রকৃতি নিজেই যেন এগিয়ে এল—হাওয়া অফিস জানিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গে আগামী চার দিন বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি নামতে চলেছে। এমনকি কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। কলকাতা শহরের তাপমাত্রা ইতিমধ্যেই ৩৭-৩৮ ডিগ্রি ছুঁয়েছে, এবং আগামী কয়েক দিন এই তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা থাকলেও বৃষ্টির উপরই অনেক কিছু নির্ভর করছে। বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে কালো মেঘ জমে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যাকে আমরা সবাই চিনি “কালবৈশাখী” নামে। আবহাওয়াবিদ সৌরভ মজুমদার জানালেন, “পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অঞ্চলে গরমের সঙ্গে হালকা জলীয় বাষ্প জমা হচ্ছে, সেইসঙ্গে পশ্চিম থেকে আসা বাতাসে সংঘর্ষ ঘটায় এই বৃষ্টিপাত। এটি মে মাসের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক চিত্র, তবে এবার একটু দেরিতে শুরু হচ্ছে।”

এদিকে চাষিরা এই বৃষ্টির খবরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। বাঁকুড়ার এক কৃষক, গোপাল বাউরি বলেন, “এতদিন মাঠ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। জল না থাকায় চাষ করাও কঠিন হয়ে পড়েছিল। এই বৃষ্টি হলে জমিতে একটু শ্যামলা ফেরত আসবে, কাজ শুরু করা যাবে।” শুধু চাষি নয়, ছাত্রছাত্রী, রাস্তায় রোজগার করা দিনমজুর, ভ্যানওয়ালা, অটোচালক—সবার মুখেই এখন একটাই কথা, “বৃষ্টি হোক, একটু আরাম হোক।” তবে এই বৃষ্টির সঙ্গে থাকবে ঝোড়ো হাওয়া, ৩০-৫০ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতিতে হাওয়া বইতে পারে বলেই জানিয়েছে হাওয়া অফিস। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠে না থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কিছু কিছু জায়গায় গাছপালা বা পুরনো দেওয়ালের কাছে দাঁড়ানো থেকে বিরত থাকতে বলছেন স্থানীয় প্রশাসন। কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ দপ্তর ও দমকল বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি যাতে কোনও ঝড়-বৃষ্টির সময় জরুরি পরিষেবা দ্রুত পাওয়া যায়।” এই বৃষ্টি কেবল গরম কমাবে না, বরং দক্ষিণবঙ্গে এই মুহূর্তে পানীয় জলের সংকটও কিছুটা কমাবে বলে আশা করছেন অনেকে। বহু জেলায় খাল-বিল শুকিয়ে যাচ্ছিল, টিউবওয়েল শুকিয়ে জল উঠছিল না। সেখানে এই বৃষ্টির জলে সাময়িক হলেও কিছুটা স্বস্তি মিলবে।

তবে শহরবাসীর চিন্তা একটু অন্যরকম। কলকাতা, হাওড়া কিংবা বর্ধমানের মতো শহরে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় জল জমে যায়, গাড়ির গতি থেমে যায়, অফিসযাত্রীরা পড়েন বিপাকে। পরিবহণ বিশেষজ্ঞ তপন মিত্র জানালেন, “বৃষ্টির জন্য তৈরি হতে হবে পুরসভাকে। ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিকঠাক না হলে বৃষ্টি শহরের অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়।” আর সেখানেই আবার ঘনিয়ে আসে একটি পুরনো প্রশ্ন—আমরা কি সত্যিই বৃষ্টিকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত? কারণ এই স্বস্তির বৃষ্টিই যদি রাস্তায় জল জমিয়ে জনজীবন স্তব্ধ করে দেয়, তবে বিপদ আরাম নয়, ঝামেলাই বাড়িয়ে দেবে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, বৃহস্পতিবার থেকেই দক্ষিণবঙ্গের বুকে শুরু হবে বৃষ্টি। শুক্রবার তা আরও জোরালো হবে এবং শনিবার পর্যন্ত বৃষ্টি চলবে। বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাতেরও সম্ভাবনা রয়েছে। এটি মূলত কালবৈশাখীরই রূপ, যা গ্রীষ্মকালের চেনা চিত্র হলেও এবারের অপেক্ষা একটু বেশি দীর্ঘ হয়েছিল।

transparent umbrella under rain against water drops splash background rainy weather concept

এদিকে ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়া জেলাগুলিতে ইতিমধ্যেই হালকা মেঘ জমতে শুরু করেছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানালেন, “দুপুরে একটা সময়ের পর হঠাৎ আকাশ কালো হয়ে আসে। মনে হচ্ছে আজই বুঝি শুরু হবে সেই কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি।” এই বৃষ্টির ফলে পার্ক, মাঠ, ছাদ কিংবা গলি সব জায়গায় ফিরে আসবে সেই পুরনো গন্ধ—ভেজা মাটির গন্ধ, যার সঙ্গে আবেগ জড়িয়ে থাকে বাঙালির।

আসলে এই বৃষ্টি শুধু আবহাওয়ার পরিবর্তন নয়, এ এক আবেগের জোয়ারও বটে। গ্রীষ্মের রুক্ষতা কাটিয়ে প্রকৃতি আবার নতুন করে জেগে উঠবে, গাছেরা সবুজ হবে, নদীখাল টলমল করবে, আর মানুষ কিছুটা হলেও হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। এই বৃষ্টির প্রতীক্ষা শুধু শরীরের জন্য নয়, মনকেও এক গভীর প্রশান্তি দেয়। তবে সতর্কতা অবলম্বনও জরুরি। তাই শহরবাসীকে অনুরোধ করা হচ্ছে, ঘর থেকে বের হলে ছাতা ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে রাখতে, গাড়ি চালানোর সময় সাবধান হতে, এবং কোনো অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি না নিতে।

এখন দেখার পালা, এই বৃষ্টির খবরে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ কতটা স্বস্তি পান, আর প্রকৃতি কতটা বদলায় এই বারিধারায়। তবে এটুকু বলাই যায়—দক্ষিণবঙ্গের তপ্ত মাটি এবার বৃষ্টিতে ভিজবে, আর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনেও নেমে আসবে প্রশান্তির ধারা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments